ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জুমার দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০  

ছবি: সূরা কাহফ

ছবি: সূরা কাহফ

পবিত্র কোরআন মজিদের ১৮ নম্বর সূরার নাম 'আল-কাহফ'। এই সূরায় রুকু সংখ্যা ১১টি এবং আয়াত ১১০টি। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই এই সূরাকে 'মাক্কী সূরা' বলা হয়। 

পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরা রয়েছে। এর মধ্যে একটি সূরার নাম সূরা কাহফ। সূরা কাহফ পবিত্র কোরআনের একটি ফজিলতপূর্ণ আলোচিত সূরা। বিশেষ তাৎপর্যের কারণে জুমার দিন এই সূরা পড়তে হয়। এই সূরায় সূক্ষ্ম চারটি ফিতনার কথাও বর্ণিত হয়েছে।

ফিতনা চারটি হলো—

১। দ্বিনের ফিতনা অর্থাৎ কাহফ বা গুহাবাসীর ঘটনা। 

২। সম্পদের ফিতনা। এটি হলো, দুই উদ্যানের মালিকের ঘটনা। 

৩। ইসলাম বা জ্ঞানকেন্দ্রিক ফিতনা, অর্থাৎ খিজিরের সঙ্গে মুসা (আ.)-এর ঘটনা। 

৪। রাজত্বের ফিতনা। এর দ্বারা জুলকারনাইনের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। 

এই চার ফিতনাই দাজ্জালের মধ্যে পাওয়া যাবে। যে ব্যক্তি পবিত্র জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, মহান আল্লাহ তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।

সূরা কাহফ তিলাওয়াতে হাদিস শরিফে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ফজিলত বর্ণিত আছে। ফজিলত তিনটি হল- 

১। রহমত ও প্রশান্তি বর্ষণ। জনৈক সাহাবি নিজ ঘরে বসে পবিত্র কোরআনে কারিম তিলাওয়াত করছিলেন, এদিকে ঘরের মধ্যে তার একটি পোষা প্রাণী লাফালাফি করছিল। তখন তিনি আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়ে প্রাণীটির থেকে স্বস্তি পাওয়ার দোয়া করলেন।

হঠাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। লোকটি ঘটনাটি আল্লাহর রাসূলের কাছে বর্ণনা করলেন। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, কোরআন পাঠ রহমত বর্ষণের কারণ। অর্থাৎ হঠাৎ মেঘ থেকে বৃষ্টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত  ও প্রশান্তি। এ সময় আসমান থেকে ফেরেশতারা নেমে আসেন। এটি দেখেই প্রাণীটি ছোটাছুটি করছিল। ইমাম মুসলিম (রা.) এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তার সহিহ মুসলিম শরিফে স্বতন্ত্র বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

২। কিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি) প্রাপ্ত হওয়া। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য নূর হবে।

৩। দাজ্জাল থেকে মুক্তি। দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড়। প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন।

এই ফজিলত অর্জন করতে সম্পূর্ণ সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা জরুরি কি না, এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা এসেছে। এ বিষয়ে মূলকথা হলো, সম্ভব হলে জুমার দিন পুরো সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, অন্যথায় সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত তিলাওয়াত করবে।

তাফসিরের কিতাবাদিতে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, পুরো সূরাটি একসঙ্গে নাযিল হয়েছে এবং নাযিলের সময় সত্তর হাজার ফেরেশতা জিবরিল আমিনের সঙ্গে এসেছিলেন। হাদিসে এই সূরাটির অনেক ফযিলত এসেছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফ যথাযথভাবে তিলাওয়াত করবে, এটি তার জন্য কিয়ামতের দিন নুর (আলো) হবে। (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং: ২২২১)

বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাতে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার কাছে রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঘিরে ফেলে। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার খুব কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়াটি ছোটাছুটি করতে লাগল। সকালে ওই ব্যক্তি রাসূলের কাছে এসে রাতের ঘটনা জানাল। তিনি বললেন, ওটা ছিল 'সাকিনাহ' (আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত), যা কোরআন তিলাওয়াতের বরকতে নাযিল হয়েছিল। (বুখারি, আসসাহিহ : ৫০১১; মুসলিম, আসসাহিহ : ৭৯৫)

নাওয়াস ইবনু সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পাবে, সে যেন সূরা কাহফের শুরুর অংশ পাঠ করে।' (মুসলিম, আসসাহিহ : ২৯৩৭)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এটি তার জন্য নুর (আলো) হবে।' (আলবানি, সাহিহ আলজামি : ৬৪৭০)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়