ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সরকারকে ফাঁসাতে তারেকের নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে গুম

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৮ এপ্রিল ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নিখোঁজের ৯ বছর পর মির্জা আব্বাস জানালেন, ইলিয়াস আলীকে আওয়ামী লীগ সরকার গুম করেনি, বিএনপিরই কিছু নেতা তাকে গুম করে। এই গুমের পেছনে কোন কোন নেতা জড়িত মির্জা আব্বাস তা উল্লেখ না করলেও ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়। তারেক ভেবেছিলেন, ইলিয়াস আলীর মত আলোচিত নেতাকে গুম করে সরকারকে দোষারোপ করলে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে। এর ফলে সরকারের পতন হবে। কিন্তু তারেকের সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। এরপর বিবেকের দংশনে এতদিন পর সেই নোংরা ঘটনাটির মূল কাহিনী ফাঁস করে দিলেন মির্জা আব্বাস।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা এবং ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে শনিবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি জানি আওয়ামী লীগ সরকার গুম করেনি। একজন জলজ্যান্ত তাজা রাজনৈতিক নেতা গুম হয়ে গেল দেশের অভ্যন্তর থেকে। যারা করল, তাদের কি বিচার হতে পারে না?’ মির্জা আব্বাস বলেন, দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এই ব্যক্তিদের অনেকেই চেনেন।

ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন তাকে। সেই যে পেছন থেকে দংশন করা সাপগুলো, আমার দলে এখনো রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন, তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে এগোতে পারবে না।’

সূত্র জানায়, সিলেট বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে ছিলেন বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আরেকপক্ষে আধিপত্য ছিল ইলিয়াস আলীর। তবে চার দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা শেষ হলে সিলেট বিএনপিতে এম সাইফুর রহমানের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। এককভাবে সিলেট বিএনপিকে কব্জায় নেন ইলিয়াস আলী। তার দাপটে মুখ খুলতে পারতেন না সাইফুর অনুসারীরা। একসময়ের ছাত্রদলের বড় ক্যাডার ইলিয়াস সিলেটের বিএনপি একাই নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুর অনুসারীরা তার ওপর নাখোশ হন। ইলিয়াস আলী থাকলে সিলেটে বিএনপিতে সাইফুরের অনুসারীদের কোন প্রভাব থাকবে না এই আশংকা থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। বিষয়টি জানতে পারেন তারেক রহমান। জানলেও তিনি এই নোংরা পরিকল্পনা না থামিয়ে বরং এটি বাস্তবায়নে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে সাইফুর অনুসারী হিসেবে পরিচিতি এম নুরুল হক, শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও বদরুজ্জামান সেলিম। ইলিয়াস আলীর গুমের পুরস্কারও পায় তারা। ২০১৪ সালে সিলেট নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও বদরুজ্জামান সেলিমকে সদস্যসচিব করা হয়। এই কমিটি থেকে বাদ পড়েন ইলিয়াস অনুসারীরা।

ইলিয়াস আলীর অনুসারী সিলেট বিএনপি নেতা ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ইলিয়াস ভাইয়ের গুমের পেছনে দায়ী সাইফুর রহমানের অনুসারী এম নুরুল হক, শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও বদরুজ্জামান সেলিম। আমরা ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে দায়ীদের সবার শাস্তি চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারেকের এই নির্দেশে কিছু নেতা প্রতিবাদ জানালে তারেক তাদের বলেন, ক্ষমতায় আসতে হলে এরকম দুই একজনকে বিসর্জন দিতে হয়। ইলিয়াস আলী এমনিতেও বড় ক্যাডার। তারে গুম করলে সহজেই সরকারকে দোষারোপ করা যাবে। আর এই গুমের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিদেশে ভালো সাপোর্ট পাওয়া যাবে। সরকার ফেলতে হলে এরকম ছোটখাটো দুই একটা ঘটনা ঘটাতে হয়। আমীর খসরু আক্ষেপ করে বলেন, ক্ষমতার জন্য ইলিয়াস আলীকে গুম করা হলেও তারেক তো ক্ষমতার দেখা পেলেন না।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারেক রহমান ছেলেটা কিছুটা বেয়াদব জানতাম কিন্তু এত বোকা তা জানতাম না। ইলিয়াস আলীর মত একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে মারার নির্দেশ দেয় কীভাবে? অবশ্য এর আগেও এই ছেলে বোকামি করেছে। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা করে বিএনপির পতন ডেকে এনেছিল। এখন মির্জা আব্বাসের এই স্বীকারোক্তির পর বিএনপি আবারও চাপে পড়বে। এতদিন আমরা সরকারকে দোষারোপ করে আসলাম। এখন কীভাবে সরকারকে দোষ দেব? তারেককে নেতা বানিয়ে খালেদা জিয়া জীবনে যে ভুল করেছেন তার খেসারত আজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে।

এতদিন কেন মুখ খোলেননি প্রশ্ন করলে মির্জা আব্বাস বলেন, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। এত দিন আমরা অভিযোগ করে আসছিলাম, সরকারই তাকে গুম করে রেখেছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই এই মিথ্যা অভিযোগ করতাম আমরা। ভাবতাম, বিএনপির লাভ হবে। কিন্তু এই অন্যায় লুকিয়ে রেখেও তো দলের কোন লাভ হয়নি। বিবেকের দংশনে অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়