ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নির্মাণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ও বেতাগি ইউনিয়নের গুনগুনিয়া সীমান্তবর্তী ১১০ একর পাহাড়ি জমিতে উপশহর গড়তে চেয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এ জন্য পাহাড়ি ওই জমিটি সমতলও করা হয়। নির্মাণ করা হয় নিরাপত্তা দেয়াল।

উপশহরের প্রবেশপথ চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের তিন চৌদিয়া এলাকায় নির্মাণ করা হয় রাজকীয় তোরণ। দেড় কিলোমিটার ভেতরে অবকাশ যাপন কেন্দ্রের সামনে গড়ে তোলা হয় আরও একটি তোরণ। দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে প্রবেশ মুখেও করা হয় রাজকীয় তোরণ।

আর এসব কাজে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ২০০৪ সালে উপশহর পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চলে যায় শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট। তবে প্রায় ১৮ বছর পর সেই পরিত্যক্ত উপশহরে মাল্টিপারপাস স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক মানের সুপার স্পেশালাইজড নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনে এগিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে পরিত্যক্ত ওই উপশহরে হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগও।

শুক্রবার চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গত বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে।

এই দলে স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এডিজি মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তীও ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার আলী হুমাইদ আলদিরি ও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ মুবারক আল মেহরিবি রাঙ্গুনিয়া সফর করেন।

এ সময় হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে স্থানীয়দের আগ্রহে অভিভূত হন তারা।

তারও আগে ২০১৪ সালে আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থা আরটেক এর প্রধান প্রকৌশলী আসাদ আল খিলালি ও প্রকৌশলী ওয়ায়েল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময় তারা ১১০ একরের প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতাল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন।

ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ১১০ একর পরিত্যাক্ত জমিতে প্রাথমিকভাবে ৬৪ শয্যা দিয়ে হাসপাতাল শুরু হবে। ক্রমে তা ১২০ শয্যায় উন্নীত হবে। আধুনিক গাইনি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দুজন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে।’

তিনি জানান, অপর অপারেশন থিয়েটার ব্যবহৃত হবে জেনারেল সার্জারিতে। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতালগুলোর মতো এই হাসপাতালেও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

উপশহরের নিরাপত্তারক্ষী কমান্ডার আবু তালেব জানান, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে চট্টগ্রামে আসেন তখনকার আরব আমিরাতের বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এ সময় তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে রাঙ্গুনিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গাটি দেখে সেখানে একটি প্রাসাদ ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

আমিরাতের বাদশার পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকী মূল্যে তাকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় ১১০ একর জমি হস্তান্তর করেন। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিরামন অ্যাসোসিয়েটস উপশহর নির্মাণের কাজ শুরু করে।

১৯৯৭ সালের শেষের দিকে আরব আমিরাতের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল প্রথম পর্যায়ে কাজ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তারা নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও কারচুপি দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় উপশহরের নির্মাণকাজ। ২০০৪ সালে উপশহর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৫ সালে মারা যান সুলতান আল নাহিয়ান।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়