ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রফতানি আয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক সাফল্য অর্জন

বাণিজ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

রফতানি আয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক সাফল্য অর্জন

রফতানি আয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক সাফল্য অর্জন

দেশের আটটি সরকারি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীনে প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরে এবারে রফতানি আয়ে সর্বকালের উচ্চ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ইপিজেডের শিল্প। ২০২১ অর্থবছরের ৬.৬৩ বিলিয়ন ডলারের আয় চলতি বছরে ৩০.৪১% বেড়ে ৮.৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথম এতো আয়ের রেকর্ড গড়লো এই খাত।

বেপজার তথ্য বলছে, গত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারি, ক্রয়াদেশ বাতিল ও আদেশের ঘাটতিসহ বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও আটটি ইপিজেডে অবস্থিত শিল্পগুলো দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছে।

অর্থবছর-২২ এ মোট রফতানি আয়ের ১৬.৬৫% ছিল ইপিজেডের।

রফতানি আয়ের রেকর্ড বৃদ্ধি 

২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের ২.৫৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে শীর্ষে ছিল চট্টগ্রাম ইপিজেড। এরপরে ঢাকা ইপিজেডের ২.১২ বিলিয়ন ডলার, কর্ণফুলী ইপিজেডের ১.৪৪ বিলিয়ন ডলার, আদমজী ইপিজেডের ৯৩৫.৭৬ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ইপিজেডের ২.৬৬ মিলিয়ন ডলার, উত্তরা ইপিজেডের ৩৭৬.৬৬ মিলিয়ন ডলার, ঈশ্বরদী ইপিজেডের ২০৯.০৬ মিলিয়ন ডলার ও মোংলা ইপিজেডের ১৫৮.২৪ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ইপিজেড থেকে মোট রফতানি আয় ৯৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

দেশের মোট রফতানির ৮৫% ছিল ইপিজেডের। এরমধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে ৫৪.৬৮%। এর অর্থ হলো ইপিজেডগুলো বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল।

রেকর্ড বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে বেপজা

২০২১-২০২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৪০৯.৮ মিলিয়ন বিনিয়োগ পেয়েছে বেপজা। যা ২০২১ অর্থবছরের ৩৪০.৭৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০.২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বোচ্চ ৮৮.৮৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড। এরপরে ঢাকা ইপিজেডে ৭১.০৭ মিলিয়ন ডলার, আদমজী ইপিজেডে ৭০.৬২ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ইপিজেডে ৬৭.৪৬ মিলিয়ন ডলার, কর্ণফুলী ইপিজেডে ৪৫.১৫ মিলিয়ন ডলার, ঈশ্বরদী ইপিজেডে ৪২.৭৮ মিলিয়ন ডলার, মংলা ইপিজেডে ১৮.৬৮ মিলিয়ন ডলার, উত্তরা ৫.১৮ মিলিয়ন ডলার।

বেপজার অধীনে আটটি ইপিজেডে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ কোরিয়া, চীন (তাইওয়ান ও হংকং), জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩৭ দেশের বিনিয়োগকারীরা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৬.০৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

৬৪,১৬০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি 

সম্প্রতি সমাপ্ত ২০২২ অর্থবছরে ৬৪,১৬০ জনের বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থান তৈরি করে মাইলফলক স্পর্শ করেছে। যা ২০২১ অর্থবছরে ছিল ৪৭,০০০ এর কিছু বেশি।

বেপজা কর্মকর্তাদের মতে, কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাবকে উপেক্ষা করে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কঠিন কাজ করেছে বেপজা।

সর্বোচ্চ ১৯,১১১ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে চট্টগ্রাম ইপিজেড। এরপরে ঢাকা ইপিজেডে ১০,৪৫১ জন, আদমজী ইপিজেডে ৯,৯২৪ জন, কুমিল্লা ইপিজেডে ৯,৭৯২ জন, কর্ণফুলী ইপিজেডে ৭,৩১৯ জন, ঈশ্বরদী ইপিজেড ৩,০০২ জন, উত্তরা ইপিজেডে ৯৯৫, মংলা ইপিজেডে ৯১২ জন কাজ পেয়েছে।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ইপিজেডের কর্মসংস্থানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,০২,৩৬৫ জনে।

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধির পেছনের কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের দূরদর্শী ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং প্রণোদনা।

এছাড়া বেপজার দক্ষতা, নিষ্ঠা ও ইপিজেডের অভ্যন্তরে ব্যবসা করার সহজতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি ইপিজেডে বিনিয়োগ, শ্রম এবং পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করছি। এছাড়া দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় এটি আরো বেড়েছে।”

তিনি আরো বলেন, তারা সবসময় এমন প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ করে যা স্থানীয় মানুষের জন্য আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।

শিল্প বৈচিত্র্য

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আটটি ইপিজেডে ৪৫১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক কারখানা ১৪৯টি।

তিনি বলেন, “আমরা উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প স্থাপনের উপর জোর দিয়ে বৈচিত্র্যের দিকে মনোনিবেশ করছি।”

অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, মোবাইল যন্ত্রাংশ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো পণ্য এখন ইপিজেডগুলিতে তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা এখন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসা শিল্পে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছি।

যেহেতু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪ আইআর) খুব কাছাকাছি। ফলে বেপজা কম্পিউটার, রোবোটিক্স, এআই, অটোমেশন ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করছে।

ভবিষ্যত সম্ভাবনা

আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, সমস্ত ইপিজেড প্রযুক্তি নির্ভর, স্বয়ংক্রিয়, ডিজিটালাইজড ও সিস্টেম-ভিত্তিক হবে। কাস্টমস ও ব্যাংকসহ সবকিছুকে এই সিস্টেমের সাথে একীভূত করবে। এছাড়া একটি ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) প্রতিষ্ঠা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রতিটি ইপিজেডের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডব্লিউটিপি), ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) আরো আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনব। বেপজা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের দিকেও মনোনিবেশ করছে।”

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে শিল্পায়নের পথ ধরে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বেপজারও লক্ষ্য দেশিয় বাজার দখল করা।

তিনি বলেন, “শিল্পায়ন জনসংখ্যাকে বোঝা থেকে শক্তিতে রূপান্তরিত করবে। একটি টেকসই শিল্পায়নের জন্য পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও শক্তিশালী সংযোগ খাত আবশ্যক।”

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসার সহজ বিকাশে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়