ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

৬ অক্টোবর ১৯৭১: আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৬ অক্টোবর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর দিনটি ছিল বুধবার। এদিন চট্টগ্রাম শহরের অদূরে হালদা নদীর মদুনা ঘাটের কাছে বৈদ্যুতিক সাবষ্টেশনের উপর গেরিলারা আক্রমণ করে ২টি ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা সেপাহি মান্নান গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। এদিন ছাগলনাইয়া ও মুহুরিগঞ্জের মাঝের একটি সেতু গেরিলারা উড়িয়ে দেয়।

পাকসেনাদের একটি টহলদল রাত তিনটায় কুমিল্লার দুর্লভপুরের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশের মধ্যে পড়ে এবং সংঘর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একজন অফিসারসহ বেশ কয়েকজন পাকসৈন্য নিহত হয়। সিলেটের কুমারশৈল গ্রামের কাছে টহলরত পাকসৈন্যের উপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়, এতে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। 

ছাগলনাইয়া বিওপিতে পাহারারত পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা দ্রুত সরে আসে। এ আক্রমণে বেশ ক’জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধারা শহিদ হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ধুমঘাট ও মুহুরিগঞ্জের মাঝামাঝি অবস্থিত রেলসেতু মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দেয়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী রাজশাহী জেলার সীমান্ত গ্রাম ঘোষপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গোলাবিনিময় হয়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিসেনারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য হস্তগত করে। 

রাতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থানরত পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে গেট প্রহরারত ৩ জন রাজাকার নিহত ও ২ জন আহত হয়। ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর মুক্তিবাহিনী পীরগাছায় পাকসেনাদের একটি দলকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ২ জন পাকসৈন্য নিহত ও ২ জন রাজাকার আহত হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদল দুটি গাড়ীতে মাল বোঝাইরত পাকসেনাদের ওপর গ্রেনেড আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩ জন সৈন্য নিহত হয় এবং ১টি গাড়ী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কুমিল্লা রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা গোপীনাথপুর, চান্দিনা, শারদানদী ও নয়নপুরে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি পাকিস্তানকে সকল প্রকার সাহায্য দান সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুমোদন করে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোজার্স পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীকে সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি হানাদারদের হাত থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারীদের পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের সুপারিশ করেন।

চীনা কনসাল জেনারেল সিয়াও চিউজই বলেন, চীনের সরকার এবং জনগণ বৈদেশিক হামলা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্য দেশের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সব সময়ই পাকিস্তানকে সমর্থন জানাবে। জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রী জমিয়ত নেতাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ও দেশ পুনর্গঠনের আহ্বান জানান।

আবদুস সবুর খানের বাসায় মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) এর কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) প্রধান কাইয়ুম খান বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় প্ররোচনায় ইসলামের বদলে ভাষাকেই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বলে প্রচার শুরু করা হয়। ভাষাভিত্তিক শ্লোগানের মূল উদ্দেশ্যই ছিল পাকিস্তান ধ্বংস করা।’

‘সংগ্রামী বাংলা’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ২২ জন অফিসার ও ৪ হাজারের বেশী সৈন্য, রাজাকার লোক নিহত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গণে প্রায় আড়াই হাজার কমান্ডো আক্রমণে ঐ শত্রুসেনাদের হত্যা করেছে। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়