ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করার দশটি চমৎকার উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ২ মে ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

মানবমস্তিষ্ক এক রহস্যের আঁধার। এটাই আমাদের সার্বিক কম্যান্ড সেন্টার। এখান থেকেই আমাদের সবার দৈহিক ও মানসিক কার্যকলাপের দিকনির্দেশনা যায়। একটি প্রানবন্ত উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত মস্তিষ্ক মানে একজন সপ্রতিভ মানুষ। তাই মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত রাখা একান্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

প্রচলিতভাবে দেখা যায় মস্তিষ্ক উজ্জীবিতকরণ মানেই শুধু প্রবলেম সলভ করা বা অংক কষা। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এমন কিছু উপায় আছে যা একই সঙ্গে অনেক উপভোগ্য ও কার্যকরী। আপনি হয়তো বুঝতেও পারবেন না যে আনন্দের আড়ালে নিজের অজান্তেই মস্তিষ্ককে আরও উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করে ফেলেছেন। এমন দশটি চমৎকার উপায় আজ আমরা জানব।

ধাঁধা, কুইজ ও পাজল

বিভিন্ন রকমের ধাঁধা, শব্দজট, সুডোকু ও পাজল আপনার মস্তিষ্কের জন্য অভূতপূর্ব উৎকর্ষতা বয়ে আনতে পারে। এগুলো সমাধান করার সময় আপনার মস্তিষ্ক ভীষণ আলোড়িত হয়। এতে মস্তিষ্কের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আরো তড়িৎ ও দৃঢ় হয়। ফলে আপনি পান একটি আরও বুদ্ধিদীপ্ত ও উজ্জীবিত মস্তিষ্ক।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত শব্দজট সমাধান করেছে তারা অন্যান্যদের থেকে প্রায় আড়াই বছর পরে স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

দাবা

দাবা খেলার বহুবিধ উপকারিতা আছে। যেমন- সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বাড়ায়, দ্রুত চিন্তা করার ও প্রতিক্রিয়া দেখানোর দক্ষতা বাড়ায়, সর্বোপরি সৃজনশীলতা বাড়ায়। দাবা খেলার সময় যুগপৎভাবে মস্তিষ্কের বাম ও ডান অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে ও নিউরন কোষের ভেতরে অনেক বেশি সংযোগ সাধিত হয়। উল্লেখ্য, নিউরন কোষের সংযোগ অনেক জরুরি একটা বিষয়। সংযোগ কম বা বেশির উপরে আমারে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে দাবা খেলা আমাদের মস্তিষ্ককে ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে।

পড়া

মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে চাইলে পড়ার বিকল্প নেই। এটি অন্যতম একটি উপায় মানসিক ও আত্মিকভাবে উজ্জীবিত হবার। পড়ার মাধ্যমে আপনি অচেনা অদেখা বিভিন্ন আগ্রহোদ্দীপক ক্ষেত্রে বিচরণ করে আসতে পারেন যা স্বাভাবিকভাবেই আপনার মস্তিষ্ককে আলোড়িত ও উজ্জীবিত করে। পড়া আপনার বুদ্ধিমত্তা, মনোসংযোগ ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। আপনার জ্ঞানের ভূবনকে আরো প্রসারিত করে। শব্দভান্ডারে যোগ করে নতুন নতুন সম্পদ। এত কিছুর পরে মস্তিষ্ক উজ্জীবিত না হয়ে থাকে কী করে!

পরিশ্রম ও ব্যায়াম

যথোপযুক্ত শারিরীক পরিশ্রম আপনাকে শুধু শারীরিকভাবেই ভালো বোধ করায় না, সঙ্গে সঙ্গে আপনি মানসিকভাবে এবং আবেগ অনুভূতিতেও আরো ভালো বোধ করতে থাকেন। শারিরীক পরিশ্রমের সময় মস্তিষ্ক ভীষণভাবে উদ্দীপনা লাভ করে, সমগ্র শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এই বাড়তি রক্ত সঞ্চালনের ফলে মস্তিষ্ক লাভ করে বাড়তি শক্তি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারিরীক পরিশ্রম মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ (গ্রে ম্যাটার) বৃদ্ধি করে, স্মৃতিভ্রষ্ট রোগ থেকে রক্ষা করে।

বাদ্যযন্ত্র শেখা

কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা ও বাজানোর ফলে মস্তিস্কের উপর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। স্বরলিপি দেখে সেই সুর বাদ্যযন্ত্রে তোলার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের অসংখ্য নিউরন কোষের মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ সাধিত হয় যা আগে হয়তো ছিলনা। ইতোমধ্যে আমারা জেনেছি যে, এই সংযোগের উপকারিতা কি। বাদ্যযন্ত্র বাজানো তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায় ও বিভিন্ন স্বরলিপি মনে রাখার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। এছাড়াও মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, বিশেষ করে বাম অংশে। উল্লেখ্য মস্তিষ্কের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সৃজনশীলতা। গবেষণায় দেখা গেছে, দশ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাদকদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো। এভাবেই একটি বাদ্যযন্ত্র বাজনোর মাধ্যমে আমরা মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে পারি।

প্রার্থনা ও মেডিটেশন

হাজার বছর ধরে প্রার্থনা ও মেডিটেশন মানুষের মনকে নিরুদ্বেগ করে শিথিল করেছে। এটা মনকে নানাবিধ চাপ থেকে মুক্ত করে ভারমুক্ত করে দেয়। স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ এনে দেয় অপার মানসিক শান্তি। মস্তিষ্কের উপরে রয়েছে এর বিশাল প্রভাব। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন অন্তত তিরিশ মিনিট প্রার্থনা বা মেডিটেশন করেছেন, তাদের মস্তিষ্কের 'হিপ্পোক্যাম্পাস' এলাকায় ধুসর পদার্থ বা গ্রে ম্যাটার আরো ঘনীভূত হয়েছে। 'হিপ্পোক্যাম্পাস' হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আমাদের স্মৃতি, শিক্ষণ ও আবেগের জন্য দায়ী। সুতরাং এই এলাকায় বেশি পরিমান ধুসর পদার্থ মানে স্মৃতি, শিক্ষণ ও আবেগের উপরেও আরও ভালো ইতিবাচক প্রভাব।

এর পাশাপাশি আরও দেখা গেছে যে, প্রার্থনা বা মেডিটেশনের ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এর জন্য দায়ী মস্তিষ্কের 'এমিগডালা' অঞ্চলের ধুসর পদার্থ কমে যায়। তার মানে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায়। ফলশ্রুতিতে মস্তিষ্ক হয় আরও উজ্জীবিত ও উদ্দিপ্ত।

আঁকাজোকা ও রং করা

মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে আপনাকে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী হতে হবে তা বলছি না। সাধারণ এলোমেলো আঁকাজোকা, কিছু রং করা এগুলো করেই আপনি আনন্দের পাশাপাশি মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে পারেন। এই ধরনের কাজগুলো মস্তিষ্কের 'প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স' কে উদ্দিপনা যোগায়। 'প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স' হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জ্ঞান ভিত্তিক আচরণ ও সামাজিক আচরণের সূতিকাঘর। এই ধরনের আঁকাজোকা কর্মকান্ড মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে অনূভুতিকে আরও তীক্ষ্ণ করে তোলে। সেই সঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক আচরণ, স্মৃতিশক্তি, প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন ও সমস্যা সমাধানের সক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

লেখা

লিখেও আপনি মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে পারেন, হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন। হাতে লেখা আপনার চিন্তাশক্তিকে শক্তিশালী করে। কারণ লিখতে গেলে তো ভাবতেই হয় যে কি লিখব, কি লিখব....। একই সঙ্গে মস্তিষ্কের কয়েকটি অংশকে যৌথভাবে কাজ করতে হয় এবং এতে মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয়। হাতে লেখা আমাদের দ্রুত শিখতে সাহায্য করে। টাইপ করা নোটের থেকে নিজ হাতে লেখা নোট পড়ে আরো ভালোভাবে মনে রাখা যায়। কারণ মস্তিষ্ক চিনতে পারে যে এটা একান্ত আপনার নিজস্ব।

পথ পরিবর্তন

কখনো খেয়াল করেছেন যে নিয়মিত যেখানে আপনাকে যেতে হয়, যেমন অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বাচ্চার স্কুল; এমন সব জায়গায় যাবার জন্য ঘর থেকে বের হলেন আর হেঁটে বা গাড়িতে যেভাবেই যান না কেন কীভাবে কীভাবে চলে গেলেন সেটা টের ও পেলেন না! এটা একারণে হয় যে, আপনার মস্তিষ্ক আপনার গন্তব্যপথের জন্য নতুন করে আরো কোনো যোগাযোগ তৈরি করার সুযোগ পায় না। প্রতিনিয়ত একই পথ ব্যবহার করে আপনি আপনার মস্তিষ্কের জন্য নতুন কোনো তথ্য প্রদান করছেন না। ফলে মস্তিষ্ক এখান থেকে আর কোনো উদ্দীপনা পাচ্ছে না।

এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনাকে নতুন কোনো পথ ব্যবহার করতে হবে, এমনকি এক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তনও আপনার মস্তিষ্ককে উদ্দীপনা যুগিয়ে উজ্জীবিত করতে পারে। যেমন- আগে যদি ডান ফুটপাথ ধরে হেঁটে যেতেন এখন বাম ফুটপাথ ধরে হাঁটুন। মাঝে মাঝে অন্য কোনো রাস্তা ধরে যান। এগুলো আপনাকে আপনার পথের প্রতি মনযোগ দিতে বাধ্য করবে; সোজা কথায় আপনার মস্তিষ্ককে খাটাবে। যার ফলে আপনি পাবেন উজ্জীবিত মস্তিষ্ক।

হাত পালটান

যেই হাতে সব সময় কাজ করতে অভ্যস্ত সেই হাত পালটে অন্য হাতকে দ্বায়িত্ব দিন। ছোট ছোট কাজেই এটা অনুশীলন করতে পারেন। যেমন- আপনি যদি ডানহাতি হয়ে থাকেন তবে বাম হাত দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন, চুল আঁচড়ান অথবা লেখার চেষ্টা করুন।

অনভ্যস্ত হাতকে ব্যবহার করার ফলে মস্তিষ্কের নিউরন কোষের মধ্যকার সংযোগ আরো দৃঢ় হয় এমনকি নতুন সংযোগও তৈরি হয়। আপনি যখন অনভ্যস্ত হাতে কিছু করতে যাবেন তখন কী করছেন সেই ব্যাপারে আপনাকে সচেতন থাকতে হয় এবং হাতকে নির্দেশনা দেয়ার জন্য ভাবতে হয়। এটাই মূলসূত্র নিউরনে নতুন সংযোগ তৈরি হবার। এভাবেই মাঝে মাঝে অনভ্যস্ততাকে অভ্যাস করে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা যোগাতে পারেন।

পড়লে জানা যায়, কিন্তু সেটা থেকে ফল লাভ করার জন্য বাস্তবিক জীবনে সেটা অনুশীলন করতে হবে। মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত ও উজ্জীবিত করার এই সেরা দশটি উপায় থেকে অনুশীলন করে দেখুন, অবশ্যই লাভবান হবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়