ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিএনপিতে সবচেয়ে অপ্রিয় নেতা তারেক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৩১ জুলাই ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপিতে তারেক জিয়া এক সময় প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিলেন। বিএনপির সকলের মনে করত পরবর্তীতে জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তারেক জিয়াই বিএনপির প্রধান নেতা হবেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তারেকপন্থীদের একটি জোয়ার এসেছিল। সরকার এবং দলে তারেকের প্যারালাল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে তারেক জিয়া একদিকে যেমন দলের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং অন্যদিকে সরকারের নীতিনির্ধারণেও ভাগ বসিয়েছিলেন। সেই তারেক জিয়া এখন বিএনপিতে সবচেয়ে অপ্রিয় নেতা। বিএনপি নেতারা স্বীকার করছেন যে, তারেক জিয়া এখন বিএনপির জন্য বোঝা হয়ে গেছেন।

তারেক জিয়া যতদিন বিএনপি নেতা থাকবেন, ততদিন বিএনপির পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। আর তিনি যে দলের স্বার্থে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমন মানসিকতা তার নেই। কেউ সাহস করে যে তাকে বলবেন যে তিনি এখন দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাক, সেটি বলার মতো সৎ সাহসও কারো নেই। যার ফলে, তারেক জিয়া বিএনপিতে এক অপ্রিয় নেতা হিসেবে জবরদখল করে টিকে আছেন, এমন মন্তব্য বিএনপিতে কান পাতলেই শোনা যায়।

তারেক জিয়া ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে যাওয়ার আগে তিনি তৎকালীন সামরিক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু লন্ডনে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে তিনি বিএনপির নেতৃত্ব আবার দখল করেন। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়াও সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয়ে তারেকের পরামর্শ গ্রহণ করেন।

তবে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার কর্তৃত্বেই ছিল বিএনপি। এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার একটি ভুল সিদ্ধান্ত বিএনপিতে খালেদা জিয়ার অবস্থানকে নড়বড়ে করে দেয়। ২০১৪ সালে নির্বাচনে যাবার ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা বেগম খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০১৪ নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সবগুলোতে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। বিএনপির পক্ষে একটি জোয়ার তৈরি হয়েছিল বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

ওই সময়ে যেহেতু তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বাতিল করে দিয়েছিল সে জন্য বিএনপির কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিল যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার সেই সময় একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল যে সর্বদলীয় সরকারে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার একক সিদ্ধান্তে ওই নির্বাচনে বিএনপি যায়নি এবং ওই নির্বাচনে বিএনপি না যাওয়াটা ছিল একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

তারেক জিয়া এই সুযোগটি গ্রহণ করেন। এরপর ১৪ সাল থেকে আস্তে আস্তে বিএনপির কর্তৃত্ব গ্রহণ করা শুরু করেন তারেক। ২০১৫ সালে সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আবার বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দেন এবং লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই অবরোধ কর্মসূচিও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এক পর্যায়ে মানুষ অবরোধ ভেঙ্গে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করে। এটি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।

একজন নেতা যখন ভুল করেন তখন তাকে সরে যেতে হয়। বিএনপিতে খালেদা জিয়ার সরে যাওয়াটা হয়েছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। বেগম খালেদা জিয়ার পরপর দু`টি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের চরম মূল্য বিএনপিকে দিতে হয়েছে বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন। আর এরপর থেকেই তারেক জিয়া নির্ভর হয়ে পড়ে বিএনপি। বিশেষ করে বিভিন্ন বিষয়ে খালেদা জিয়ার চেয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করতে শুরু করেন বিএনপির নেতারা। দ্রুতই বিএনপির কর্তৃত্ব দখল করে ফেলেন তারেক জিয়া এবং এরপর থেকে শুরু হয় বিএনপির অন্ধকার অধ্যায়। তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেই বিএনপিকে সংগঠিত করার চেয়ে টাকা উপার্জনের দিকেই বেশি মনোযোগ দেন এবং সেই অংশ হিসেবেই তারেক জিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনকে তার টাকা উপার্জনের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেন। এ সময় তিনি একের পর এক ভুল মনোনয়ন, টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দিয়ে দলে সমালোচিত হন। ১৮ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত এই তিন বছর সময় তারেক জিয়ার রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, তারেক জিয়ার একমাত্র লক্ষ্য হলো দলকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জন করা। আর এ কারণেই তারেক এখন বিএনপিতে সবচেয়ে অপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর বিএনপি নেতারা মনে করছেন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তারেক জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা এখন শূন্যের কোঠায়। এই অপ্রিয় নেতা দিয়ে বিএনপি কতদূর যেতে পারবে সেই নিয়ে এখন বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়