ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  চৈত্র ৩১ ১৪৩১

নির্দেশনা পেলেই শুরু হবে কয়লা উত্তোলন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৬ এপ্রিল ২০২৪  

নির্দেশনা পেলেই শুরু হবে কয়লা উত্তোলন

নির্দেশনা পেলেই শুরু হবে কয়লা উত্তোলন

ভবিষ্যতে জ্বালানি সংকট এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের কয়লা খনিগুলো থেকে উন্মুক্ত এবং ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারের জ্বালানি বিভাগ কয়লা খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য পাঁচটি খনির সামগ্রিক চিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিগগিরই উপস্থাপন করা হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়া গেলে দ্রুত কয়লা উত্তোলনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে জ্বালানির দাম এবং ডলার সংকট বিবেচনায় সরকারের নিজস্ব সম্পদ আহরণে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে না গিয়ে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে যাওয়ার পরামর্শ তাদের।

গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের কয়লা ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে জানানো হয়, দেশের পাঁচটি খনিতে ৭ হাজার ৮২৩ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত আছে। এ কয়লার ২০ শতাংশ উত্তোলনযোগ্য। যার পরিমাণ ১ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন। আর এ পরিমাণ কয়লা ৪০ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন গ্যাসের সমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এসব কয়লা উত্তোলন করতে পারলে অন্তত ৫০ বছরের জ্বালানি নিশ্চিত হবে।

জানা গেছে, দেশের কয়লা খনিগুলোতে পরিচালিত বিভিন্ন সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে তৈরি করা একটি প্রস্তাব আগামী এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করে কয়লা উত্তোলনের অনুমোদন চাওয়া হবে। আর এ প্রস্তাব বিচার বিশ্লেষণ করে উচ্চপর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তার ভিত্তিতেই দেশের কয়লা সম্পদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে। আর অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী তিন বছরের মাথায় কয়লা ওঠানো সম্ভব হবে।

জ্বালানি বিভাগের বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত আসে। এর মধ্যে আছে- বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ছয় মাসের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে। দীঘিপাড়া খনির কয়লা তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কয়লা তোলার পর খনির জমি কৃষকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। জামালগঞ্জ খনি থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে কয়লাকে গ্যাসে রূপান্তর ও উত্তোলন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ছাড়া ফুলবাড়ী, খালাসপীর খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব জরিপ শেষ করে একটি চিত্রবিবরণী প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘জন টি-বয়েড’ ইতোমধ্যে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা সম্ভব। বর্তমানে দেশে আবিষ্কৃত পাঁচটি খনির মধ্যে একমাত্র বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ৪১০ মিলিয়ন টন কয়লার মজুত আছে। ২০২৭ সালের পর বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির কয়লা উত্তোলনের কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এরই মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছি। কয়লা তুলতে গিয়ে আমরা পরিবেশ, পানি ও স্থানীয়দের পুনর্বার্সনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করব। এ মুহূর্তে দীঘিপাড়া প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে কাজ করতে পারি। বড়পুকুরিয়াতে কাজ করছি। সেখানে নতুন করে কাজ করতে হবে। তা না হলে সেখানকার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে আগামী দুই বছরের মাথায়। বড়পুকুরিয়ায় কিছু অংশ ওপেন পিট করতে হবে। আর কিছু অংশ আন্ডারগ্রাউন্ড করতে হবে।

জ্বালানি বিভাগের ওই সভায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণ করা যেতে পারে এমন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। জানা যায়, বড়পুকুরিয়া থেকে দৈনিক ৩ হাজার টন কয়লা উত্তোলন হয়। সেখানে আরও সম্ভাবনা আছে। দিনে ৮ থেকে ৯ হাজার টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব। জ্বালানি বিভাগের পরিকল্পনা হচ্ছে নতুন তিনটি কয়লা খনি-ফুলবাড়ী, দীঘিপাড়া ও খালাসপীর থেকে কয়লা উত্তোলন করার। এই তিনটির মধ্যে ফুলবাড়ী ‘ওপেন পিট’ করা যেতে পারে আর বাকি দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজন অনেক বেশি। কয়লা আমদানিতে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। নিজের দেশেই যখন সম্পদ আছে তখন খুব সহজভাবে সেই কয়লা ওঠানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনন ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে একাধিক খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে। আমাদের কমপক্ষে তিনটি খনি থেকে যদি কয়লা ওঠানো সম্ভব হয় তাহলে বিপুল পরিমাণ কয়লা ওঠানো সম্ভব হবে। এর মধ্যে জামালগঞ্জ খনিতে বড় আকারে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা ওঠানো যেতে পারে। আর এই খনিতে মজুত সবচেয়ে বেশি। এই খনি থেকে কয়লা ওঠানোর সময় পানি জমার, বাড়িঘরে ফাটল তৈরি হওয়ার ও মাটি দেবে যাওয়ার শঙ্কাও কম।

সরকারি হিসাবে দেশের প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যে ৫ হাজার ৯০৭ মেগাওয়াট হচ্ছে কয়লাভিত্তিক। এর মধ্যে একমাত্র বড়পুকুরিয়ার ৫২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চলে সেখানকার খনির কয়লা দিয়ে। আর অবশিষ্ট কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চলে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে। প্রতি মাসে এজন্য বিপুল ডলার ব্যয় করার পরও আমদানি অনিশ্চয়তায় প্রায়ই বন্ধ থাকছে বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ ছাড়া ডলার সংকটে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১৪ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫৪ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি ডলার। আর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে প্রায় ১ কোটি টন কয়লা আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করতে হচ্ছে। এসব বিবেচনায় সরকার মাটির নিচে থাকা কয়লা আহরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়