ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

লাশ দাফনের কবরস্থান পেল শেরপুরের হিজড়া জনগোষ্ঠী

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২২ জুলাই ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর পর আর লাশ সৎকারে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিজড়াদের। লাশ দাফনের জন্য কবরস্থান পেলো শেরপুরের হিজড়ারা। শেরপুরের বিদায়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এবং তার সহধর্মিনী পুনাক সভাপতি সানজিদা হক মৌ নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে শেরপুরের হিজড়াদের জন্য কবরস্থানের জায়গা কিনে দিয়েছেন।

সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রামের পাশেই ১১ শতক জমি দলিল মূল্য ক্রয় করে কবরস্থান করে দিয়েছেন। চারদিকে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

গতকাল শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে হিজড়াদের কবরস্থানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ফিতা কেটে উদ্বোধন করে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। এসময় পুলিশ সুপার পত্নী সানজিদা হক মৌ সেখানে ৩টি গাছও রোপন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ, সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল, জনউদ্যোগ আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিদ শিব শংকর কারুয়া, সংস্কৃতি কর্মী এসএম আবু হান্নান সহ হিজজাড় জনগোষ্ঠির সদস্য ও স্থানীয় সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

কবরস্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত হিজড়া জনগোষ্ঠির সদস্যরা। শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ পুলিশ সুপার এবং তার সহধর্মিনীর প্রতি। তারা আমাদের আনন্দে শরীক হয়েছেন, শেষ বিদায়েও পাশে থাকার ব্যবস্থা করলেন। মৃত্যুর পর আমাদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থান নির্মাণ এবং লাশ সৎকারের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা তাদের প্রতি চির ঋণী হয়ে রইলাম।

নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের ৩০ অক্টোবর শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। সাথে ছিলেন তার সহধর্মিনীও। সেই অনুষ্ঠানেই তৃতীয় লিঙ্গ ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠির মৃত্যুর পর লাশ সৎকার নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়টি তারা অবগত হন। তখই তারা কামারিয়ার সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি হিজড়াদের জন্য পৃথক কবরস্থান নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সদ্য জামালপুর জেলায় বদলি হওয়া এই পুলিশ সুপার শেরপুর থেকে বিদায়ের আগেই হিজড়াদের লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানটির ব্যবস্থা করলেন। এজন্য তাদেকে অভিনন্দন জানাই।  

পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, কবরস্থান নির্মাণের মাধ্যমে আমি কেবল একটি মানবিক কাজে সামিল হতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি সকলের ভালোবাসায় একদিন হিজড়ারাা অব্যশই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো, সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে একই মর্যাদায় বাঁচতে পারবো। যেখানেই থাকি না কেনো, শেরপুরের হিজড়াদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি এখানকার হিজড়াদের কারো মৃত্যু হলে তাকে জানানো এবং লাশ কাফন-দাফনের সকল ব্যয় বহন করারও ঘোষণা দেন।

উল্লেখ, নাগরিক প্লাটফর্ম জনউদ্যোগের অনুপ্রেরণায় ২০১৮ সালে গঠন করা হয় শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা। তৎকালীণ জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের প্রচেষ্টায় জেলা সমাজসেবা বিভাগ জেলার ৫২ জন হিজড়াকে তালিকাভুক্ত করে এবং আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তৎকালীণ পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তালিকাভুক্ত সকল হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়।

জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় শেরপুর সদরের ১২নং কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর খাস জমির ওপর নির্মিত হয় সরকারিভাবে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। ২০২১ সালের ৭ জুন তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রামে  ৪০ জন হিজড়ার মাঝে জমিসহ ঘর প্রদান করে পুনর্বাসন করা হয়। এরপর থেকে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সমাজসেবা অধিদপ্তর সহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সংসদ সদস্য হুইপ আতিউর রহমান আতিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে হিজড়াদের উন্নয়নে। চলছে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়