ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে বিভক্ত বিএনপি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২২ এপ্রিল ২০২৩  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

এবার রমজান মাসেও অনেকটা প্রথা ভেঙে কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ঈদ পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বিভাগীয় লংমার্চ থেকে শুরু করে অবরোধের মতো কর্মসূচির কথাও ভাবছে দলটি। সরকারের বাধা ও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা এলে কর্মসূচির গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করবে, তবে থামবে না। কর্মসূচি পালনে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি ও শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, আন্দোলনই তাদের একমাত্র ভরসা। আগামীতে এক দফা আন্দোলনের বিকল্প নেই। দিনক্ষণ ঠিক করে আন্দোলন না হলেও নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচির গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হতে পারে।

সূত্র বলছে, ঈদের পর থেকে মাঠের কর্মসূচিতে আরও সক্রিয় থাকার চেষ্টা করবেন বিএনপি। দলটি জুলাই, আগস্ট মাস টার্গেট করে এগোলেও মূলত ঈদের পর থেকে টানা মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঈদের সপ্তাহখানেক পর দলটি ফের বিক্ষোভ-সমাবেশের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাবে। এরপর মে মাসের মধ্যেই বিভাগ টু বিভাগ লংমার্চের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কয়েক ঘণ্টার সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচির চিন্তা-ভাবনা চলছে। এসব কর্মসূচিতে বাধা এলে কৌশল পরিবর্তন করে ভিন্ন কায়দায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এসব কর্মসূচিতে শরিকদের সর্বোচ্চ সমর্থন নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।

পল্টন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ ফিরোজ আলম পাটোয়ারী ঈদের পরে দলীয় কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের জন্য যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করার জন্য আমরা প্রস্তুত।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা অনেকটাই এখন চূড়ান্ত। এক দফার আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিএনপি শিগগরি যে আন্দোলনের ডাক দেবে সেখানে শরিকদের সর্বাত্মক মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে বিএনপি। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপির অভিযোগ ওই নির্বাচন ছিল একতরফা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বেশ সতর্কভাবে পথ চলতে শুরু করে বিএনপি। অনেকটাই একলা চলো নীতিতে এগোতে থাকে। ২০২০ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় সরকারি বিধি-নিষেধে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে ২০২১ সালের শেষ সময়ে এসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমলে বেশ জোরেশোরে মাঠে নামে দলটি। বিশেষ করে অসুস্থ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসায় বিদেশ পাঠোনোর দাবি ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠ সরগরম করে। এতে দেশব্যাপী বেশ সাড়া পায়।

২০২২ সালের শুরু থেকে বেশ জোরেশোরে বিএনপি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তৎপর হয়। কৌশলগত কারণে ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর করে বছরের শুরু থেকে মিত্রদের নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনে কাজ শুরু করে দলটি।

গত বছরের জুলাই মাসের শুরু থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে বিএনপি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি ইস্যুতে।

একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও রয়েছে। সারাদেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট ও হাট বাজারে কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি পালনের পর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ঢাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ১৬টি স্পটে ১৬ দিনের কর্মসূচি পালন করে। ঢাকার কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের মধ্যদিয়ে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ করে। সমাবেশ থেকে দলটি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ ১০ দফার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দলগুলো যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি আট মাস। তারপরও দেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা মেরুকরণ। আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বলে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে অনড়। আর বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে আন্দোলনে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পর বিএনপি কয়েক ধাপে বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। পুরো রমজান জুড়েও দলটি মাঠের কর্মসূচিতে ছিল। বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎভাবে কর্মসূচিতে মাঠে রয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত, অলি আহমদের এলডিপিসহ কয়েকটি দল ও সংগঠন বিএনপির ১০ দফা দাবির প্রতি সমর্থনে কর্মসূচি পালন করছে।

বিএনপি ব্যাপকভাবে কূটনৈতিকভাবেও তৎপর। পাশাপশি দলটি এখন শরিকদের সঙ্গে যে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত তা গত কয়েকদিনের কর্মতৎপরতায় স্পষ্ট। গত ২ এপ্রিল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির নেতারা গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। ৭ এপ্রিল ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি ও বিএনপি নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ৮ এপ্রিল বৈঠক করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে।

এসব বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জোটগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, ঈদ পরবর্তী কর্মসূচি ও আন্দোলনের নানা কৌশল নিয়ে এসব বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নিজেদের মধ্যে মান-অভিমানও পরস্পরের আলোচনায় উঠে আসে।

১২ দলীয় জোটের নেতা জাপা (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে গত বৈঠকে কর্মসূচির ধরন ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে অনুয়ায়ী ঈদের পর থেকে মাঠে নামা হবে।

১২ দলীয় জোট নেতা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, যে পরিস্থিতি তাতে ঈদের পরে এক দফা ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন যেতে হবে, তাতে যা করণীয় তাই করতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প দেখছে না। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না।

আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে তাই দ্রুত বিএনপির এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসবে।

ঈদের পরের কর্মসূচি ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরাম থেকে আলোচনার পর জানানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এখনো কর্মসূচির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়