ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০  

যে ব্যক্তি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা, তাঁর প্রেরিত সকল নবী, রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, পরকাল ও তকদীরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ঈমান গ্রহণের পর তা থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তিনিই প্রকৃত মুমিন।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীম ও পবিত্র হাদিস শরিফে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে মুমিন বান্দার কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট তুলে ধরা হলো-

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
 
أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

সরল বঙ্গানুবাদ: ‘মুমিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলেই যাদের অন্তর কেঁপে উঠে আর তাদের কাছে যখন তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয় আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। তারা সালাত কায়িম করে আর আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। এসব লোকেরাই প্রকৃত মুমিন। এদের জন্য এদের প্রতিপালকের নিকট আছে নানান মর্যাদা, ক্ষমা আর সম্মানজনক জীবিকা।’ (সূরা: আল আনফাল, আয়াত: ২-৪)।

উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির অবস্থা লক্ষণীয় আমলের দ্বারাই ঈমানের কম-বেশির কারণ। আমলবিহীন ঈমান অকল্পনীয়,তাই সদা-সর্বদা আমলের কারণেই ঈমান বাড়ে-কমে। নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা এর বাস্তব নমুনা অনুধাবন করা যায়।

‘অন্তরের উদাহরণ হলো- একটি পালকের মতো, যা গাছের ডালে ঝুলানো আছে, বাতাসে সেটিকে এদিকে সেদিকে ঘুরাচ্ছে।’(মুসনাদে আহমাদ, হা: ১৯৬৬১, সহিহ জামে, হা:২৩৬৫)।

১ম পর্বের পর থেকে...

(৫) মন-মেজাযে অস্থিরতা ও সংকীর্ণ আনা: মনের সংকীর্ণতার কারণে মানুষ তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈমানকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ঈমান হলো ধৈর্য ও উদারতা।’

এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবে,
‘মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার ওই ব্যক্তি যে চরিত্রগত দিক দিয়ে যে সবচেয়ে উত্তম।’

নম্র স্বভাবী, অতিথি পরায়ন, যারা অন্যকে ভালবাসে এবং অন্যের ভালবাসা পায়। ওই ব্যক্তির মধ্যে কল্যাণ নেই যারা অন্যকে ভালবাসে না এবং অন্যের ভালবাসাও সে পায় না। (তাবারানী, মুজামুস সগীর-হা: ৯২৫৯, সিলসিলা সহিহ-হা: ৭৫১)।

(৬) কোরআনের মাধ্যমে প্রভাবিত না হওয়া: কোরআনের আয়াতের অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি, আদেশ-নিষেধ এবং কেয়ামতের বর্ণনা দ্বারা সে প্রভাবিত হয় না। দুর্বল ঈমানের কোরআন শ্রবণে বিরক্তি লাগে। অন্তর আর কেরাতের সঙ্গে সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে সক্ষম হয় না। তাই যখনই সে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য কোরআন খুলে, তখনই তা বন্ধ করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে।

(৭) হারাম কাজ দেখে ও তার সামনে সংঘটিত হচ্ছে তাতেও রাগান্বিত হয় না: কেননা অন্তরে আত্নসম্মানের অগ্নিশিখা তার স্পৃহাকে দাবিয়ে দেয়। যার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ থেকে বিশ্রাম নেয়। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর দিকে নিজেকে নিবিষ্ট রাখতে পারে না। এই ধরনের অন্তরকে একটি সহিহ ‘দুর্বল অন্তর’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

যেমন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফিতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায়, তাতে একটা করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে তাতে একটি করে শুভ্রাজ্জল চিহ্ন পড়ে। এমনি করে দু‘টি অন্তর দু‘ধরনের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের ন্যায়,আসমান ও জমিন যতদিন থাকবে, ততদিন কোনো ফিতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো কাল-কলসীর মতো, প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা সেঁটে দিয়েছে। তাছাড়া ভালো-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না। (সহীহ মুসলিম- হা:১৪৪)।

(৭) হিংসা ও কৃনণতা করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কৃপণতাকে ভয় করো, কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। (সুনান আবূ দাউদ-হা: ১৬৯৮,সহিহ)।

(৮) নিজে না করে অপর মানুষকে তা বলে বেড়ানো: আল্লাহ তয়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ

كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা করো না তা তোমরা কেনো বলো? তোমরা যা করো না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা: আস্ সাফ্, আয়াত: ২-৩)।

(৯) কোনো মুসলিম ভাইয়ের বিপদাপদ, ব্যর্থতা ও ক্ষতি সাধনে খুশী হওয়া।

(১০) পাপ কাজের দিকে দৃষ্টি দেয়া এবং অপছন্দনীয় বিষয়ে শিথিলতা করা: এই আমলকারীর নিকট সন্দেহপূর্ণ ও মাকরুহ কাজ থেকে কেউ নিষেধকারী থাকে না, যতক্ষণ সে হারাম কাজ না করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে সে হারামের মধ্যে জড়িত হয়ে পড়ে, যেমন- কোনো রাখাল তার কোনো পশু সংরক্ষিত এলাকার আশে-পাশে চড়ায়, সে অচিরেই ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম-হা: ১০৮/১৫৯৯)।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ:

(১) মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো কোরআনের মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়া, হারাম ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, অন্তরের কঠোরতা দুরিভূত করা, ইবাদতে মনোযোগী হওয়া, রাগ হিংসা ও কৃপণতা পরিহার করা।

(২) মুমিন ব্যক্তি কোনোভাবেই আনুগত্য ও ইবাদতের ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও অলসতা করবে না।

(৩) কোনো মুসলিম ভাইয়ের বিপদাপদ, ব্যর্ততা ও ক্ষতিতে তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসা জরুরি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়