ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ॥ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৮ মে ২০২০  

করোনা আতঙ্কের মধ্যে দেশে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ই-বাণিজ্য। ঘরবন্দী নগরবাসীর নিত্যসহ ঈদের কেনাকাটা চলছে অনলাইন শপিংয়ে। ঈদের কেনাকাটায় এ মুহূর্তে কাজ করছে দেশের ৭০০ শতাধিক ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এ বছর দেশেই ১৬ হাজার কোটি টাকার বেচা বিক্রি হবে ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে। এছাড়া প্রথম বারের মতো দেশের ছয় শ’ ইউনিয়নে ই-বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায়, হাতের মোবাইল কিংবা ঘরের ডেস্কটপ কম্পিউটার দিয়ে চলছে পছন্দের সব কেনাকাটা। অর্ডার দিয়ে একজন ক্রেতা ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাচ্ছেন। মার্কেট ও দোকানে না গিয়ে চাল-ডাল মাছ-মাংস থেকে শুরু করে শাড়ি-গহনা, টিভি-ফ্রিজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই পাওয়া যায় অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে। আর এ কারণে প্রাণঘাতী করোনাকালে ভোক্তাদের আস্থা ও নির্ভরতার জায়গার নাম হয়ে উঠছে অনলাইন শপিং। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাবিশ্বে অনলাইন শপিং জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। করোনাকালে এটি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অনলাইন ব্যবসা বা ই-বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় নতুন খাত। মানুষকে নিরাপদে ও করোনামুক্ত রেখেই ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ই-বাণিজ্য বা অনলাইন শপিংয়ে জমে উঠছে এবার ঈদের কেনাকাটা।

জানা গেছে, ই-বাণিজ্য বা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে ৫ হাজার ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় যারা চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারদের চাকরি দিতে চান-এমন সব সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। আগামী বছরের মধ্যে আইসিটি খাতে রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাত থেকে ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার সফটওয়্যার ডেভেলপার কর্তৃক প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০০টি সফটওয়্যার ফার্ম, আইসিটি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত সফটওয়্যার এবং আইসিটি সার্ভিসেস যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৬০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। দেশেও ই-কমার্স খাতের বড় বাজার তৈরি হচ্ছে। ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারছেন সাধারণ ভোক্তারা। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। এ কারণে এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করার জন্য অর্থ সংগ্রহের পথও দেখিয়ে দেবে সরকার। ‘ই-বাণিজ্য করব নিজের ব্যবসা গড়বো’ এই স্লোগানে টেকনিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল পার্ট-এ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও জ্বালানি বিভাগ। বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ওই সময় দায়িত্ব নেয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় সর্বপ্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ শুরু করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের এক যুগান্তকারী দর্শনের নাম। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে ই-বাণিজ্য। শুরুতে ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সে মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। এর পরের বছর ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হয়ে থাকে। বর্তমান প্রবৃদ্ধিও শতভাগের ওপর। এ কারণে দেশে ই-কমার্সের বাণিজ্যের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে সরকারের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ফসল ই-বাণিজ্য। নানা ধরনের প্রণোদনা করে সফটওয়্যার সৃষ্টিতে বর্তমান সরকার দক্ষতা ও সাফল্য দেখিয়েছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে সরকারী-বেসরকারী খাতের স্ব স্ব উদ্যোগে। সফটওয়্যার সৃষ্টিকারীরা এখন হার্ডওয়্যার নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ খাতের উত্তরোত্তর বিকাশ সাধনের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক সকল পর্যায়ে উন্নয়নের ধারা উর্ধগামী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ই-গবর্নেন্স এবং ই-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এ দুটি খাতে বর্তমান সরকার বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। এর সুফল ইতোমধ্যে জাতি পেতে শুরু করেছে।

ই-কমার্স কি ও কেন প্রয়োজন ॥ ইলেক্ট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য হচ্ছে এমন এক বাণিজ্যক্ষেত্র যেখানে কোন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। দেশে ই-কমার্সের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া তরুণ উদ্যোক্তারাও এ খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। দেশে ই-কমার্সে স্থানীয়ভাবে সেবা দিতে উঠে এসেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রেই উদাহরণ হয়ে উঠছে। ই-কমার্সেও তাই। আমাজন, দারাজ, আলী বাবার মতো আন্তর্জাতিক মানের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দেশে গড়ে উঠছে। এই ক্ষেত্রটিতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনেক সত্ত্বেও বাংলাদেশের ই-কমার্সে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টির উদাহরণ টেনে আনা হয়েছে ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ইউএনসিটিএডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ই-কমার্সে যুক্ত হওয়ার দারুণ সুযোগ এখন। এই ক্ষেত্রটি থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ এখন দ্রুত বাড়ছে। প্রথমত, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। এতে যোগাযোগ সুবিধা উন্নত হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের হার বেড়েছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, নতুন ই-কমার্স এ্যাপ্লিকেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং পেমেন্ট সুবিধার কারণে ই-কমার্সের ব্যবহার সহজতর হয়েছে। তৃতীয়ত, স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স সেবার মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ করতে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।

ই-কমার্সের আওতায় কর্মসংস্থান ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করে অন্তত এক লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান করতে চায়। এছাড়া ই-কমার্স সম্প্রসারণ হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর একটি সুষম বণ্টনের সুযোগ তৈরি হবে। ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাল সেবা পাবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপকল্প-২১, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে ই-কমার্স খাত দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। এ কারণেই দেশের আটটি বিভাগে আগামী তিন বছরে ৫ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। সফলতার সঙ্গে পুরো প্রকল্পটি শেষ করার পর দ্বিতীয় ধাপে আবার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ই-সার্ভিস রোডম্যাপ-২০২১ বাস্তবায়নে বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ই-কমার্স বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই আওতায় জাতীয় ই-কমার্স নীতিমালা করেছে সরকার। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। মূলত এটিও একটি উন্নয়ন দর্শন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় সেই চিন্তা থেকেই এখন ই-কমার্স বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব জুড়ে এখন তথ্য প্রযুক্তির জয়জয়কার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, ই-কমার্স এখন সময়ের প্রয়োজনেই এসেছে।

মোবাইল ফোনে ঈদের কেনাকাটা ॥ করোনা আতঙ্কের মধ্যে নগরবাসী এখন যতটা সম্ভব ঘরেই অবস্থান করছেন। তবে ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা করছেন। এবারের ঈদে বেশিরভাগ শপিং মল বন্ধ থাকছে। তবে বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের অনলাইন শপ চালু রাখছে। দেশের ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও ঈদ সামনে রেখে বড় আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

কোন কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে নগদ ছাড়, ক্যাশব্যাক ও উপহার দিচ্ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে গিফট ভাউচার। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে শপিং করতে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসেই কেনাকাটার অবারিত সুযোগ এসেছে। কিছু কিছু ই-কমার্স ও মার্কেটপ্লেস ক্রয় করা পণ্য বিনামূল্যে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাকে সুরক্ষা দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে নগরবাসীর করোনা ঝুঁকি নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনই নেই। নগদ টাকাবিহীন কেনাকাটা, কন্টাক্টলেস পেমেন্ট ব্যবস্থা, ফ্রি হোম ডেলিভারির মতো আয়োজন করে তারা ক্রেতাকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে চেষ্টা করছে। এছাড়া সফটওয়্যার খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস আজকের ডিল ডট কমের (িি.িধলশবৎফবধষ.পড়স) প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর জানিয়েছেন, এবারের ঈদে অনলাইনে কেনাকাটা বাড়বে। অনেক ক্রেতাই মার্কেটে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না। তবে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্রেতাকে সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছে দেয়া। দেশব্যাপী ডেলিভারি সিস্টেম আগের মতো স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগতে পারে। পণ্য পৌঁছে দেয়ার খরচও অনেক বেড়ে গেছে। তিনি জানান, আজকের ডিল ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও নানা অফার দেবে, আর ছাড় ঘোষণা করবে। তবে সবচেয়ে যেটা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে তা হলো ফ্রি ডেলিভারি। বিকাশের মাধ্যমে অর্ডার করলেই আজকের ডিল সারাদেশে যেকোনও পণ্য পৌঁছে দেবে কোনও ডেলিভারি খরচ ছাড়াই। ই-কমার্স প্লাটফর্ম ও মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি (িি.িবাধষু.পড়স.নফ) ঈদ উপলক্ষে ইভ্যালি ফ্যাশন এক্সপ্রেস নামের একটি সেবা চালু করেছে। এখানে যে কোন ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের বিক্রেতা তার একটি এক্সপ্রেস শপ খুলতে পারবেন। এদিকে, ২০২০ সালে অনলাইন কেনাকাটার ৭২ শতাংশ হচ্ছে মোবাইল ফোনে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৪৯.৬ শতাংশ। সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিওয়াইএমএনটিএস এর এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, স্মার্টফোনের কল্যাণে ভোক্তারা এখন অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ফলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর অর্ডার ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি এখন তিন অঙ্কে হচ্ছে। এছাড়া জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস সঙ্কটে ডিজিটাল সমাধান এখন আরও সাফল্য পাচ্ছে। সংস্থাটি জানায়, ২০১৮ সালে বিশ্বের ১৪০ কোটির বেশি মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেছে। যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ। এ কেনাকাটা আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি অনলাইন কেনাকাটা করেছে চীনের মানুষ। যে সংখ্যা ৬১ কোটি। বিদেশী পণ্য কিনেছে বা আন্তঃসীমান্ত কেনাকাটা করছে বিশ্বের ৩৩ কোটি মানুষ। যা ২০১৮ সালের কেনাকাটার ২৩ শতাংশ।

এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনলাইন বেচা বিক্রিতে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আলিবাবা, আমাজন ও জেডি ডটকম। চলতি বছর করোনা হানা দেয়ায় মানুষ এখন বাইরে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। ফলে অনেকেই ঈদের কেনাকাটা এখন অনলাইনেই সেরে নিচ্ছেন। ঈদ শপিংয়ে মার্কেটে না গিয়ে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার জন্য দেশবাসীকে সম্প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শপিংমলে যারা সরাসরি কেনাকাটা করছেন সেখানে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় অনেকে অনলাইনে শপিং করছেন। অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টি আজকাল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এছাড়া, অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার প্রসার বা ই-কমার্সে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জনের সুযোগ আছে বলে জানিয়েছে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ডিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশে ২০১০ সালে ই-কমার্স চালু হলেও ২০১৬ সালে এ খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এ বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার বাজার ও ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ডিসিসিআইয়ের একটি সেমিনারে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত সাত বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানির পরিমাণ ২৬ মিলিয়ন ডলার থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ খাতের সুষ্ঠু বিকাশে শীঘ্রই একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় শত বছর ধরে পরিচালিত ব্যবসায়িক কর্মকা-কে যদি ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে কর্মঘণ্টা বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ কমবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পণ্যসামগ্রীর সব তথ্য-সংবলিত একটি ই-কমার্স পোর্টাল তৈরির জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখেন এই প্রতিমন্ত্রী। এদিকে, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসেব অনুযায়ী এই খাতে মাসে এখন প্রায় সাত শ’ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। অর্থাৎ বার্ষিক লেনদেন এখন আট হাজার কোটি টাকার বেশি।

এক শ’ ভাগ প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে সামনের বছর এটি হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজোয়ানুল হক জামি বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সাড়ে সাত শ’র মতো প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন দেশের প্রায় ছয় শ’ ইউনিয়নে ই-কমার্স বাণিজ্য হচ্ছে এই উদ্যোগটির নাম একশপ। একশপ একটি অনলাইন লজিস্টিক এবং মার্কেটিং নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতাদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের সব বড় ই-কমার্স প্লাটফর্ম এর সঙ্গে যুক্ত। এটির মাধ্যমে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রেতা-বিক্রেতারাও অনলাইনে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য যুক্ত হতে পারবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়