প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যে ভীমরুলীর ভাসমান হাট
ভ্রমণ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
কয়েক মিনিট পরপরই যাত্রী বোঝাই করে ছুটে চলছে ছোট ছোট নৌকা। এ দৃশ্য চোখে লেগে থাকার মতো। ডিঙির আদলে বানানো হলেও সবগুলোর আকার এক নয়। বিভিন্ন ধরনের ডিঙি নৌকায় করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য। প্রতিটি নৌকার পাটাতনও বেশ মজবুত। সুন্দর আসন দিয়ে বানানো হয়েছে বসার জায়গা। উপরে নেই ছাউনি, পাশেও নেই বেড়া। আসন ঠেকিয়ে বসে পর্যটকরা সব দিকেই সমানভাবে নজর দিয়ে সবুজের সমারোহ উপভোগ করেন।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের তিন জেলার ৫৫ গ্রামে পেয়ারার ফলন হয়। বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার উৎস। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খাল পাড়ে পেয়ারার সমারোহ। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলীর ভাসমান হাট থেকে বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা সরবরাহ হয় সারাদেশে। এই ভাসমান হাট দেখতে ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। এ পেয়ারা রাজ্য ঘুরে দেখতে নৌকা ও পানির সঙ্গে মিতালী করতে হয় পর্যটকদের। সে সুবাদে স্থানীয় যুবকরা মৌসুমী ডিঙি নৌকার মাঝি হয়ে বাড়তি উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের অন্য জায়গায় পেয়ারা কম হলেও বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামের ৩৫০ হেক্টর, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।
এসব এলাকার কয়েক হাজার কর্মজীবী পরিবার যুগ যুগ ধরে পেয়ারা চাষ করছে। পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাতকরণেও আছে কয়েক হাজার মৌসুমী বেপারী ও শ্রমিক। এ সময় অন্তত কুড়িটি স্থানে পেয়ারার মৌসুমী মোকাম সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ভীমরুলী, আতাকাঠী, ডুমুরিয়া, গণপতিকাঠী, শতদলকাঠী, রাজাপুর, মাদ্রা, আদমকাঠী, জিন্দাকাঠী, বর্ণপতিকাঠী, আটঘর, কুড়িয়ানা, আন্দাকুল, রায়ের হাট, ব্রাহ্মণকাঠী, ধলহার ও বাউকাঠী উল্লেখযোগ্য।
পেয়ারা রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ভীমরুলী ভাসমান হাটে বয়ে চলা খালে আবহমানকালের ঐতিহ্য কাঠের তৈরি এসব নৌকা দেখা যায়। এতে চড়ে পর্যটকরা ভিন্নরূপে প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পান। নৌকা ভ্রমণে ভাড়াও বেশি গুনতে হয় না তাদের। নৌকার আকার ও পর্যটক যা-ই থাকুক না কেন, প্রতিঘণ্টায় মাত্র ৩শ টাকা নিয়ে থাকেন ভ্রমণসহযোগী ডিঙি নৌকার মাঝিরা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন। এতে জীবিকার উৎস খুঁজে পান এ পেশায় নিয়োজিতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুম এলে সকাল থেকেই বেকার যুবকরা ভাসমান হাটের ঘাটে নৌকা বেঁধে অপেক্ষা করেন। পর্যটকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তারা নৌকা চালান। প্রতিঘণ্টা ৩শ টাকা করে রাখলেও ঘড়ির কাঁটায় কম-বেশি হলে বাড়াবাড়ি করেন না। পর্যটক বহনের জন্য নেই সিরিয়াল বা নির্দিষ্ট সময়। এমনকি প্রতিটি নৌকায় কতজন পর্যটক উঠছেন অথবা কতজন উঠতে পারবেন, তারও কোনো প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিবার যাতায়াতে একটি নৌকা সর্বোচ্চ ৮-১০ জন পর্যটক ধারণ করে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নৌকা চলে।
নৌকা চালক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন, ‘প্রতিঘণ্টা ৩শ টাকা ভাড়া চুক্তিতে নিলেও অনেকে দরকষাকষি করেন। কিন্তু একেকটি নৌকা তৈরিতে কাঠ ও মিস্ত্রিসহ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৪-৫ বছর পর প্রতিবছর মেরামতে প্রায় ২ হাজার টাকা বা তারও বেশি খরচ হয়। এসব ভেবেই প্রতিঘণ্টা ৩শ টাকা করে নেওয়া হয়। তাছাড়া এবার করোনার কারণে পর্যটক কমে গেছে। সেব খরচ শেষে এখন তেমন কিছু থাকে না। তবুও চলছি, বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছি।’
- দর্শনীয় স্থান: উত্তরার দিয়াবাড়ি
- বান্দরবানের মুনলাই পাড়া: দেশের সুন্দরতম গ্রাম
- সাজেক ভ্যালি: মেঘের ভেলায় এক স্বর্গীয় রাজ্য
- নেপালে ভ্রমণের শীর্ষ ১০ স্থান
- দর্শনীয় স্থান: মাধবপুর লেক
- দর্শনীয় স্থান: নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ
- দর্শনীয় স্থান: কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন
- ৫০ দিনে যেভাবে বদলে গেল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
- আমাজন জঙ্গল রহস্য ঘেরা এক মহাবিস্ময়
- নিলাদ্রি লেক: এ যেন বাংলাদেশের ‘কাশ্মীর’