ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বাংলাদেশে পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর মাছ নিষিদ্ধ কেন?

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ পিরানহা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।

রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ পিরানহা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশে পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর মাছের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পিরানহা ও ২০১৪ সালের জুন থেকে আফ্রিকান মাগুরকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। রাক্ষুসে স্বভাবের কারণেই দুটি মাছের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস, ১৯৮৫- এর কয়েকটি ধারা সংশোধনের মাধ্যমে আফ্রিকান মাগুরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের রেণু ও পোনা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। এ আইন অমান্য করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে মৎস্য সংঘ নিরোধ আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। এ আইন অমান্যকারীদের দুই বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কারণ এই দুই প্রজাতির মাছ চাষের ফলে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

কোনোভাবে যদি পুকুর থেকে এই দুই প্রজাতির মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে আসে তাহলে দেশের মৎস্য সম্পদের মহাবিপর্যয় ঘটবে। তাই পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর মাছের উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণের দায়ে জেল-জরিমানাসহ উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ বন্যা প্রবণ দেশ। যদি পুকুরে বা ঘেরে পিরানহা বা আফ্রিকান মাগুর মাছ চাষ করা হয়, আর সেই মাছ পানিতে ভেসে মুক্ত জলাশয়ে (নদী, খাল বিল) চলে গেলে সেখানকার ছোট বড় সব মাছ বিলুপ্তির মুখে পড়তে পারে। কারণ পিরানহা বা আফ্রিকান মাগুর মাছ জলাশয়ে ছোট বড় সব মাছকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বাজারে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ প্রকাশ্যেই উৎপাদন ও খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। পিরানহাকে থাই রূপচাঁদা বা সামুদ্রিক চান্দা নামে বিক্রি করা হয়। আর আকারে ছোট আফ্রিকান মাগুর মাছকে দেশি মাগুর মাছ বলে বিক্রি করা হয়। এদিকে এ দুই প্রজাতির মাছের দাম কম থাকায় দেদারছে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর খেলে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই তবে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পিরানহা মাছ ও আফ্রিকান মাগুর মাছের উৎপাদন, বিপণন, বিক্রি ও সংরক্ষণ স্থায়ীভাবে বন্ধ না হলে বাংলাদেশের ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ ও ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ অধিকাংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

যেভাবে বাংলাদেশে এলো পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর মাছ

পিরানহা-আফ্রিকান মাগুর মাছ বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। একেক সময় একেক তথ্য মিলেছে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাক্ষুসে প্রজাতির দুটি মাছ দেশে আসেনি।

ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, মূলত চোরাইপথেই দেশের ভেতরে পিরানহা- আফ্রিকান মাগুর মাছ ঢুকেছে। আশির দশকে বাংলাদেশের ভেতরে আফ্রিকান মাগুর প্রবেশ করে। ধারণা করা হয়, মাছটি প্রথমে ব্রাজিল, ভিয়েতনামে, ইন্দোনেশিয়া হয়ে ভারতে এসেছে। তবে পিরানহা মাছ কখন, কীভাবে, দেশে ঢুকেছিল তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে প্রথম পিরানহাকে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে হ্যাচারি মালিক ও মাছ চাষিরা মাছগুলো খাওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জলাশয়ে চাষ শুরু করে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ময়মনসিংহ-কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলের ডোবা বা পুকুরে পিরানহা মাছের উৎপাদন ও চাষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জে আফ্রিকান মাগুরের চাষ হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

তবে এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন  ইয়াহিয়া মাহমুদ। তিনি বলেন, অনেক চাষি রাক্ষুস জাতের পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ সম্পর্কে জানেন না। তবে দুই প্রজাতির মাছ চাষ খুবই সীমিত।

তিনি আরো বলেন, এসব মাছের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর তদারকি করা হচ্ছে। আমরা যেখানেই এই মাছ চাষ হতে দেখেছি, সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে মাছ চাষিদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি।

-বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ
জনপ্রিয়