ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশেষ প্রকল্প আসছে করোনায় বিদেশ ফেরতদের সহায়তায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৪ জুন ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনা ধাক্কা সামলাতে বিদেশ ফেরত কর্মীদের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য আরপিএলের মাধ্যমে সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর ইমপ্লয়মেন্ট রেইনটিগ্রারেশন অব রিটানিং মাইগ্রান্টস (প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যাগত অভিবাসীদের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও সহযোগিতা দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায় সম্পৃক্ত এবং দেশে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- পুনঃএকত্রীকরণ বা পুনর্বাসনের জন্য বিদেশ ফেরত দুই লাখ কর্মীর ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং করে নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ কর্মীপ্রতি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান, প্রত্যাগত বিভিন্ন কাজে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মী বছাই করে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান করে সনদের ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে চাকরি প্রাপ্তিতে সহযোগিতা। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যাগত অভিবাসীদের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও আর্থিক ঋণ সহায়তা পেতে সহযোগিতা দেওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায় সম্পৃক্ত এবং বোর্ডের কল্যাণমূলক সেবাগুলো সাধারণ মানুষকে অবহিতকরণে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ আয়োজন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

সূত্র জানায়, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশে কর্মরত কর্মীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ৮ হাজার ৪০৮ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন এবং এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফেরত আসা এসব কর্মীদের অধিকাংশই কর্মহীন অবস্থায় আছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। আর্থিক কারণে সমাজে তারা নানাধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় ফেরত আসা বিপুল সংখ্যক কর্মীদের সমাজে পুনঃএকত্রীকরণ তথা পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিড-১৯ কারণে বিদেশ ফেরত কর্মীদের বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত তালিকা তৈরি এবং তাদের ওরিয়েন্টেশান ও কাউন্সেলিং করে এককালীন ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। যাতে তারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উপযুক্ত চাকরি অথবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে পারেন। আরপিএলের মাধ্যমে সনদপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীদের দেশে-বিদেশে চাকরি পাওয়ায় সহায়তা করা হবে। তাদের কর্মসংস্থান তথা আত্বনির্ভরশীল করার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঋণ সহায়তা পেতে সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের জন্য ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং করে এককালীন নগদ অর্থ প্রদান, তাদের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য আরপিএলের মাধ্যমে দক্ষতা সনদ দেওয়াসহ অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে। সেজন্য প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়