আকাশে নয় মাটিতে জীবন কাটে ল্যাঞ্জা রাতচরা পাখির
ফিচার ডেস্ক
ছবি : সংগৃহীত
নীল আকাশে উড়ে বেড়ানো আর গাছের ডালে পাখির বসবাস। তবে এই চিত্রের ব্যাতিক্রমও আছে। সব পাখি যে শুধু গাছের ডালে বসে বা পাতার আড়ালে থেকে জীবন কাটায়- তা কিন্তু নয়। কিছু পাখি মাটিতেও বসবাস করে। মাটিকে আশ্রয় করেই পরিচালিত হয় তাদের জীবনপ্রবাহ। তবে এমন পাখি প্রজাতির সংখ্যা খুবই সীমিত।
বনের নির্জনতায় বেঁচে থাকা পাখির নাম ল্যাঞ্জা রাতচরা, তার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। বাংলাদেশে অন্য রাতচরা প্রজাতিগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি আছে। পৃথিবীতে ৯৭টি প্রজাতি এবং আমাদের দেশে ৬টি প্রজাতির রাতচরা পাখির বিচরণ। এর ইংরেজি নাম লার্জ টেইলড নাইটজার। এরা সাধারণত পাহাড়ি এলাকা, নির্জন বাঁশঝাড়, গ্রামের কবরস্থান প্রভৃতি এলাকায় বসবাস করে।
মাটিতে বসবাসের ফলে বিপদটাও একটু বেশি। ডিম পাড়া থেকে ডিমে তা দেয়া এবং তারপর ছানাগুলোকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে তোলার মাঝে মা পাখিদের রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। বন্যপরিবেশে পারিপার্শ্বিক সব ধরনের শত্রুর হাত থেকে নিজের ছানাকে রক্ষা করা মা পাখিদের কঠিন চ্যালেঞ্জ। শত শত বছর ধরে আর তারা এই চ্যালেঞ্জ গভীর মমতায় অসীম ধৈর্য্যের সঙ্গে পালন করে তাদের প্রজনন এবং বংশধারাকে টিকিয়ে রেখেছে।
তবে দেশব্যাপী বন ও প্রকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ বিপন্ন হওয়ায় কিছু কিছু পাখিদের টিকে থাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ছানা তুলতে না পারায় বনের পাখিরা ক্রমশই বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটিতে বসবাস করা পাখিদের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। কারণ আমাদের দেশে নিরাপদ মাটি নেই। এরা ‘সুলভ আবাসিক পাখি’ হলেও বিপন্ন হয়ে গেছে। নিরাপদ মাটি মানে নির্জন অবস্থান বা যেখানে মানুষসহ অন্যান্য পশু-পাখির উপস্থিতি নেই। শিশু থেকে মানুষ কিংবা বিভিন্ন পশুর উপস্থিতি সত্ত্বেও ল্যাঞ্জা রাতচরা একদম মাটির উপরে বাসা করে চিরকাল ধরে ছানা ফুটিয়ে আসছে। কিন্তু এখন আর পারছে না। এভাবেই তার জীবন অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে গেছে।
যখন পৃথিবীতে মানুষ কম ছিল কিংবা অন্যান্য প্রাণী কম ছিল তখন থেকেই তারা এভাবেই করে এসেছে। এই অভ্যাস তো সে আর বদলাতে পরবে না। পোকা-মাকড় ধ্বংস করে পোকাখাওয়া পাখিদের জীবন তো এমনিতেই আমরা শেষ করে ফেলেছি। ল্যাঞ্জা রাতচরাও প্রধান খাবার পোকামাকড়।
খাদ্য সংকটের পরেই রয়েছে তার প্রজনন সংকট। মাটিতে তাদের ডিম হলেও নানা কারণে তার ডিমটি টেকে না। কোনোক্রমে যদিওবা ডিমটি টেকে কিন্তু ছানা ফুটলেও শেষ পর্যন্ত ওই ছানাটিও টেকে না। এমনি চরম অবস্থা তাদের। ল্যাঞ্জা রাতচরার ছানা বড় না হওয়া পর্যন্ত পুরো দুই মাস তাকে বনজঙ্গলের মাটিতেই বসে থাকতে হয়। কিন্তু আজ এমন নির্জন-র্নিঞ্ঝাট বনজঙ্গল তো নেই। আবার বনবিড়াল আর কুকুরের ভয় তো আছেই। আসলেই শেষ! একটি কুকুর আসলেই শেষ!
ল্যাঞ্জা রাতচরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৩ সিন্টিমিটার। এরা প্রশস্ত লেজের নিশাচর পাখি। ভোরে এবং গোধুলিতে এরা বেশি তৎপর থাকে এবং ডাকাডাকি করে। রাতে বন, তৃণভূমি এবং শষ্যক্ষেতের উপর উড়ে উড়ে পোকা খায়। দিনের বেলা কবরস্থান, বনের রাস্তা, ঝরাপাতার উপরে অথবা গাছের কান্ডে বুক লাগিয়ে ঘুমায়।
- কেমন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি
- যেভাবে মরুভূমি থেকে শীর্ষ ধনী দেশ কাতার
- দেশে উৎপন্ন ‘আগর আতর’ বিশ্বে মহামূল্যবান
- ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা
- নববধূকে যে কারণে লাল শাড়ি পরানো হয়
- ২৭ নভেম্বর ১৯৭১: আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা
- তিনটি হৃৎপিণ্ড নিয়ে বেঁচে আছে এই প্রাণী
- হতাশাই পুঁজি, লোক হাসিয়েই স্বাবলম্বী শামস চৌধুরী
- করোনায় আক্রান্ত হলেই আলো জ্বলবে মাস্কে
- বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস আজ