বঙ্গবন্ধুকন্যার বিশুদ্ধ দেশপ্রেম ও চ্যালেঞ্জের সুফল পদ্মা সেতু
বাণিজ্য ডেস্ক
ফাইল ছবি
যত দূরে যাও পাখি দেখা হবে ফের
স্বাধীন ওই আকাশটা শেখ মুজিবের।
লাল-সবুজের এই সাড়ে পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের যেখানেই আমরা দাঁড়াই, ইতিহাস কি ভবিষ্যতের যে বাঁকেই আশ্রয় খুঁজি অবধারিতভাবে সেখানে সত্য হয়ে ওঠে এই পঙক্তিমালা। এই জাতির স্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলোকচ্ছটা এখনো এই দেশকে, দেশের মানুষকে বিলিয়ে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা, বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্তের উত্তরাধিকার বিশ্বনেতা হয়ে ওঠা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার দূরদর্শী নেতৃত্ব, সাহস আর বিচক্ষণতায় আমরা পেয়েছি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কাঙিক্ষত স্থাপনা কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মাত্র দুই যুগ আগেও যা ছিল আমাদের কাছে স্বপ্ন, কল্পনার ক্যানভাসের মতো।
বঙ্গবন্ধুকন্যার বিশুদ্ধ দেশপ্রেম ও চ্যালেঞ্জের সুফল হিসেবে আজ তা মহাসত্য।
তিনি সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছেন জাতিকে। এ সেতু তাই কেবল একটি সুবিশাল স্থাপনা কিংবা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত নয়, এটা আমাদের জাতীয় সক্ষমতার অনন্য প্রতীক। বাঙালির আত্মপ্রত্যয়, অহংকার ও গৌরবের এক মিনার। প্রবল দেশপ্রেমে বলীয়ান বঙ্গবন্ধুকন্যার ইস্পাতদৃঢ় মনোবলই ছিল পদ্মাসেতুর মূল ভিত্তি।
১৯৭১ সালে জাতির পিতা আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন। তবে পদ্মাসেতু নির্মাণের শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। পদ্মাসেতু নিয়ে সে সময় দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের কথা জানান। শুরু হয় দেশে গণজাগরণ। দেশের মানুষ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মসেতু নির্মাণের কথা শুনে তারা সবাই সরকারকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেন। সেই সময় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের স্থানীয় কার্যালয়ে খোলা হয় দুইটি হিসাব। সেখানে শত শত মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ জমা করেন। হয়তোবা সেই অর্থ কোনো রিকশাচালকের অর্থ, কোনো স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর অর্থ, কোনো দিনমজুরের অর্থ; যা ছিল আবেগ ও ভালোবাসায় ভরা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কানাডার আদালত পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তোলা অভিযোগের মামলা ভুয়া বলে রায় দেয়।
আজ এক যুগ পরে এসে মনে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সে সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল। ওই অবস্থাতে নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের মতো সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পেরেছিলেন কেবল তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই। অবকাঠামোগত দিক দিয়ে পদ্মাসেতু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা। প্রমত্তা পদ্মায় পানির নিচে প্রায় ৪০ তলার ভবনের সমান পাইলিং করে নির্মিত এ সেতুতে মোট ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দু’স্তরবিশিষ্ট সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে ২২ মিটার প্রস্থের চার লেনের সড়ক এবং নিচের স্তরে নির্মাণ করা হবে ব্রডগেজের সিঙ্গেল লাইন রেলপথ। সেতুর দুই প্রান্তে উড়ালপথ, রেলপথের জন্যও উড়ালপথ, সেতুতে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক (এক্সপ্রেস), সংযোগ সড়কের পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন, ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন ডাক্ট। সেতুর ভাটিতে তৈরি হচ্ছে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন।
পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে সরাসরি এর সুবিধা ভোগ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা। এসব জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের এ সেতু চালু হলে বদলে যাবে তাদের জীবন ধারা। কৃষি শিল্পসহ সব খাত পাবে উন্নয়নের বিপুল গতি। এ অঞ্চল পরিণত হবে দেশের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রে। এসব এলাকার উৎপাদিত পণ্য বিশেষত কৃষি ও পঁচনশীল পণ্য সহজেই রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে। পায়রা, মোংলা ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পুরো দেশের অর্থনীতিতে আসবে নতুন জোয়ার। প্রসার ঘটবে খুলনার হিমায়িত মত্স্য ও পাট শিল্পের। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব অনেকাংশে কমে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য ঘাটতিও কমে আসবে অনেকাংশে। ইতোমধ্যে সেতুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, বিমানবন্দর ও জাজিরার নাওডোবায় শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ও শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার যে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে।
সমীক্ষা বলছে, সেতুটি চালুর পর মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতি বছর দারিদ্র্য কমে আসবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ। এছাড়া ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে পদ্মাসেতু।
এডিবির এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মাসেতু দিয়ে ২০২২ সালে চলাচল করবে অন্তত ২৪ হাজার যানবাহন, এর মধ্যে বাস চলবে ৮ হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে ৫ হাজারের বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যান চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টিতে, ২০৩০ সালে ৩৬ হাজার ৭৮৫টিতে এবং ২০৪০ সালে ৫১ হাজার ৮০৭টিতে। শুধু এর মাধ্যমেই কর্মসংস্থান হবে কোটি মানুষের। আদতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মনে হলেও প্রকৃত অর্থে পদ্মাসেতু পুরো দেশের অর্থনীতির জন্যই এক দারুণ ভিত্তি হিসবে কাজ করবে। ধীরে ধীরে এটি পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পর্যটনকে বদলে দেবে। এমনকি সেদিন বেশি দূরে নয় এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বহুল আকাঙ্ক্ষার পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১-এর অংশ হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগের দারুণ সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া সেতুটির মাধ্যমে ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্তি ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা তৈরির মাধ্যমে আর্থিক প্রবৃদ্ধি আনবে। প্রসারিত হবে এসব রুটের সঙ্গে সম্পৃক্ত পর্যটনের ক্ষেত্র। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের যে ক্রম উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে এবং ২০৩৫-৪০ সালে বাংলাদেশ যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাবে তার পেছনে বিশাল ভূমিকা থাকবে পদ্মা সেতুর।
- Cashless society to expedite country`s development, ease revenue collection : Prime Minister
- প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় করোনায়ও সচল অর্থনীতি
- ডিএসইর লেনদেন সাড়ে ১১শ কোটি টাকা ছাড়াল
- ১১শ` কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে রেলের নতুন বগি ও ইঞ্জিন
- বাংলাদেশকে ৮৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি
- দেশেই বাজাজের অটোরিকশা তৈরি করবে রানার
- এবারের বাণিজ্য মেলা হতে পারে অনলাইনে
- সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ॥ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে
- পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন
- আরেকটি নতুন মাইলফলকের পথে রিজার্ভ