ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৪ ১৪৩০

“ময়মনসিংহে অনলাইন নার্সারির ই-কমার্স সম্ভাবনা”

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ৩১ মার্চ ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

খাতুনে জান্নাত আশা, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি, টেকজুম টিভি// প্রকৃতির নির্মলতা, গাছ আর ফুল ভালোবাসেনা এমন মানুষ মেলা ভার! কৃত্রিমতায় ভরা শহরের ইট পাথরের দেয়ালে আবদ্ধ মানুষগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর ধূলো বালিতে পূর্ণ ভারি বাতাসে অস্থির হয়ে প্রশান্তির জন্য খুঁজে বেড়ায় এক্টুখানি সবুজ। সেই সবুজের শীতলতায় চোখ মন জুড়াতেই বদ্ধ দেয়ালের অভ্যন্তরে, বারান্দা বা খোলা ছাদে গড়ে তুলতে চায় এক টুকরো শান্তির বাগান। আবার অনেক সৌখিন গাছপ্রেমী মানুষ ঘরের প্রতি কোণায় কোণায়, দেয়ালে ঝুলিয়ে বা বিভিন্ন সেলফ, টেবিল বা ক্লোসেটে শোপিসের মতো সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে বিভিন্ন প্রকার ইনডোর প্ল্যান্ট, মানিপ্ল্যান্ট বা বনসাই গাছ।

তবে এই ব্যস্ত নগর জীবনে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে নার্সারির সন্ধান করে সেখান থেকে বীজ, গাছ, টব, মাটি, কম্পোস্ট, সার ইত্যাদি সংগ্রহ করা বিশাল ঝক্কি ঝামেলার কাজ, পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে তাই হাজারো চাইলেও অনেকের বাসায় এই সবুজ প্রানের ছোঁয়া পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে যেখানে সমস্যা সেখানেই আসে নতুন সমাধান।

আর তাই রাজধানী শহর ঢাকায় অলরেডি ইনডোর প্ল্যান্ট আর বিভিন্ন প্রকার গাছপালা সরাসরি বাসায় এবং শহরের বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসগুলোতে সরবরাহ দেয়ার জন্য গড়ে উঠছে কিছু ই-কমার্স উদ্যোক্তা। তবে অন্যান্য জেলা শহরগুলিতে এখনো দেখা মিলেনি এমন কোনো উদ্যোগের।

ময়মনসিংহ সদরে রয়েছে অনেকগুলো নার্সারি, আবার অনেক ভ্রাম্যমান গাছ বিক্রেতাকেও শহরে ঘুরতে দেখা যায় ভ্যানে করে বিভিন্ন প্রকার ফল, ফুল আর সবজির গাছ নিয়ে। সবুজপ্রেমী শহরবাসী তাই তাদের থেকেই সাধারণত পছন্দ, আর চাহিদা মতো প্ল্যান্ট সংগ্রহ করে থাকে।

ময়মনসিংহ শহরের উল্ল্যেখযোগ্য নার্সারীগুলো হল- বাকৃবির হর্টিকালচার সেন্টার, সানকিপাড়া জামতলায় একটা নার্সারি আছে, নদীর অই পারে শম্ভুগঞ্জ এ বেশ কিছু নার্সারী আছে, জিলা স্কুলের বিপরীত পাশে নূর নার্সারী, নিউ এভারগ্রীন নার্সারী, এছাড়া গাঙ্গিনাপাড় বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ ফুলগাছ বিক্রেতা আছেন, তাদের কাছ থেকে ফোন দিয়ে অর্ডার দিয়ে পছন্দ মত যে কোনো প্ল্যান্ট সংগ্রহ করা যায়। এগুলো ছাড়াও শহরের আনাচে কানাচে বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেক নার্সারি রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহে মেয়রের উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে টাউনহলে হচ্ছে ফুলমেলা, যা মানুষকে নন্দনচর্চায় আরও বেশি আগ্রহী করে তুলছে।

তবে এখন নার্সারি মালিকদের অভিযোগ, করোনার মধ্যে বাইরের লোক চলাচল কমে গেছে তাই আগের মতো প্রকৃতিপ্রেমীরা আর গাছ কিনতে আসছেন না। যদি এমন সুব্যবস্থা থাকত যে অনলাইনেই ছবি দেখে, বর্ণ্না পড়ে যে কোনো ফুল, ফল বা সবজির বীজ বা প্ল্যান্ট পছন্দ করে অর্ডার করা যেত, আর সেগুলো সোজা বাসায় পৌঁছে যেত টব, মাটি আর প্রয়োজনীয় সার আর কীটনাশক সহ তবে গাছপ্রেমী সৌখিন মানুষগুলো যে ভীষন খুশি হত এটা সুনিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

তাছাড়া বাগান তৈরি ও পরিচর্যা সহজ কাজ নয়। মাটি তৈরি, সার মেশানো, চারা লাগানো অনেক সময় শ্রমের ব্যাপার। এ ছাড়া এই কোভিড সংকটের সময় নার্সারি থেকে ছোট-বড় গাছপালা ঠিকমতো বাড়িতে বয়ে আনতেই তো জীবন শেষ! তাই যদি ঘরে বসে নিশ্চিন্তে এই সেবাগুলো পাওয়া যায়, তবে শুধু সকাল-সন্ধ্যা গাছপালার জন্য পানির ব্যবস্থা আর একটু সূর্যের আলোর বন্দোবস্ত করতে পারলেই যথেষ্ট হবে। আর এতে ইনডোর প্ল্যান্টিং এর পাশাপাশি ছাদকৃষি করতেও আগ্রহী হবে অনেক মানুষ। নিজ বাগানের তাজা ফুলের ঘ্রাণ আর তাজা সবজির স্বাদ নিতে চাইবে না কে, যদি এতো সহজেই প্ল্যান্টিং করতে সক্ষম হয়! ভেজালের ভীড়ে এই এক্টুখানি পিউরিটি দিবে পরম শান্তি।

যেহেতু ময়মনসিংহে এখনও এই সেক্টরে কেউ ই-কমার্সে কাজ করছেনা, তাই এটা বেশ সম্ভাবনাময় একটা উদ্যোগ হতে পারে। অনলাইন নার্সারির মাধ্যমে বিভিন্ন বাসায়, অফিসে প্ল্যান্ট সরবরাহের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পর পর এর পরিপূর্ণ পরিচর্যার সার্ভিস অর্থাৎ অনলাইন মালির উদ্যোগ হতে পারে বর্তমানে অন্যতম সৃজনশীল উদ্যোগ। মানুষের মধ্যে বাগান করার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখন আবাসিক ভবন ছাড়াও অফিস ঘরেও সবুজময় করার চেষ্টা চোখে পরছে , তাই এর সম্ভাবনা অনেক।

নার্সারিগুলোতে সাধারণত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছোট চারা কিংবা উদ্ভিদের কলম উৎপাদন করা হয়, রোপণের আগে যত্ন সহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। নার্সারি খাত শুধু অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়তা করে না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ রোধসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যা সমাধানে বহুমাত্রিক অবদান রাখে। দিন দিন নার্সারির চারার চাহিদা বাড়ছে। নার্সারি খাতের মাধ্যমে দেশের বেকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে স্বল্পপুজির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

ফল, ফুল, বনজ, সবজি, মসলা, অর্কিড, ক্যাকটাস ও ফার্নের বিভিন্ন চারা উৎপাদন করা হয় বিভিন্ন নার্সারিতে। এই উদ্যোগে তুলনামূলক কম মূলধন লাগে। আর যদি একদমই রিস্ক ফ্রী থেকে এই সেক্টরে কাজ করতে চায় কেউ, তবেও তা সম্ভব। কারণ কয়েকজন একসাথে মিলে সব অফলাইন নার্সারিগুলোকে একসাথে সমন্বয় করে, সেগুলোকে ই-কমার্স সাইট আর ফেসবুকে ছবি আর কন্টেন্টের মাধ্যমে প্রচার করে গাছপ্রেমীদের আকৃষ্ট করতে পারে, আর ক্রেতাদের পছন্দ মতো পৌঁছে দিতে পারে গাছ আর সেবা।

তবে নার্সারি করার ক্ষেত্রে আগ্রহী উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে নার্সারি ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এছাড়া ময়মনসিংহের স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অথবা বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে বিভিন্ন প্রশিক্ষন ,পরামর্শ এবং সাহায্য সহযোগীতার জন্য। ময়মনসিংহে কৃষি বিষয়ক যে কোনো উদ্যোগের প্রধান সুবিধা হলো, দেশের সবচেয়ে বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষনা ইন্সটিটিউট এখানে অবস্থিত এবং বীনার দুইজন সম্মানিত গবেষক ময়মনসিংহের ই-কমার্স সমস্যা সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় আশ্বাস দিয়েছেন যে, কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো উদ্যোগে তারা সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবেন। তাই এই খাতে ইনভেস্ট করে ভালো করার সুযোগ রয়েছে সর্বোচ্চ।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়