বাজেটে বড় ভর্তুকি পাচ্ছে টিসিবি
নিউজ ডেস্ক
বাজেটে বড় ভর্তুকি পাচ্ছে টিসিবি
নিম্ন আয়ের কোটি পরিবারের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে আসন্ন বাজেটে সরকারি সংস্থা টিসিবিকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেওয়া হবে। ভর্তুকির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থবিভাগ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে অর্থবিভাগ থেকে ভর্তুকি বাবদ ৯০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বর্তমান কোটি পরিবার খাদ্য সহাযতা পেলেও আগামী বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সেক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়বে।
জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং গ্যাসে নতুন করে আর ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষকে সস্তায় খাদ্যপণ্য দিতে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সার আমদানিতে ভর্তুকি এবং রপ্তানি বাড়াতে নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে টিসিবির কার্যক্রম বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এতে করে গ্রামাঞ্চলের অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। যদিও টিসিবির কার্ড বিতরণে কিছু অনিয়ম ওঠায় এবার পুরো সিস্টেমটিকে ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে অনিয়ম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে ডিজিটাল কার্ড পাবেন উপকারভোগী প্রতিটি পরিবার। এতে করেও টিসিবির পরিচালন ব্যয় আরও বাড়বে। এছাড়া নতুন নতুন গুদাম নির্মাণ, টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনসহ সেবার পরিধি বাড়ার ফলে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয়ও প্রতিবছর বাড়ছে।
জানা গেছে, টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো এবং এ খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সারাদেশের নিম্ন আয়ের কোটি পরিবারকে টিসিবির খাদ্য সহায়তার এই উদ্যোগটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ কারণে আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে বিশেষ ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট সংক্রান্ত সম্প্রতি এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া না হলেও সামাজিক নিরাপত্তায় সরকার সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো, খোলা বাজারে চাল, আটা বিক্রি কার্যক্রম (ওএমএস) এবং খাদ্যবান্ধক কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। যাতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ভোগ্যপণ্যে স্বস্তি পান। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়ে আসছেন। পরনির্ভরতা কাটাতে এবং দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে কমমূল্যে খাদ্যের যোগান দিতে বিষয়টির ওপর তিনি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশের প্রতিইঞ্চি জায়গা আবাদের আহ্বান জানিয়েছেন।
টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি এক কোটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে। প্রতিমাসে একবার করে ভোজ্যতেল, ডাল ও চিনির মতো পণ্য বাজারের প্রায় অর্ধেক দামে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ সময়ে ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর এবং আলুর মতো পণ্য বিক্রি করে সংস্থাটি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারাদেশের ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা মূল্যের চাল পাচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ওএমএসের স্বল্পমূল্যের চাল ও আটা কিনতে পারছে সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের মতে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা যত বেশি বাড়ানো হবে মানুষ তত উপকৃত হবেন। এর ফলে বাজারের ওপরও চাপ কমবে। এ কারণে সরকারের এই কাজগুলো অব্যাহত রাখতে চায়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দেওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ।
এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হলে সামাজিক নিরাপত্তায় যত প্রোগ্রাম চালু আছে তা চালু রাখতে হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে বলে মনে করি। জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও টিসিবি পণ্য বিক্রি করে কিছু মুনাফা করতে পেরেছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটি নিট মুনাফা করে ২২ কোটি টাকা। কিন্তু গত কয়েক বছরে টিসিবির কার্যক্রম বাড়িয়ে খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করার ফলে এ খাতে প্রতিবছর ভর্তুকি ও লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে এখন টিসিবি’র কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে অর্থবিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে টিসিবিকে ৯০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তবে টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, বিপরীতে পণ্য ক্রয়সহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফায় ঘাটতি বা লোকসান হয়েছে ১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে অর্থবিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে টিসিবি। টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এখন প্রতিমাসে একবার টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে আগামীতে মাসে দুইবার করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এতে করে টিসিবির আরও বেশি অর্থ সহায়তার প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে বছরে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। এদিকে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর আওতা বাড়িয়ে অধিক সংখ্যক মানুষকে সুবিধা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগামী বাজেটে নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা এবং বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ৫০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন।
- Cashless society to expedite country`s development, ease revenue collection : Prime Minister
- প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় করোনায়ও সচল অর্থনীতি
- ডিএসইর লেনদেন সাড়ে ১১শ কোটি টাকা ছাড়াল
- ১১শ` কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে রেলের নতুন বগি ও ইঞ্জিন
- বাংলাদেশকে ৮৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি
- দেশেই বাজাজের অটোরিকশা তৈরি করবে রানার
- এবারের বাণিজ্য মেলা হতে পারে অনলাইনে
- সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ॥ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে
- পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন
- আরেকটি নতুন মাইলফলকের পথে রিজার্ভ