ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দাজ্জালের আবির্ভাব ও তার পরিচয়

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২১  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নাওয়াস বিন সামআন (রা.) বলেন, ‘একবার হজরত মুহাম্মদ (সা.) সকালে আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করেন। তিনি তার ফেতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম, নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়তো অবস্থান করছে। আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে চলে গেলাম...।

কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তার কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি হলো? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন, তা শুনে আমরা ভাবলাম, হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভেতরেই রয়েছে। নবিজি বললেন, দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে, তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট।’

কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমন কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সব মুমিন জীবিত থাকবে, তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।

ইবনে উমার (রা.) হজরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, একদা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলবো, যা কোন নবীই তার উম্মাতকে বলেননি। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।

দাজ্জালের আগমনে মুসলমানদের যে অবস্থা হবে

দাজ্জালের আগমনের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভালো থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবত এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।

দাজ্জালের পরিচয়

দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফেতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফেতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন, মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোঁকায় পড়বে না।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু। দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোনো সন্তান থাকবে না।

দাজ্জালের যে চোখ কানা থাকবে

বিভিন্ন হাদিসে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদিসে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদিসে আছে তার ডান চোখ অন্ধ হবে। আবার কোন হাদিসে আছে তার বাম চোখ হবে অন্ধ। মোটকথা তার একটি চোখ দোষিত হবে। তবে ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদিসগুলো বুখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা দাজ্জালের অন্যান্য লক্ষণগুলো কারো কাছে অস্পষ্ট থেকে গেলেও অন্ধ হওয়ার বিষয়টি কারো কাছে অস্পষ্ট হবে না।

দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবে

দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের লেখা থাকবে। অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে 'ক্বাফ, ফা ও রা' এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। অপর বর্ণনায় আছে, শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। মোটকথা আল্লাহ মুমিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফের ও মুনাফেক লোক তা দেখেও পড়তে পারবে না। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।

দাজ্জালের ফেতনাসমূহ ও তার অসারতা

আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফেতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে, যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে, যে সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।

দাজ্জাল নিজেকে প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, পশ্রাব-পায়খান করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভেতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান। সে কীভাবে রব্ব ও আল্লাহ হতে পারে! একজন সত্যিকার মুমিনের মুমিনের বিশ্বাস হলো, মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়