ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হেফাজতে হাজার হাজার শিবির ক্যাডার, আবার কী ফিরছে রগ কাটার দিন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৭ এপ্রিল ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

একসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবির মানেই ছিল এক আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নাম শুনলেই ভয়ে চুপসে যেতেন ছাত্র-ছাত্রীরা। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা। সেসময় বিরোধী মতের ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী কেউ তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বিরোধীদের ধরে ধরে হাত-পায়ের রাগ কেটে দেওয়ার কুখ্যাতি অর্জন করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। সন্ত্রাসী এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন রাজনৈতিক চাপের মুখে লুকিয়ে থাকলেও আবার হেফাজতের ব্যানারে সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত সোমবার সকালে কক্সবাজারের পেকুয়ায় কৃষক লীগের এক নেতার পায়ের রোগ কেটে আবারও আলোচনায় এসেছে শিবির ক্যাডাররা।

জানা গেছে, হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় কক্সবাজারে কৃষক লীগের নেতা সরওয়ার উদ্দিনকে মারধর শেষে পায়ের রগ কেটে দিয়েছে শিবিরের ক্যাডাররা। সরওয়ার পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের সবজীবনপাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলমের ছেলে। এ ঘটনায় আহত সরওয়ার উদ্দিনের পক্ষে গতকাল মঙ্গলবার পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে হেফাজতকর্মী ও সাবেক শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক ও জালাল উদ্দিনকে।

বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দেন কৃষক লীগ নেতা সরওয়ার উদ্দিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে হত্যার উদ্দেশ্যে সরওয়ারের ওপর হামলা চালায় সাবেক শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক, জালাল উদ্দিনসহ একদল হেফাজতকর্মী। তারা লোহার রড দিয়ে সরওয়ারের শরীরে আঘাত করে এবং তার ডান পায়ের রগ কেটে দেয়।’

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সরওয়ার উদ্দিন বলেন, গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফাঁসিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর পাশেই মানিকের দোকানে নাশতা করতে যান। এ সময় দোকানের ভেতর বসে থাকা সাবেক শিবির ক্যাডার মুবিনুল হক ও জালালের নেতৃত্বে একদল হেফাজতকর্মী তাকে ঘিরে ধরে। তারা ‘তুই হেফাজতের বিরুদ্ধে বেশি লেখালেখি করেছিস’ এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান পায়ের রগ কেটে দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দেশের রাজনীতিতে জায়গা হারিয়ে ফেলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির। এরপর গোপনে দল পরিচালনা করতে থাকে এই দেশবিরোধী অপশক্তি। সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে আসেনি শিবিরের ক্যাডাররা। এখন হেফাজতে ইসলাম দেশে ভারতবিরোধীতার জিগির তুলে নানা সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে জামায়াত। দলটি হেফাজতের আড়ালে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় সারাদেশে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সবাই জানে এসবের মূলে রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। প্রকাশ্যে অস্বীকার করলেও জামায়াতের বড় নেতাদের সাথে হেফাজতের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জামায়াতপন্থী অনেকেই জায়গা করে নিয়েছে। আর বিভিন্ন মাদ্রাসায় হাজার হাজার শিবির ক্যাডাররাও ঢুকেছে। এরাই কক্সবাজারে কৃষক লীগ নেতার পায়ের রোগ কেটেছে। হেফাজতের নামে এই অপশক্তি আবার যদি সংগঠিত হতে পারে তাহলে দেশে আবারও অতীতের বিভীষিকাময় দিন ফিরে আসবে। দেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে পরিণত করবে এই অপশক্তি। তাই হেফাজত এবং তাদের ভেতরে জামায়াত-শিবিরের যে তৎপরতা তা অতিদ্রুত বন্ধ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে কেনে স্বাধীনতাকে জামায়াত-হেফাজতের হাতে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। বিশ্লেষকরা জামায়াত-হেফাজতের এসব মধ্যযুগীয় কর্মকাণ্ড রুখে দাঁড়াতে সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়