ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মায়ের সেবা নফল ইবাদতের থেকেও উত্তম যে কারণে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ মে ২০২৩  

মায়ের সেবা নফল ইবাদতের থেকেও উত্তম যে কারণে

মায়ের সেবা নফল ইবাদতের থেকেও উত্তম যে কারণে

মা-বাবার সেবা নফল ইবাদতের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ—এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি চমৎকার হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির নাম ছিলো ‘জুরাইজ’। একদিন সে ইবাদতে লিপ্ত ছিলো, এ সময় তার মা এসে তাকে ডাকল। তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলো। তাই সে মায়ের ডাকে সাড়া দিলো না। 

তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা, আর (অন্যদিকে) আমার নামাজ, (আমি কী করি?)। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে তিনি তার নামাজকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার এলেন এবং বলেন, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমার মা, আমার নামাজ। তখন তিনি তার নামাজে মশগুল রইলেন। তখন তার মা বলেন, হে আল্লাহ! এই জুরাইজ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যু দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিণীর অপবাদ দেখাও।

জুরাইজ একটি ইবাদতখানায় থাকতো। সেখানে থেকেই তিনি সারাদিন ইবাদত করতেন। একবার এক নারী এলো তার ইবাদতখানায়। নির্জনে তাকে ব্যভিচারের কুপ্রস্তাব দিলো। কিন্ত জুরাইজ আল্লাহর নেককার বান্দা ছিলেন। তিনি আল্লাহকে ভয় করতেন এবং এই ব্যাভিচার, পাপাচারকে ঘৃণা করতেন, তাই তিনি সেই নারীর ডাকে সাড়া দিলেন না, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো। 

এরপর সেই নারী এক রাখালের কাছে গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করল। রাখালের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে সেই নারী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল।

সেই নারীর কাছে যখন এই সন্তানের বাবা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো- সে রাখালের পরিবর্তে সেই নেককার জুরাইজকে এই সন্তানের বাবা বলে পরিচয় করিয়ে দিলো। সেই নারী বলল, এটা জুরাইজের সন্তান। 

এ কথা শুনে লোকেরা প্রচণ্ড রেগে গেলো এবং জুরাইজের কাছে এসে তাকে কোনও ধরনের জবাবদিহিতার সুযোগ না ‍দিয়ে তার ‘ইবাদতখানা ভেঙ্গে দিল। এরপর তাকে ইবাদতখানা থেকে নীচে নামিয়ে এনে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ অজু করে নামাজ পড়লেন এবং নবজাত শিশুটির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে শিশু! তোমার বাবা কে?- আল্লাহ তায়ালা অলৌকিকভাবে সেই কোলের শিশুর জবান খুলে দিলেন। তখন শিশুটি জবাব দিল, আমার জন্মদাতা হলেন সেই রাখাল। 

শিশুটির জবাবের পর সত্য প্রকাশ্যে এলো এবং লোকেরা তাদের কাজের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করলো। তারা তাদের কাজের জন্য লজ্জিত হলো এবং জুরাইজের সোনা দিয়ে জুরাইজের ইবাদতখানা তৈরি করে দিতে চাইলো। তারা বললো- আমরা আপনার ‘ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। কিন্তু জুরাইজ বললেন, না, মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও। (বুখারি ৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম ২৫৫০, আহমদ ৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়