ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

চিন্ময় রায়: টালিউড চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য অভিনেতা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২০ মার্চ ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

স্বনামধন্য টালিউড অভিনেতা চিন্ময় রায়। চলচ্চিত্র, নাটক থিয়েটার, টিভি নাটক সব ক্ষেত্রেই ছিলেন সমান পারদর্শী। শুরুটা মঞ্চ নাটক দিয়ে হলেও অভিনেতা হিসেবে ছিলেন সফল। 

১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি  বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ফিল্ম দুনিয়ায় সত্তরের দশকে পা রাখেন তিনি। অচিরেই সে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠেন।

বহু সিনেমায় তার কমেডি চরিত্রে অভিনয় আজও মনে রেখেছেন মানুষ। বড় পর্দায় ‘চার মূর্তি’ বিশেষ উল্লখযোগ্য। এই ছায়াছবিতে তিনি সাহিত্যিক নারায়ান গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

এ ছাড়াও বসন্ত বিলাপ, ধন্যি মেয়ে, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ননী গোপালের বিয়ে, ঠগিনীর মতো অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। গুগাবাবা ছবিতে হাল্লা রাজার গুপ্তচরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

“ওই পুকুরপাড়ে বসে শিবানীকে আমি বলব: ‘আমাকে একবার বলো উত্তমকুমার।’ শিবানী তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলবে: ‘উত্তমকুমার’। 
শুটিংয়ে শুরু হল, আমি আমার ডায়ালগ ঠিক বলছি, কিন্তু শিবানী শুধু ‘উত্তমকুমার’ কথাটা কিছুতেই বলতে পারছে না, আর শট এন-জি হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ক্রমশই ভিড় বাড়ছে, শুটিংয়ে বন্ধ হওয়ার জোগাড়।

বললাম ‘বি সিরিয়াস শিবানী, আমাদের সিকোয়েন্সটাই কিন্তু বাদ পড়ে যাবে।’ এবারে শিবানী ঠিকমতো বলল। পরে শিবানীকে প্রশ্ন করে বুঝলাম আমাকে ‘উত্তমকুমার’ কল্পনা করে কথাটা বলতে হচ্ছে তো, তাই হোঁচট খাচ্ছিল!” 

১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘বসন্ত বিলাপ’। মেদিনীপুরে শুটিং হয়েছিল আর উপরের সেই বিখ্যাত সংলাপটি বলেছিলেন শ্রী চিন্ময় রায় তার পর্দার প্রেমিকা শিবানী বসু’কে। যে সংলাপটি কাল্ট হয়ে আছে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।

সাগিনা মাহাতো ছবির সেট পড়েছিল কলকাতায়। শুটিংয়ের ডেট অনুযায়ী সায়রা এলেন কলকাতায়। এমন নামী, সুন্দরী হিরোইন, বম্বে থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে।

বিপরীতে উত্তম, সৌমিত্র থাকবেন, এরকম ধারণা থাকে সবার। নিদেনপক্ষে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বা সমিত ভঞ্জের কেউ একজন। কিন্তু পরিচালক নাম ঘোষণা করলেন চিন্ময় রায়ের।

তখনও চিন্ময়-সায়রা মুখোমুখি হননি। যখন দেখা হল, সায়রার চোখ তো ছানাবড়া। বলেই ফেললেন, “ইয়ে মেরা হাজ়ব্যান্ড?” তারপর প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার জোগাড়।সায়রা বানু  মাথা ঘুরে পড়লেন টেবিলে। 

সবাই মিলে দৌড়োদৌড়ি। চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে হল। জ্ঞান ফিরলে তিনি বললেন, “আমি এর সঙ্গে অভিনয় করতে পারব না। মুডই পাব না।” 

খারাপ লাগা নিয়েই সেদিন রিহার্সাল শুরু করলেন চিন্ময় রায়। পরিচালক তপন সিনহার কাছেও করলেন, নিজে নিজেও করলেন। তারপর এল শটের সময়। শট তো হল। সায়রার সঙ্গেই হল।

শটের শেষে তপনবাবু চিন্ময় বাবুকে বললেন, “কাট। ভালো শট হয়েছে।” চিন্ময়দারও মনে হয়েছিল শটটা ভালোই দিয়েছেন তিনি। আর সায়রা? 

শটের পর বাইরে দাড়িয়েছিলেন। দেখলেন, সায়রা বানু ফ্লোর থেকে বেরিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছেন। এসে তারই সামনে দাঁড়ালেন। হাত বাড়িয়ে বললেন, “হায় চিনু। ইউ আর হ্যান্ডসাম।” 

“চিনুদা”-র রিঅ্যাকশন- “সেদিন তো আমিই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।” 

কখনো ভাবেননি অভিনয় জগতে পা রাখবেন। ঘনিষ্ঠ মহলে এমনটাই বলেছিলেন চিন্ময় রায়। তবে ম্যাট্রিকে থার্ড ডিভিশনে পাশ করা সেই আপাতনিরীহ চেহারার মানুষটিই কখন যেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম সারির কমেডিয়ান হয়ে উঠলেন। 

প্রথম ছবি ছিল তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’।

নান্দীকারে হাতেখড়ি হয় অভিনয়ের। পরবর্তীতে নাটক পরিচালনা করেছিলেন, ছবি পরিচালনা করার খুব ইচ্ছে ছিল তার। শেষ জীবনে ছবি পরিচালনা করার কথাও ভাবতেন।

কিন্তু সুযোগ পেলেন না। ১৭ মার্চ, ২০১৯ সালে কলকাতায় মারা যান তিনি। তার এই আকস্মিক প্রয়াণ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন বিদগ্ধজনেরা।

বিদগ্ধ হাস্য অভিনেতারা সেই স্বর্ণযুগের দিন থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন শ্রী চিন্ময় রায়। বলা চলে শেষতম।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়