ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সম্মানজনক কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০৯:৩৬, ৩১ জুলাই ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে ফেরত আসা প্রবাসীদের সম্মানজনক কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রবাসীরা এতদিন আমাদের দিয়েছেন। এখন তাদেরকে আমাদের দিতে হবে। তারা যাতে পুনরায় সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসিত হতে পারে, সেজন্য আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। তারা যেন সম্মানজনক পেশায় যুক্ত হতে পারে, তার জন্য সহায়তা দিতে হবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভায় অংশ নেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এম এ মান্নান জানান, একনেকে আজ দুই হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ৪২৫ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। অনুমোদিত ১০ প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন প্রকল্প এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক’ শীর্ষক যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর আওতায় কোভিডের কারণে বিদেশ ফেরত দুই লাখ কর্মীর প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৪২৫ কোটি টাকা বিশ্ব ব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী আরও বলেন, নানা কারণে অভিবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের উন্নয়নে দীর্ঘ সময় তারা কাজ করেছেন। এখন সময় এসেছে এসব দক্ষ কর্মীদের দেশের জন্য কাজে লাগানোর।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, কোভিডের প্রভাবে প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে দুই লাখ শ্রমিককে এই প্রকল্পের আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে। কোভিডের কারণে যেসব অভিবাসী দেশে ফেরত এসেছেন, প্রকল্পের আওতায় সেই প্রত্যাগত কর্মীদের তথ্যসমৃদ্ধ ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খান বলেন, প্রথম পর্যায়ে দুই লাখ শ্রমিককে সহায়তা দেওয়া হবে। তবে পরবর্তীতে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।

শরীফা খান বলেন, প্রত্যেক কর্মীকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে যেটা দেওয়া হবে, এতে শ্রমিকদের প্রাথমিক খরচ  মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদনশীল কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয় সনদ পেতে সহায়ক হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেল্প ডেস্ক থেকে চার লাখ ৮০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত আসার তথ্য পাওয়া গেছে। 

প্রকল্পের আওতায় কোভিডের প্রভাবে বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাছাই করা হবে। এরপর স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সনদের ব্যবস্থা করে দেশে-বিদেশে চাকরি পেতে সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মীদের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও ঋণ পেতে সহযোগিতা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায় উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

মোট ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস এবং পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন যে, জনসাধারণ ও যানবাহনের নিরাপদ এবং নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে নতুন সড়কে আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ইউলুপ যথাযথভাবে নির্মাণ করতে হবে।

মোট ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেদেশের সব ধরনের নিয়ম মেনে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় তিনি স্মরণ করেন যে, স্বাধীনতার পর ওইসিডিভুক্ত দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকার ব্যয় বৃদ্ধি করে জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পরিচালনা কার্যক্রম রাজস্ব বাজেটের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এর ফলে অনেক বেশি সংখ্যক নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।

একনেক ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পনগরীতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের পরামর্শ দেন।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো-৪৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রণ ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্প, ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চের সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং ১১২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন) প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউলুপ, আন্ডারপাস ও ওভারপাসের কথা চিন্তা করে এখন থেকে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে। এতে সড়ক ও মহাসড়কে শৃঙ্খলা আসবে। মানুষও উপকৃত হবে।

এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বালুমহাল নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, দেশের যত্রততত্র বালু ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এ ধরনের ব্যবসা নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বালু ব্যবসাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।

সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়