ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাফরান চাষের সম্ভাবনাময় পদ্ধতি উদ্ভাবন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৪ অক্টোবর ২০২২  

জাফরান’ চাষের সম্ভাবনাময় পদ্ধতি উদ্ভাবন শেকৃবি গবেষকের

জাফরান’ চাষের সম্ভাবনাময় পদ্ধতি উদ্ভাবন শেকৃবি গবেষকের

জাফরান। প্রাচীন ফার্সি শব্দ জার্পারান থেকে আগত এই নামটি। যার অর্থ ‘সুবর্ণ পাপড়ি দিয়ে মোড়া’। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মশলাগুলোর একটি। এর পরিচিতি আছে  ‘রেড গোল্ড’ বা লাল সোনা নামেও। এ ফসলের আদিস্থান গ্রীসে হলেও শীতপ্রধান কাশ্মীর, ইরানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর চাষ হয়। তবে বাংলাদেশে এর চাষ হয় না বললেই চলে।

তবে বাংলাদেশের মাটিতেই মসলার ‘রাজা’ এই জাফরান চাষের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক আ ফ ম জামাল উদ্দিন। 

সম্প্রতি তাপমাত্রা ও গ্রোথ মিডিয়ার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে ভার্টিক্যালি এরোপনিক্স পদ্ধতিতে জাফরানের ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষক ও গবেষক। তা থেকে সফলভাবে সংগ্রহ করেছেন লাল রঙের স্টিগমা (গর্ভমুণ্ড)। এটাই মূলত জাফরান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অধ্যাপক আ ফ ম জামাল উদ্দিন জানান, উন্মুক্ত ও উপযুক্ত পরিবেশেও জাফরান চাষ বেশ ব্যয়বহুল। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে উৎপাদন খরচ আরেকটু বেশিই। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আবহাওয়াজনিত কারণে ফসল মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর বছরে একাধিকবার ফলন ওঠানো যাবে।

তাই এই গবেষক মনে করেন, বিশ্বব্যাপী জাফরানের বিপুল চাহিদা ও দামের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সাপেক্ষে বাংলাদেশেই এর লাভজনক বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব।

অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আরো বলেন, শীতপ্রধান এলাকাগুলোর প্রচলিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশে জাফরান উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কারণ বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির নিচে করম (কন্দ) দ্রুত পচে যায়। আবার মাটির আর্দ্রতার কারণে গাছের ভালো বৃদ্ধি হলেও ফুল আসে না।

জাফরান চাষের মাটি তৈরিতে ৬ pH এর বেলে দো-আঁশ মাটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী। তবে গ্রিন হাউজে মাটি, কম্পোস্ট ও বালির অনুপাত ২:২:১ করে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন এই গবেষক। তাছাড়াও দেশে চাষ উপযোগিতা আনতে জাফরান কন্দের ভার্নালাইজেশন করে নিতে হয় প্রথমেই। 

জাপান থেকে জাফরানের পাঁচ শতাধিক করম আনান এই গবেষক। প্রথমে সেগুলো ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে রোপণের উপযোগী করা হয়। পরে তা ঘরের মধ্যে প্লাস্টিক ও টিনের তৈরি ট্রেতে রোপণ করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো গাছেই ফুল এসেছে।

অধ্যাপক জামাল উল্লেখ করেন, ‘সাধারণত জাফরান চাষে বিস্তীর্ণ জায়গার দরকার হয়। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি অ্যারোপনিক্স পদ্ধতিতে (বাতাসের মাধ্যমে গাছের খাদ্য উপাদান সরবরাহ) একটা ছোট আকারের ঘরের মধ্যেই এক হেক্টর সমপরিমাণ জায়গার জাফরান উৎপাদন করা সম্ভব। কারণ এই পদ্ধতিতে রোপণ করা গাছের ট্রেগুলো উলম্বভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। জায়গা লাগে কম।’

‘থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জাফরান উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু ওরা এখনও সফল হয়নি। বাংলাদেশে আমরা যতটুকু সফলতা অর্জন করেছি, তাতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনেও যাওয়া যাবে’, বলে জানান শেকৃবির এই গবেষক। 

কোনো প্রতিষ্ঠান দেশেই জাফরান চাষ করতে চাইলে জাফরান এর করম (কন্দ, corm-propagating material) আমদানি করে আনলে তাদের চাষ পদ্ধতিতে সম্পর্কে অবগত করবেন বলেও জানান অধ্যাপক জামাল। এজন্য দেশেই জাফরান চাষে পৃষ্ঠপোষকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

উল্লেখ্য, দামী এই মশলার রয়েছে এন্টিওক্সিডেন্ট ক্ষমতা। ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবেও এর ব্যাবহার রয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক, আলসার দূর করা, ইনসোমিয়া জনিত সমস্যা, গর্ভধারনের সময় হরমন জনিত সমস্যায়ও কার্যকর ভূমিকা রাখে রেড গোল্ড খ্যাত জাফরান।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়