ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

বান্দরবানে চলছে অভিযান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৪  

বান্দরবানে চলছে অভিযান

বান্দরবানে চলছে অভিযান

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলছে। তিনটি সরকারি ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুটসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত আটক ৬৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারণে ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে টানা ৬-৭ দিনের ছুটির মধ্যেও বান্দরবান ছিল প্রায় পর্যটকশূন্য। পর্যটননির্ভর বান্দরবানে এবার ছিল না তেমন উৎসবের রং। গতকাল বান্দরবানে সন্দেহভাজন আরও এক কুকি-চিন সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। দুপুরে বান্দরবানের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মাইসুমা সুলতানা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার নাম হাও লিয়ান বম (৬৭)। তিনি বান্দরবান সদরের লাইমিপাড়া এলাকার ঙুনৎলির বমের ছেলে। আদালত সূত্র জানান, রুমায় ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে কেএনএফের মামলায় ১৮ নারীসহ ৬৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঈদের দীর্ঘ ছুটি ও বাংলা নববর্ষ, সাংগ্রাই উৎসবের কারণে পাহাড়ে এবার পর্যটকের ঢল নামার কথা ছিল। তবে বান্দরবান জেলা সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে হাতে গোনা কিছু পর্যটক ভ্রমণে এলেও রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে পর্যটক যেতে পারেননি। রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে গত ছয় দিনে কোনো পর্যটক যাননি। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই কিছু পর্যটক রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় যেতে পারলেও যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং সন্ত্রাসীদের অবস্থানের কারণে দর্শনীয় প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটগুলোতে তারা যেতে পারেননি। এমন অবস্থায় বান্দরবান বেড়াতে আসা পর্যটকরা জেলা সদরের নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা, প্রান্তিক লেক ও চিম্বুক এলাকায় ঘুরে নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রকৃত অর্থে পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যৌথ বাহিনীর অভিযান চলার কারণে আমরা কয়েকটি এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত নিরুৎসাহিত করছি। কিন্তু বিপদ এড়াতে পর্যটকরা নিজেরাই দুর্গম এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বান্দরবানের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বড় ধরনের আতঙ্কের কিছু নেই। বান্দরবানে পর্যটকরা অনায়াসে আসতে পারবেন এবং ভ্রমণ করতে পারবেন।

রুমা এবং থানচি ছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এবং সেখানে ভ্রমণ করতে আমরা পর্যটকদের উৎসাহিত করছি। তিনি বলেন, বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবটিও সবাই উপভোগ করতে পারবেন অনায়াসে। এখানে কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের কোনো প্রভাব নেই। তারপরও আমরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি। রবিবার বাংলা নববর্ষের দিন জেলা সদরের নীলাচল পর্যটন এলাকায় গিয়ে বেশকিছু দেশীয় পর্যটককে দেখা গেছে। নাইমুল ইসলাম নামের এক পর্যটক জানান, রুমা উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকায় যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে রুমা এলাকায় যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের খবর পেয়ে পুরো তিন দিনই তিনি বান্দরবান জেলা সদরের একটি হোটেলে কাটিয়েছেন।

বান্দরবান হোটেল-মোটেলে পর্যটকের খরা চললেও জেলা সদরের ইকো রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের দেখা গেছে। জেলা সদরের ব্লিস ইকো ভিলেজের পরিচালক ফরহাদ আলী খান রুবেল জানান, মাসখানেক আগে থেকেই তাদের রিসোর্টের পুরোটাই বুকিং ছিল। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে বুকিংগুলো বাতিল করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগাম বুকিং দেওয়া গেস্টদের সবাই আমাদের রিসোর্টে অবকাশ কাটিয়েছেন।

এদিকে কেএনএফ সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নির্মূলে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মধ্যে কেএনএফের প্রধান সমন্বয়ক ও উপদেষ্টাসহ ৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে ভীত বম সম্প্রদায়ের লোকজন পাড়া ছেড়েছেন। বেশির ভাগ বম পাড়া এখন জনশূন্য। এই অস্থিরতার মধ্যেই পাহাড়ে উদযাপন হচ্ছে সাংগ্রাই উৎসব। একদিকে বম পাড়া জনশূন্য হলেও অন্যদিকে পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই উৎসব চলছে ধুমধামের সঙ্গেই। একাধিক বম পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুকি-চিনের সদস্যদের ধরতে অভিযানে অনেক নিরীহ মানুষও ধরা পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই এসব অভিযান থেকে বাঁচতে অনেকেই স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি মং মং সিং বলেন, আমাদের প্রধান এবং প্রাণের উৎসব সাংগ্রাই। এবার আমরা আগের চেয়েও ঝাঁকজমকভাবে এ উৎসবটি পালন করছি। মারমা অধ্যুষিত এলাকায় কুকি-চিনের কোনো প্রভাব নেই। যার কারণে সাংগ্রাই উৎসব পালন করতে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আশা করছি, আমরা সুন্দরভাবে আমাদের সামাজিক অনুষ্ঠানটি সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে পালন করতে পারব। ট্যুরিস্ট পুলিশের বান্দরবান জোনের ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ জানান, যে কোনো উৎসবের ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়। তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকি। বান্দরবানে দুটি উপজেলায় (থানচি ও রুমা) একটু সমস্যা হলেও সেগুলো বাদ দিয়ে পুরো জেলায় অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই স্পটগুলোতে পর্যটকরা অনায়াসে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়