ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিএনপির ভালো চাইলে নেতৃত্ব থেকে সরাতে হবে তারেককে-প্রবীণ নেতাদের মত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২০ জানুয়ারি ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গোঁয়ার্তুমি, হঠকারীতা, প্রতিহিংসা পরায়ণতা এবং ক্রমাগত ভুল পদক্ষেপের কারণে রাজনীতিতে ক্রমশ অপসৃয়মান বিএনপি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গোছালো রাজনীতি ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণেও বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। সংকট নিরসনে উপযুক্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারছে না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলের পক্ষে কাজ করা বাদ দিয়ে সিনিয়র নেতারা একে অপরকে টেনে নিচে নামানোর কাজে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতি কোনদিকে মোড় নেবে তা জানেন না দলের সিনিয়র নেতারাও। ফলে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে- এমন সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

বিশেষ করে ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে বিরোধী দল ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হামলা-নির্যাতন, গুম-খুন, মামলা দিয়ে যে দমন-নীতি গ্রহণ করেছিল, তা ছিল বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি। খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারে এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা দেশজুড়ে চালায় ধ্বংসযজ্ঞ।

এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে একইসাথে খতম করে দেয়ার মানসে চালানো হয়েছিল নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। গ্রহণযোগ্যতা হারায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে।

এই হামলাটিও চালানো হয়েছিল তারেক রহমানের নির্দেশে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা এবং বাংলাদেশের একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা সংগঠিত হামলাটি সম্পর্কে খালেদা জিয়া ওয়াকেবহাল ছিলেন শুরু থেকেই। কিন্তু পুত্রস্নেহে অন্ধ খালেদা তাতে বাধা দেননি।

রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ফল হাতেনাতে পেয়ে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে বিএনপি। তবুও তাদের সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। ২০১৪-১৫ সালে দেশজুড়ে হাজারো মানুষকে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে বিএনপি ও তাদের চিরদোসর জামায়াত। খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র বিদেশে পলাতক তারেক রহমানের নির্দেশেই ঘটে সব।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিএনপি নামক দলটির সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির পুরোটাই নেতৃত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান। যার ফল পেয়েছে দলটি। কানাডার আদালত কর্তৃক দুবার দুটি ভিন্ন মামলায় বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি চিহ্নিত হয়ে যায়, তারেক রহমানও।

বিএনিপর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা ছাড়াও দলের অনেক প্রবীণ এবং উচ্চ শিক্ষিত নেতারা দলের ভালোর জন্য নানারকম গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েও তারেক রহমানকে শোধরাতে পারেননি, উল্টো খালেদা জিয়ার বিরাগভাজন হয়েছেন এবং এক পর্যায়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য হন অনেকেই। দলে জায়গা করে নেয় অযোগ্য লোকজন, প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তারেকের।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত একজন প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি নিজেই দলের এমন অবস্থা দেখে হতাশ। কোনো কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও আমার মত হতাশ। আর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের কাজের সামঞ্জস্য নেই, মূল্যায়ন নাই। দল এখন তারেকের টাকা কামানো আর ধান্দার জায়গা।

তারেক রহমানের গোঁয়ার্তুমি সম্পর্কে জেনেও দলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মুখ বুঁজে সব সহ্য করছেন সিনিয়র নেতারা। বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোটাই চ্যালেঞ্জ। মূলত পদ হারানোর ভয়ে অনেকেই মুখ বুঁজে অন্যায় সহ্য করছেন। আসলে সত্য উচ্চারণ করার সাহস উনাদের নেই, আক্ষেপ করলেন ওই নেতা।

দলকে সংগঠিত করার বদলে ক্রমাগত ভুলের কারণে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বিএনপি। সব দুর্বলতা দূর করে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে দলটি, এমনটি মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এজন্য তারেক রহমানের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ। এটা বহুবার বলা হলেও কর্ণপাত করছেন না তিনি।

বিএনপিপন্থী হিসেবে খ্যাত একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ঘরোয়া বৈঠকে বলেন, পরিবারতন্ত্র থেকে বের হতে পারছে না বিএনপি। পারিবারিক সূত্রে দলের প্রধান হয়েছেন তারেক রহমান। কিন্তু শুধু তারেকের ওপর নির্ভরতার কারণে দলে বিকল্প নেতৃত্ব উঠে আসছে না। তার উচিৎ রাজনীতি থেকে আপাতত সরে দাঁড়িয়ে দলকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া।

তিনি আরো বলেন, তারেক রহমান সুশীল সমাজের মনোভাব ভালো নয়। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তার ভাবমূর্তির সংকট আছে। এ কারণেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি। আপাতদৃষ্টিতে এটা পরিস্কার, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সুদিন ফেরার সম্ভাবনা নেই।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়