কর আদায় মোবাইলে নিয়ে আসার আহ্বান: ড. আতিউর রহমান
বাণিজ্য ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান
মোবাইলে খুব সহজেই প্রতি মাসে যাতে কর দেওয়া যায়, সেই পদ্ধতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের কর আদায় বাড়াতে হবে। বেতন থেকে একটি অংশও কেটে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কেননা কানাডাসহ অনেক দেশেই এটি চালু আছে।
গতকাল শনিবার (১৮ জুন) মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস ও দৈনিক আনন্দবাজার আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। আর সেই অর্থ আয় করতে হলে কর কাঠামো সহজ থেকে সহজতর করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় কর সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এনবিআর ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এটি সহজেই করা যায়।
এক্ষেত্রে তিনটি প্রস্তাব রাখেন তিনি। বলেন, কর আদায় থানা/উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সমস্যা নিরসনে জনশক্তি নিয়োগ ও মামলা হলে কোর্টে ভালো আইনজীবী দিতে হবে। পারস্পরিক আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। কর আদায় ডিজিটালাইজেশন করা তথা অনলাইন/মোবাইলে সহজে কর আদায় করার ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বাজেট আরও বাড়াতে হবে। কোভিড-১৯, বন্যা ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বোঝা যাচ্ছে না। তাই এ মুহূর্তে মানুষের দুর্যোগ-দুর্ভোগ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেটে ১৭ হতে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয় এটি যথেষ্ট নয়। কেননা মানুষের বেঁচে থাকতে হলে এই খাতে বাজেট বৃদ্ধি দরকার।
ড. আতিউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু শুধু আবেগের জায়গা নয় বরং এটি ভুটান, নেপাল, পশ্চিমবঙ্গ, আসামের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক ব্যবসায়িক জোনে পরিণত হবে। ট্রান্স এশিয়া হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবো। সুতরাং আমাদের ব্যাংক, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পে স্টার্টআপের জন্য যে বাজেট আছে তার বিশাল একটি অংশ এখানকার মানুষের জন্য বিনিয়োগ করা দরকার। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ৭০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছিল, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দূর থেকে পণ্য আনার চেয়ে কাছের দেশগুলো হতে পণ্য আনলে খরচ অনেক কমে যাবে। আর পদ্মা সেতুর কারণে বছরে ১.২৬ শতাংশ জিডিপিতে যুক্ত হবে, রেলে ১ শতাংশ, ২১ জেলায় ৩.৫ শতাংশ জিডিপি বাড়বে, ১.২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বছরে ২ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে। মূলত পদ্মা রূপান্তরবাদী প্রকল্পে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দিল্লিতে মেট্রোরেলের কারণে ১৮.৫০ শতাংশ জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল। মেট্রো রেল হলে আমাদের অবস্থাও এমন হবে। এখন দিনে ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ট্রাফিক জ্যামের কারণে। মেট্রো রেল হয়ে গেলে ৬০ হাজার মানুষ ঘণ্টায় যাতায়াত করতে পারবে। যাতায়াত ২ ঘণ্টা থেকে কমে ৪০ মিনিট হয়ে যাবে। এর প্রভাব দিল্লির মতো ঢাকাতেও পড়বে।
মাতারবাড়ী প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, শিল্পে জাহাজের প্রভাব এখনো আমরা বুঝতে পারিনি। জাহাজে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারলে এখানে বিপ্লব ঘটবে। কেননা এখন যে, ৫-৬ শতাংশ ভাড়া বেড়ে গেছে তা পুরোটাই বিদেশি লাইনের। তথা সিঙ্গাপুর হয়ে করতে হয়। চট্টগ্রাম হয়ে ইতালি বা অন্যান্য দেশে পোশাকপণ্য নিলে টাকাতেই তা পরিশোধ করা যেতো। ডলারের ক্রাইসিস কমে যেতো। এজন্য নিজেরা জাহাজ ভাড়া করে চালু করতে পারলে তা আমদানি-রপ্তানিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
স্বাস্থ্যে আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে নিজের পকেট থেকে যে ৬৮ টাকা ব্যয় হয় সেখানে ৫১ টাকায় নেমে আসবে। তাছাড়া শিক্ষায় প্রশিক্ষণ বাবদ আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ডলারের সংকট কাটিয়ে উঠতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। কিছুদিনের জন্য হলেও বন্ধ করা উচিত। রেগুলেটরি ডিউটি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ এক শ্রেণির হাতে অঢেল টাকা রয়েছে, তাদের দাম বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ড. আতিউর বলেন, ডলার সংকট নিরসনে ৬ মাস বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
এসময় ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, কেমন করে বাস্তবায়ন হবে, তারওপর নির্ভর করবে বাজেটের সাফল্য। আমাদের উচিত সম্পূরক বাজেটের আলোচনা করা। কী করেছি, কী করতে পারিনি সেটা দেখতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পে দ্রুত বাজেট বাড়ছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণেও বিনিয়োগ করতে হবে। যোগাযোগ ও জ্বালানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যোগাযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৮১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা তথা ১২ শতাংশ এখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৩৪৯টি প্রকল্পের মধ্যে ২৫৬টি যোগাযোগ সংক্রান্ত। ৬টি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। গত বছরের রয়েছে ১১০টি যা শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২২-২৩ শেষ হবে ৮৯টি এবং এরপরও চলমান থাকবে ৫১টি। এসবের কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে ফল আসে। কিন্তু ১১০টি যা বহন করতে হচ্ছে, এতে খরচ বাড়ে। তাই যথাসময়ে কাজ শেষ করাতে তদারকি বাড়াতে হবে।
বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশনের ঘাটতি বিষয়ে তিনি বলেন, ডিস্ট্রিবিউশন সঠিকভাবে করতে না পারার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ এসব কাজে আসছে না। ক্যাপটিপ পাওয়ারকে বাদ দিতে হবে।
ত্রিশাল-ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষক হিসেবে বাজেটটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার পর্যবেক্ষণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থা, যোগাযোগ ও শিল্পকে সামনে রেখে বাজেটটি করা হয়েছে। তবে গ্রামীণ মানুষ চায় তিনবেলা পেট ভরে খাবার, সুচিকিৎসা ও তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য। এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া কৃষক ও শ্রমিকের বরাদ্দকৃত বাজেট যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেটি নজর দিতে হবে।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, সর্বজনীন পেনশন এই বাজেটের ভালো দিক। ব্যবসায়ীদের করের হার কমানোও ভালো দিক বলবো, তবে কালো টাকা ও পাচার করা অর্থ বিনাপ্রশ্নে দেশে আনা প্রশ্নের বিষয়।
তিনি ওএমএস’র চালের কেজি ১০টাকা থেকে ১৫টাকা করাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, এই অবস্থায় কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে, এটি খুব ভালো হয়নি। সরকার এটি নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনায়েতুল্লাহ কৌশিক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জীম মণ্ডল।
- Cashless society to expedite country`s development, ease revenue collection : Prime Minister
- প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় করোনায়ও সচল অর্থনীতি
- ডিএসইর লেনদেন সাড়ে ১১শ কোটি টাকা ছাড়াল
- ১১শ` কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে রেলের নতুন বগি ও ইঞ্জিন
- বাংলাদেশকে ৮৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি
- দেশেই বাজাজের অটোরিকশা তৈরি করবে রানার
- এবারের বাণিজ্য মেলা হতে পারে অনলাইনে
- সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ॥ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে
- পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন
- আরেকটি নতুন মাইলফলকের পথে রিজার্ভ