ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

দেশি বিজ্ঞানীদের গবেষণা : ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৪ মে ২০২৪  

দেশি বিজ্ঞানীদের গবেষণা : ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত

দেশি বিজ্ঞানীদের গবেষণা : ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত

বিশ্বে প্রথম ইলিশ মাছের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। চিহ্নিত প্রোবায়োটিক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ইলিশের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা ছাড়াও অন্যান্য বাণিজ্যিক মৎস্য চাষেও অবদান রাখতে পারে। গতকাল শুক্রবার বিশ্বের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী ‘প্লস ওয়ান’-এ এ নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছের রোগ নিয়ে কোনো গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়নি।তবে মাছটির উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা চলমান। এমন প্রেক্ষাপটে ইলিশের অন্ত্রে বিশেষ ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করে তা বিশ্লেষণের খবর এলো।

ইলিশ বাংলাদেশে সহজলভ্য এবং জাতীয় মাছ হলেও বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে এই সুস্বাদু মাছের দেখা মেলে। তবে এর বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশই এখন বাংলাদেশের।দেশে ইলিশের উৎপাদন বছরে প্রায় ছয় লাখ টন। জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণার মাধ্যমে ইলিশের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকদলের নেতৃত্ব দেন বশেমুরকৃবির অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম।বিজ্ঞানীদল মেটাজিনোমিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে জাতীয় মাছের প্রধান প্রধান আবাসস্থল যথাক্রমে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাওয়া ইলিশের অন্ত্রে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। এসব ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণও করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে গবেষকদলের প্রধান ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রের অণুুজীবসমূহের গঠন ও বৈচিত্র্য উদ্ঘাটন করা হয়। নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হওয়ায় ইলিশের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়টি উন্মোচিত হবে।ভবিষ্যতে এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারের সম্ভাবনা বাড়বে।

প্রাণীর শরীরে অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়াও থাকে। প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হলো তেমনই অণুজীব। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া জীবদেহে বাস করে পোষকের (যার শরীরে বাস করে) বৃদ্ধি, উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই সর্বদা রোগমুক্ত মাছ ইলিশ। মেটাজিনোমিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এর অন্ত্রে নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন। এসব ব্যাকটেরিয়াই ইলিশকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। জিন নকশা প্রকাশ করে প্রাণী বা উদ্ভিদের জীবন রহস্য উন্মোচনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশের অন্ত্র নিয়ে এ গবেষণা করা হয়।

জানা গেছে, শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা ও ল্যাকটোব্যাসিলা উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হিসেবে তাৎপযপূর্ণ। বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক ও নদীর বাস্তুতন্ত্রে  বিচরণকারী ইলিশের অনন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাদ এবং কষ্টসহিষ্ণুতার সঙ্গে এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলোর উপস্থিতির সম্পর্ক থাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদলের অন্যতম প্রধান সদস্য ড. এম নাজমুল হক বলেন, এই গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা ও পলিনেলা) শনাক্তকরণ। এগুলো এর আগে কোনো মিঠা পানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে চিহ্নিত হয়েছে বলে জানা যায়নি। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যাপকতর গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে। এ নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণা ইলিশ মাছের টেকসই উন্নয়নেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইলিশ বাংলাদেশের একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। দেশ ও বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ আন্ত সীমান্ত বাণিজ্যিক প্রজাতি হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জীবিকা ইলিশ মাছের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের সামগ্রিক মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়