সুখবর! ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ এখন মুঠোফোনে : বাংলাদেশ ব্যাংক
নিউজ ডেস্ক
সুখবর! ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ এখন মুঠোফোনে : বাংলাদেশ ব্যাংক
সামছুল আরেফিন, ২৫ হাজার টাকা বেতনের ছোট একটা চাকুরি করেন। মাসের শেষে প্রায়ই তাঁর টাকা ফুরিয়ে যায়। তখন সহকর্মী, বন্ধু অথবা স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়।
সামছুল এখনো ঋণ নেন, তবে কারও কাছ থেকে নয়; নিজের মুঠোফোনে বিকাশ অ্যাপ থেকে ঋণ নেন। বেতন পেয়ে শোধ করে দেন। সুদ ব্যয় হয় সামান্য। মুঠোফোনের ক্ষুদ্রঋণ তাঁর বিপদের বন্ধু হয়ে উঠেছে। আবার কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
সামছুলের মতো কয়েক লাখ বিকাশ (মুঠোফোনে আর্থিক সেবা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান) গ্রাহকের এখন হাতের মুঠোয় এসে গেছে ক্ষুদ্রঋণ। বিকাশের গ্রাহকদের এই ঋণ দিচ্ছে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক। পাশাপাশি ঢাকা ও প্রাইম ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের ডিজিটাল মাধ্যমে ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ করছে। এসব ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশের মধ্যে।
সাধারণ মানুষের কত টাকা ব্যয় হবে, তা নির্ভর করে তিনি কত দিন পর ঋণ পরিশোধ করছেন। যেমন একজন গ্রাহক তিন হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দিন সাতেক পর পরিশোধ করেন। তার সুদ আসে ১০ টাকার কম।
মুঠোফোনে ঋণ সেবাদাতারা বলছেন, এসব ঋণের চাহিদা অনেক বেশি। বিকাশের গ্রাহকদের সিটি ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত, যা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংকটি। বিকাশের অ্যাপে সক্রিয় ১২ লাখ গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন। আরও ছয় লাখ গ্রাহককে ঋণের তালিকায় যুক্ত করছে সিটি ব্যাংক।
ঢাকা ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। ঢাকা ও প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন হয় এমন গ্রাহকেরাই শুধু এই ঋণ পাচ্ছেন।
গ্রাহকদের সহজে ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ’ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল, যেখান থেকে ১ শতাংশ সুদে টাকা নিতে পারছে ব্যাংকগুলো। ফলে এই ঋণে ব্যাংকগুলোর খরচ বেশ কমে এসেছে। কারণ, ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৮ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে। সেখানে ১ শতাংশ সুদে টাকা পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকগুলো এই তহবিল থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ দিচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ, মুঠোফোনে আর্থিক সেবা, ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে দেওয়া এ ধরনের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই তহবিলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যবহৃত হয়েছে। তহবিলের সিংহভাগ নিয়েছে সিটি ব্যাংক। কিছু টাকা নিয়েছে ঢাকা ব্যাংক। সিটি ব্যাংকের পাশাপাশি ঢাকা ও প্রাইম ব্যাংক ডিজিটাল মাধ্যমে ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ করছে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিকাশের সঙ্গে মিলে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া শুরু করে সিটি ব্যাংক। বিকাশের গ্রাহকের লেনদেন প্রতিবেদন ও ব্যবহারের ধরন দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই (এআই) ঠিক করে দেয় যে কোন গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য, কত টাকা পাওয়ার যোগ্য। বিকাশের অ্যাপের মাধ্যমেই এই ঋণের জন্য আবেদন করা যায়। গ্রাহক ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত হলে তৎক্ষণাৎ ঋণ দেয় সিটি ব্যাংক। এ জন্য কোনো জামানত লাগে না। এ ছাড়া নেই কোনো কাগজপত্রের ঝামেলাও।
নির্ধারিত হারে সুদসহ ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা যায় সহজে। বর্তমানে বিকাশের গ্রাহকেরা তিন মাস মেয়াদে ঋণ পান। নানা মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য গ্রাহকদের ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক।
সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সেবাটি চালু হওয়ার পর মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার বিকাশ গ্রাহক এই ঋণ নিয়েছেন। এসব গ্রাহক একাধিকবার ঋণ নিয়েছেন এবং পরিশোধ করেছেন। ফলে ঋণের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজারে। এসব গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৬৮৬ কোটি টাকা ঋণ।
সিটি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান অরূপ হায়দার গণমাধ্যমকে জানান, ‘ছোট ঋণের বেশ চাহিদা রয়েছে। আমরা এদিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহক বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা অল্প টাকার জন্য উচ্চ সুদে মহাজনের ওপর নির্ভরশীল, আমরা তাঁদের কাছে সহজে পৌঁছাতে চাই। এতে মানুষের কষ্টও কমবে। সহজে কম সুদে ঋণ পেলে ছোট ব্যবসায়ীরা ভালো থাকবেন।’
জানা গেছে, বিকাশের যেসব গ্রাহক বায়োমেট্রিক পদ্ধতির (ই-কেওয়াইসি) মাধ্যমে হিসাব খুলেছেন, তাঁরাই শুধু সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ পাচ্ছেন। যাঁরা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পান। এই ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে গ্রাহকদের দীর্ঘদিন বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু বিকাশের লেনদেন পর্যালোচনা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ঋণ পাওয়ার যোগ্য গ্রাহক নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাই কোনো গ্রাহক যত বেশি বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করেন, তিনি তত দ্রুত ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।
প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে যাঁদের বেতন হচ্ছে, তাঁরা প্রাইম অগ্রিম অ্যাপের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন। এই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার গ্রাহক এই ঋণ পেয়েছেন। ঢাকা ব্যাংকও একইভাবে যাঁদের বেতন হয়, তাঁদের ঋণ দিচ্ছে। এই ঋণ মিলছে ঢাকা ই-রিন অ্যাপের মাধ্যমে।
মুঠোফোনে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ ভারতে জনপ্রিয়। তবে অবৈধ ঋণদাতারা নানাভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে। ঋণের ফাঁদে পড়ে মানুষের আত্মহত্যা নিয়ে গত ১১ অক্টোবর বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিবিসি জানিয়েছে, ভারতসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রায় ১৪টি দেশে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অবৈধ ব্যবসা চলছে। ভারতে এই ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতন আর অপমানের শিকার হয়ে অন্তত ৬০ জন আত্মহত্যা করেছেন।
বাংলাদেশেও অবৈধভাবে ঋণ ধরনের ডিজিটাল ঋণ দেওয়া হচ্ছে। অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেউ কেউ বিপদে পড়েছেন। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা অনেক। ভবিষ্যতে এর গ্রাহক বাড়বে। তাই বৈধ ও প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিলে মানুষ সুফল পাবে। নইলে মানুষ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা আছে।
প্রাইম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম এ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখছি, গ্রাহকেরা কেমন ঋণ নেয় ও পরিশোধের চর্চা কেমন। এ থেকে ভালো ফল পাওয়া গেলে সামনে বড় আকারে এই সেবা চালু করা হবে।’
- Cashless society to expedite country`s development, ease revenue collection : Prime Minister
- প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় করোনায়ও সচল অর্থনীতি
- ডিএসইর লেনদেন সাড়ে ১১শ কোটি টাকা ছাড়াল
- ১১শ` কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে রেলের নতুন বগি ও ইঞ্জিন
- বাংলাদেশকে ৮৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি
- দেশেই বাজাজের অটোরিকশা তৈরি করবে রানার
- এবারের বাণিজ্য মেলা হতে পারে অনলাইনে
- সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ॥ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে
- পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন
- আরেকটি নতুন মাইলফলকের পথে রিজার্ভ