ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

শিক্ষণীয় গল্প: বার্ধক্যে বসবাস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৮ এপ্রিল ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বইটি কেনার পেছনে একটি ছোট্ট কারণ আছে। আমার বাবা দীর্ঘ দুই বছর যাবত ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এ দুই বছর আব্বাকে খুব কাছ থেকে পেয়েছি কিছু শেখার জন্য। আব্বার যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে; তখন কথাটি আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে বলিনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তিনি ভালো হয়ে আবার ফিরে আসবেন। এসেছিলেন ভালো হয়ে কিন্তু সে ভালোটি বেশিদিন টিকলো না।

গল্পটি বললাম, কারণ আমার মনের অজান্তে কোনো ভুল করেছি কি-না? আরও কিভাবে ভালো কিছু করা যেত, তা চিন্তা করছিলাম বইটির নাম দেখার পর। বইটি কেনার কারণ মূলত এটি। এবার লেখকের কথায় আসি, লেখককে ধন্যবাদ জানানো উচিত এ ধরনের একটি কনটেন্ট নিয়ে চিন্তা ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

লেখক মূলত পিএইচডি করার জন্য একটি বেশ ভালো বৃদ্ধাশ্রমে (শব্দটি নেতিবাচকভাবে নেবেন না) প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, তারই গুচ্ছ গুচ্ছ গল্প বইতে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ যেমন- ইসলাম ধর্মে, বাইবেলে বা অন্যান্য ধর্মে বয়স্কদের নিয়ে কী বলা আছে; তা উল্লেখ করেছেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসে লেখক ব্রেইনের শাখা-উপশাখা ও ডিপ্রেশন, আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোকপাত করেছেন। একজন পাঠক হিসেবে এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। বলতে গেলে বইটি মূলত লেখক তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।

প্রথম অংশে উল্লেখ করেছেন, আমাদের সমাজে বার্ধক্যজনিত রোগের ফলে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। যেমন ধরুন, আপনার বাবার একটি কঠিন অসুখ হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে। সমাজের মাঝে প্রচলিত থাকে, তার পূর্বপুরুষ এমন কিছু ভুল করেছেন, যে কারণে অসুখটি অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খুব সুন্দরভাবে লেখক তার জীবনে বাস্তব ও সত্যিকারের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

দ্বিতীয় অংশে লেখক পিএইচডি’র অংশ হিসেবে মানুষের মাঝে যে ডিপ্রেশন হয়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া মানব মস্তিষ্কের তিনটি স্তর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। মানুষের ব্রেইনের প্রধান অঞ্চলগুলো কী কী, কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, তা আলোচনা করেছেন।

মানুষের মাঝে ডিপ্রেশন কেন হয়, এর লক্ষণ কী, ডিপ্রেশন থেকে কিভাবে ডিলিরিয়াম, আলঝেইমারের মতো মারাত্মক রোগ বাসা বাঁধে এবং এ রোগ থেকে রক্ষার উপায় আলোচনা করেছেন। এরপর তৃতীয় অংশটি যেমন ছিল মর্মাহত গল্প, তেমনই শিক্ষণীয় বটে।

পিএইচডি’র অংশ হিসেবে লেখক একটি বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করছিলেন। বিন নামক একজন ব্যক্তির দেখভাল করার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। বিন মূলত ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগী। একদিন তার সহধর্মিনী ও ছেলে তার সাথে দেখা করতে আসেন। বিন সহধর্মিনীকে চিনতে পারলেও নিজের ছেলেকে চিনতে পারেননি।

বাবা ছেলেকে চিনতে পারেননি, যা স্বাভাবিকভাবে খুব খারাপ লাগে পুরো পরিবারের মাঝে। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত এমন হয়। মাঝে মাঝে নিকটাত্মীয়দের চিনতে পারেন না।

বাবা ছেলেকে চিনতে পারেননি লেখক তা বুঝতে পেরেছেন। তখন লেখক চেষ্টা করেছেন এ ধরনের রোগীদের স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পুনরায় স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনার। সারাদিন গল্প করার পর যখন বিনের স্ত্রী ও সন্তান বাসায় চলে যাচ্ছিলেন; তখন বিন নিজের ছেলেকে চিনতে পেরেছেন।

লেখক গল্পটি এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন, যখন পড়বেন তখন আপনার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হবে। বিন ঘটনাক্রমে অসুস্থ থাকেন, আর মৃত্যুর দিকে চলে যেতে থাকেন। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে তিনি স্মরণ করেন তার মাকে, স্মরণ করেন তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে। বিন বারবার দু’জনকে খুঁজে পান তার রুমে।

লেখক একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের অনুভূতি, বিশেষ কিছু কথাবার্তা অনুধাবন করতে পারেন। এত সুন্দর বইটি প্রকৃত অর্থে অল্প কথায় শেষ করা যাবে না। পবিত্র কুরআন থেকে সুন্দর সুন্দর বাণী, খ্রিষ্টধর্মের বাইবেলের বাণী ও অন্যান্য ধর্মের বাণী খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। পাঠক হিসেবে আমাদের উচিত বইটি পড়া। যেন সবাই তার বয়স্ক বাবা-মায়ের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হন।

সর্বশেষ যে কথাটি লেখক পাঠকদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলো- সব ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করলে আপনিও আপনার ধর্মকে এগিয়ে নিতে পারবেন শ্রদ্ধার সাথে। নিজের ধর্মকে সর্বোচ্চ ও সেরা প্রমাণিত করার জন্য আপনার শ্রদ্ধাশীল, বিনয়ী ও সুন্দর ব্যবহার অন্যকে অনুপ্রাণিত করবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়