ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৩ অক্টোবর ১৯৭১: আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৩ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ৩ অক্টোবর দিনটি ছিল রবিবার। এদিন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি এক অনির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সফরে নয়াদিল্লী পৌঁছান। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পৃথক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। তিনি হ্যানয়ের উদ্দেশ্যে নয়াদিল্লী ত্যাগের আগে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বর্তমান রুশ-ভারত সম্পর্কের মনোভাবের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সবরকম সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে।

২ নম্বর সেক্টরে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল মুক্তিযোদ্ধাদের অনন্তপুর ও ধানীকুন্ডা অগ্রবর্তী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা ভারী কামান ও মর্টারের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করে এবং সেই সঙ্গে পাকপদাতিক বাহিনীও আক্রমণ চালায়। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ৪০/৫০ গজের মধ্যে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। এতে ২৫/৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন যোদ্ধা শহিদ হন। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের চাপের মুখে অগ্রবর্তী ঘাঁটি পরিত্যাগ করে মূল ঘাঁটিতে পিছু হটে। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাঁটির ওপরও আক্রমণ চালালে মুক্তিযোদ্ধারা গোলন্দাজ ও মর্টারের গোলার সাহায্যে তাদের প্রতিহত করে। এক্ষণে আক্রমণে পাকসেনা মুক্তিবাহিনীর চাপের মুখে টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। এতে ৪০/৫০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা শহিদ ও ৫ জন আহত হন।

পাকসেনাদের একটি লঞ্চ, গোলাবারুদ ও রসদ নিয়ে সায়দাবাদ যাবার পথে মলুগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পড়ে। আক্রমণের ফলে লঞ্চটির গোলাবারুদ আগুন লেগে ডুবে যায়। সেই সঙ্গে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ২ জন আহত হন। এই খবর পেয়ে পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল আরেকটি লঞ্চযোগে মুক্তিযোদ্ধা অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। পথে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে পরগাছার কাছে আক্রমণ করে। ২-৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর অনেক পাকসেনা লঞ্চ থেকে ঝাঁপিয়ে পালাবার চেষ্টা করে এবং ডুবে যায়। পাকসেনাদের ৭০/৮০ জন নিহত ও আরো অনেক আহত হয়। লঞ্চটির ও বেশ ক্ষতি হয় এবং বহু কষ্টে বাকী সৈন্যদের নিয়ে লঞ্চটি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়।

এদিন বিকেল ৫টায় কসবার কাছে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ২০টি নৌকা ও ৩টি স্পিডবোট আক্রমণ করে। ফলে ৩য় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জামান ও ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ১২ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং তিনটি স্পীডবোট ও কয়েকটি নৌকা ডুবে যায়।
টাঙ্গাইলে মুক্তিবাহিনী ধনবাড়ীতে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই সংঘর্ষে পাকসেনাদলের অধিকাংশ সৈন্য হতাহত হয়।

৭ নম্বর সেক্টরের হামজাপুর সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের স্কুলপাড়ার প্রধান সড়কের আশেপাশে অবস্থান নেয়। পাকসেনাদের ২টি ট্রাক  এ অ্যামবুশে ঢুকে পড়লে গেরিলারা আক্রমণ চালায়। পিছনের ট্রাকটি অকেজো হয়ে পড়ে এবং সামনের ট্রাকটি পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তবে বেশক’জন পাকসেনা হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ২টি মর্টার, কয়েকটি এলএমজি, বেশ কিছু চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেল ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ হস্তগত করে।

জামালপুরে মুক্তিবাহিনী কমলাপুর-বকশিগঞ্জ রাস্তার ওপর মাইন পেতে অ্যামবুশ করে। পাকসেনাদের একটি গাড়ি মাইনের উপর এলে বিস্ফোরণে গাড়ীটি ধ্বংস হয় এবং ৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৬ জন আহত হয়। ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের একটি দলকে গয়েশপুরে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়।

খুলনার দাকোপ থানার খাটালি গ্রামে একদল রাজাকার অভিযানে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘিরে ফেলে। এ অবস্থায় রাজাকাররা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। রায়পুর এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদল অতর্কিত আক্রমণ চালায়। উভয়পক্ষের মধ্যে ৬ ঘন্টাব্যাপী তুমুল সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ৫০ জন পাকসৈন্য ও ৬০/৭০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৩৪ জন অবাঙালী ইপিআর ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ৭ জন যোদ্ধা শহীদ হন। নোয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার আবুল বাশার বিপুল বগাদিয়া যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। তার কাছ থেকে পাকসেনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

পাকিস্তান সরকার উপ-নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রেসনোট জারি করে। প্রেসনোটে প্রাদেশিক পরিষদের বাকি ৮৮টি শূন্য আসনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারীর মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন সরকার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের নামে পাকিস্তান সরকারকে ১৫ কোটি ডলার সাহায্য দেয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানায়।

এদিন পিডিপি নেতা নূরুল আমিনের ইস্কাটনের বাসায় দলের কার্যকরী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে কেন্দ্রীয় চাকুরী ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমুলক আচরণের ফলে প্রদেশে অসন্তোষ বিরাজ করায় তা দূর করার আহবান জানানো হয়। বৈঠকে দলের সবাইকে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। সেই সঙ্গে গোলযোগে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুর্নগঠনের দাবি জানানো হয়। পিডিপি এর ৮ দফার আলোকে প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়