ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

শীতার্তদের সহায়তা সওয়াবের কাজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৪  

শীতার্তদের সহায়তা সওয়াবের কাজ

শীতার্তদের সহায়তা সওয়াবের কাজ

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে গরিব-দুঃখীরা বিপদে পড়েছেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অসহায় শীতার্ত মানুষকে সহায়তা করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তারা ধনীদের দিকে তাকিয়ে আছেন। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ শস্যকণা। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় জ্ঞানময়। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৬১)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, মহান আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদে সাহায্যকারী হয়েছে, আল্লাহও তার বিপদে দুনিয়া-আখেরাতে উত্তম সাহায্যকারী হবেন। মানবসেবায় নিজেকে সাধ্যমতো উৎসর্গ করা ধর্ম ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়াদান করেন। তারা তাঁর রহমত ও মাগফেরাতের জন্য দোয়া করতে থাকে। তার প্রতি কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (আত তারগিব)।

জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখাশোনা করনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! কীভাবে আমি আপনাকে দেখাশোনা করব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তুমি তাকে দেখাশোনা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখাশোনা করতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি আপনাকে কীভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনাকে কীরূপে পানি পান করাব, আপনি তো সব সৃষ্টির রব?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে?’। (মুসলিম)। যারা অন্যের প্রয়োজন পূরণ করেন, আল্লাহতায়ালাও তাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে, আল্লাহতায়ালাও তার কল্যাণে রত থাকবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৪৬)। অন্য হাদিস শরিফে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি ব্যয় কর, আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫২)। গরিব-দুঃখীদের জন্য ব্যয় করা সম্পদ কমে যাওয়া নয় বরং এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। শীতের কারণে শীতার্তদের সর্দি-কাশি ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগব্যাধি আক্রান্ত করছে। অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে তারা নিজেরা নিজেদের পরিবার আত্মীয়স্বজনকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই জরুরি ভিত্তিতে শীতার্তদের প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, লেপ কম্বলসহ ত্রাণসহায়তা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা একান্ত জরুরি। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (মুসতাদরাক)। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই! মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য আল্লাহ কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব দয়ামায়ার ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবেন।’ (আত তারগিব)। আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়