ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বাংলাদেশি সফটওয়্যার ‘প্রোকনফ’ এখন বিশ্বদরবারে

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৫ মে ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দ মহসিন রেজা ও মো. মাহফুজুর রহমান। ২০১৩ সালে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ফ্রি কনফারেন্স সফটওয়্যার ওপেন কনফ (Open Conf) দিয়ে হয় এর আয়োজন। এরপর দুজন আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রজেক্ট হিসেবে শিক্ষকদের পরামর্শে নতুন একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করেন। সেই থেকে কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু তাদের। ফলশ্রুতিতে আসে প্রোকনফ (PROCONF)।

প্রোকনফ (PROCONF) কী

PROCONF-এ PRO শব্দটি এসেছে PROFESSIONAL থেকে এবং CONF শব্দটি এসেছে CONFERENCE থেকে। PROCONF হলো একটি কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং একটি গবেষণা প্রকল্প যেখানে কনফারেন্স চেয়ার সহজেই তার বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, সিম্পোজিয়াম, জার্নাল, বই, অনুদান ও প্রতিযোগিতা পরিচালনা করতে পারে। সিস্টেমটিতে গবেষক, পর্যালোচক, কনফারেন্স চেয়ার ও ট্র্যাক চেয়ার ব্যবহার করা হয়।

গবেষণা লেখকরা PROCONF-এর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কাগজপত্র জমা দেবেন এবং কাগজটি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে সক্ষম হবেন। পর্যালোচক কাগজটি পরীক্ষা করতে এবং কাগজটির পর্যালোচনা দিতে সক্ষম হবেন। ট্র্যাক চেয়ার প্রধানত পর্যালোচনাকারীদের সংগঠিত করবে এবং তার তত্ত্বাবধানে কাগজপত্র পরিদর্শন করতে সক্ষম হবে। সংক্ষেপে, কনফারেন্স চেয়ার তার সম্মেলন সম্পর্কে সবকিছু পরিচালনা করতে পারবেন।

PROCONF-এ একটি অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে যাতে গবেষকরা সম্মেলনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন এবং সহজেই সম্মেলন আয়োজকদের অর্থ প্রদান করতে পারবেন৷ PROCONF টিম ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক গবেষণাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।

যাদের হাত ধরে এসেছে প্রোকনফ।

প্রোকনফের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সৈয়দ মহসীন রেজা, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ টেকনোলজি অফিসার মাহফুজুর রহমান রাজু। নোয়াখালীর ছেলে রেজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (আইআইটি) পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এট এল পাসো থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং একই দেশের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভার থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণায় যুক্ত তিনি।

অন্যদিকে, ময়মনসিংহের ছেলে রাজু নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাবি আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে অধ্যাপনায় যুক্ত। এর আগে তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন টিকিটশালা.কম এবং এস-থ্রি ইনোভেট-এ।

প্রোকনফের যাত্রা শুরু ও সম্মেলনের আয়োজন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটিতে রেজা ও রাজুর পড়াশোনা তখন শেষের দিকে। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে তাদের থিসিসের পাশাপাশি একটি প্রজেক্ট বা রিয়েল ওয়ার্ক করা বাধ্যতামূলক ছিল। সেই প্রজেক্ট করতে গিয়েই তাদের মাথায় প্রোকনফের চিন্তা আসে। এরপর তারা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করেন। জাবি আইআইটি’র পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার ও সুপারভাইজার হিসেবে এ কাজে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন।

এ কাজে হাসনাত পারভেজ নামে তাদের এক বন্ধুও যুক্ত ছিলেন। তবে বিভিন্ন চাপে তিনি এ ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়েন। হাসনাত এখন ব্যাংকে চাকরি করেন। এর আগে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। সরাসরি না থাকলেও এ প্রজেক্টে তিনি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন বলে দুই বন্ধু জানান।

প্রোকনফের মাধ্যমে প্রথম কনফারেন্স হয় ২০১৪ সালে। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-এর আয়োজনে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। জাবি অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার এর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।

একই বিষয়ের ওপর পরের বছরই জাবি ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর বুয়েটও তাদের সম্মেলন এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে। এরপর আর থামতে হয়নি। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পা রাখে প্রোকনফ। ভারতে নারীবিষয়ক সম্মেলনের পর একই বছর দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় আরও দুটি সম্মেলন। ২০১৭ সালে সাতটি, ২০১৮ সালে চারটি, ২০১৯ সালে চারটি এবং ২০২০ সালে একটি সম্মেলন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় দুটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর মুজিব-১০০ আইডিয়া কনটেস্টও এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনটি সম্মেলন চূড়ান্ত হয়েছে। যার একটি দেশে, বাকি  দুটি বিদেশে। দেশের মধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন মেশিন ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস- ২০২২ শীর্ষক সম্মেলনও হবে প্রোকনফের মাধ্যমে।

এছাড়া এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইতালিতে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাপ্লাইড ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ইনফরমেটিকস- ২০২২ এবং পর্তুগালে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ডিজেবিলিটি, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেড টেকনোলজিস- ২০২২ অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরে।

প্রোকনফের গল্প শোনালেন প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা

প্রোকনফের সম্পর্কে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও সাইয়্যেদ মহসীন রেজা এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ টেকনোলজি অফিসার মাহফুজুর রহমান রাজুর সঙ্গে।

রেজা বলেন, আমরা আইআইটি বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ এবং তখন শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমাদের বিভাগে থিসিসের পাশাপাশি একটি প্রজেক্ট বা রিয়েল ওয়ার্ক করা বাধ্যতামূলক ছিল। সে অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজনের মতো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে মনোনিবেশ করি। তখন বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করা হলেও আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত কোনো সফটওয়্যার ছিল না। কেউ উদ্যোগও নেয়নি।

তিনি বলেন, প্রোকনফের মাধ্যমে আমরা প্রথম মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কনফারেন্সটি আয়োজন করি। এ কনফারেন্স করে আমরা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাই। ফলশ্রুতিতে আমরা দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও বেশ কয়েকটি কনফারেন্স করি। এখনও কনফারেন্স করার অফার পাচ্ছি।

রেজা বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের জন্য বিশ্বব্যাপী দুটি সফটওয়্যার খুবই প্রসিদ্ধ। এর একটি ইজি চেয়ার (Easy Chair) অন্যটি মাইক্রোসফট সিএমটি (Microsoft CMT)। আমি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। এখানে সার্ভার খরচ আমাদের দেশের তুলনায় কম। যুক্তরাষ্ট্রে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে আমি ইন্টার্নি করেছি। সার্ভার খরচ কীভাবে কমানো যায়, সেটা আস্তে আস্তে শিখছি।

তিনি আরও বলেন, কনফারেন্সের জন্য ২০০ পেপার হলে আমরা ফ্রি করে দেই। তবে ৫০০ পেপার হলে সার্ভার খরচ রাখতে হয়। কারণ, পেপারগুলো সার্ভারে সাবধানে রাখতে হয়। সেখানে টাকা খরচ হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ পেপার থাকলেও সার্ভার ফ্রি করে দেওয়া হয়, কারণ তাদের এখানে সফটওয়্যার অনেক আর সেখানে হাজারের বেশিও পেপার জমা পড়ে।

প্রোকনফের প্রতিষ্ঠাতা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি সফটওয়্যার দিয়ে কনফারেন্স আয়োজনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এটা কেন বলতে পারব না। আশা করব, এখন থেকে প্রোকনফ দিয়ে কনফারেন্স আয়োজনে তারাও আগ্রহী হবেন।

সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ টেকনোলজি অফিসার মাহফুজুর রহমান রাজু বলেন, আমাদের এখানে চারটি প্যানেল। Author Panel, Reviewer Panel, Track Chair এবং Chair Panel. আমাদের এখানে রিসার্চ পেপার সাবমিট করলে প্রথমে চেয়ার প্যানেল সেটা ট্র্যাক চেয়ারের কাছে পাঠায়, তারপর সেটা পাঠানো হয় রিভিউয়ার প্যানেলে। রিভিউয়ার চাইলে সেটাকে গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে। এরপর অথর প্যানেল দেখতে পারে সেটা গ্রহণ বা বর্জন হয়েছে কি না।

তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত প্রোকনফের মাধ্যমে ৩০টির মতো দেশি-বিদেশি কনফারেন্স করেছি। সবাই এটাকে ভালো বলেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়েছি, বিদেশেও কনফারেন্স চলমান আছে। আস্তে আস্তে এটাকে আন্তর্জাতিক মানের করতে চাচ্ছি।

শিক্ষকদের চোখে প্রোকনফ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালক অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার বলেন, রেজা ও রাজুর আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রজেক্ট ছিল এটি। ২০১৪ সালে আমরা একটি কনফারেন্স করি, যেখানে এমন একটি সিস্টেমের দরকার ছিল। এর চিন্তা থেকেই সিস্টেমটা ডেভেলপ করা।

তিনি বলেন, একটা সফটওয়্যার পরিচালনার জন্য বছরভিত্তিক সার্ভার খরচ, ব্যান্ডউইথ চার্জ, এসএমএস চার্জ, ইমেইলিং চার্জ দিতে হয়। এক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র সার্ভার খরচটা নেয়। এটাও নির্দিষ্ট নয়। যে যেমনটা দেয়। এ সফটওয়্যারের গ্রাহক যেভাবে চান, সেভাবেই কাস্টমাইজ করে দেওয়া হয়। এটাই বড় সুবিধা, যা অন্যান্য সফটওয়্যারে নাই।

তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়ে এ সফটওয়্যারে কিছু ফিচার অ্যাড করানো হবে। সে হিসাবে বলতেই হয়, এ সফটওয়্যারের ভবিষ্যত আছে। আমরাও এর প্রসার চাই। কারণ, এটা দেশের প্রোডাক্ট। দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় বা অর্গানাইজাররা এটা নিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। আমার ধারণা, ভবিষ্যতে এটা বড় ধরনের প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।

জাবি অধ্যাপক বলেন, রেজা ও রাজু যেহেতু লোকবল নিয়োগ করেনি, সে কারণে এর কিছু সার্ভিস স্লো। যারা এ সফটওয়্যার নিয়ে গত ৬ বছরের বিভিন্ন সময়ে কনফারেন্স করেছে, তাদের ফিডব্যাক ভালো। তবে নতুনদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ইউজিসির একটা কনফারেন্সে আমি টেকনিক্যাল সেক্রেটারি হিসেবে ছিলাম। খুব করে চেয়েছিলাম সেখানে প্রোকনফের ব্যবহার হোক। কিন্তু জাবির-ই একজন শিক্ষক এটাকে পছন্দ করলেন না এবং এ সফটওয়্যার ব্যবহার না করার বিষয়ে মতামত দেন। আমাদের দেশে এটা একটা সমস্যা। দেশীয় প্রোডাক্ট কেউ ব্যবহার করতে চান না। আমরা নিজেরা যদি দেশীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার না করি, তাহলে তো এর প্রচার ও প্রসার হবে না।

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন বলেন, আমরা দুজনকেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটি প্রজেক্ট দেই। কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোনো কাজ ছিল না। বিশেষ করে রিভিউয়ার ও রিসার্চারদের সাহায্য করতে পারে এমন কোনো সফটওয়্যারও ছিল না। ২০১৩ সালের দিকে বাংলাদেশে প্রথম ওপেন কনফ দিয়ে আমরা কনফারেন্স করি।

তিনি বলেন, এ কনফারেন্স করতে গিয়ে আমরা পেপার ম্যানেজমেন্ট, রিভিউ করা, মার্কস দেওয়া, মূল্যায়ন করা, সার্টিফিকেট দেওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু আমাদের সামনে পড়ল। পরবর্তীতে ওদের ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্টে আমি বললাম এটাকে তোমরা আমাদের মতো করে বানাও। তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এটি এখন একটি সুউচ্চ জায়গায় পৌঁছে গেছে।

তিনি আরও বলেন, রেজা ও রাজু এ সফটওয়্যারে ফিচার, ব্যাকগ্রাউন্ড টেকনোলজি নিয়মিত আপডেট করে যাচ্ছে। এখন অ্যামাজনের (মার্কিন ইলেকট্রনিক বাণিজ্য কোম্পানি) সঙ্গে এটাকে ট্যাগ করানোর চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনালি এটা কমার্শিয়াল পর্যায়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র সফটওয়্যার যা ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে।

কনফারেন্স আয়োজকদের চোখে প্রোকনফ

প্রোকনফের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। প্রোকনফ সম্পর্কে জানতে চাইলে চুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন বলেন, ইটস অ্যা গুড ওয়ান। প্রোকনফ বাংলাদেশের একটা ব্র্যান্ড হিসেবে ডেভেলপড হওয়ার সুযোগ আছে। ২৪ ঘণ্টা লাইভ সাপোর্টসহ এখানে অনেক কাস্টমাইজড সুবিধা আছে, যা ব্যবহারকারীরা উপভোগ করতে পারেন। আমি দুবার এ সফটওয়্যার ব্যবহার করেছি। মেজর কোনো সমস্যা দেখিনি।

তিনি বলেন, বিদেশি প্রোডাক্টের প্রতি আমাদের একটি দুর্বলতা কাজ করে। ইজি চেয়ার বা সিএমটি— এগুলো ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়াটা এখনও সম্ভব নয়। কারণ, প্রোকনফ তো এখনও নতুন। দেশি প্রোডাক্ট ব্যবহার না করলে এটি এগোবে না। দেশে কনফারেন্সের সংখ্যা বাড়লে ইন্টারন্যাশনালিও এর কদর বাড়বে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আরও বেশি কনফারেন্স হওয়া উচিত— মত দেন তিনি।

প্রোকনফ নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা

এ বিষয়ে সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা মহসিন রেজা বলেন, আমরা গবেষকদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে চাই যাতে তারা তাদের গবেষণা জমা, বার্তা সম্মেলন কর্তৃপক্ষকে ট্র্যাক করতে পারে এবং সম্মেলনের সময়সূচি দেখতে সক্ষম হয়। এছাড়া আমরা আসন্ন সংস্করণে PROCONF-এ একটি শক্তিশালী সুরক্ষা স্তর তৈরি করতে চাই যাতে কেউ সিস্টেমটি হ্যাক করতে না পারে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে গবেষকরা তাদের অপ্রকাশিত গবেষণায় গোপনীয়তার অধিকার রাখেন এবং আমরা আমাদের সর্বোত্তমভাবে সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে নিয়ে যেতে পারলে আমাদের সফটওয়্যার বিশ্বব্যাপী রাজত্ব করবে— এটাই আমাদের প্ল্যান।

সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজুর রহমান বলেন, অদূর ভবিষ্যতে আমরা একটি গবেষক দল তৈরির পরিকল্পনা করছি। যেখানে নতুন গবেষকরা গবেষণার নানা সমস্যা, প্রশ্ন ও পদ্ধতিগুলো শেয়ার করতে পারেন এবং অন্য গবেষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন। এটি ছাড়াও আমাদের দল গবেষণা সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণের জন্য একটি শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কাজ করছে।

আমাদের প্ল্যান হলো যারা কনফারেন্স করতে চান তাদের কাজ সহজ করা। একটি রিসার্চ কমিউনিটি তৈরি করা। রিসার্চনির্ভর লার্নিং প্ল্যাটফর্ম করা যেখানে বাংলাদেশি রিসার্চাররা লার্নিং প্লাটফর্ম পাবেন। অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে ফ্রি-তে রিসার্চ টিপস পাবেন। আমরা এটাকে ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে পেরেছি। এর পরিসর আরও বিস্তৃত করতে চাই। ভবিষ্যতে আমরা সার্ভার খরচ একেবারে ফ্রি করে দেব।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়