ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৫ ১৪৩০

গুম হওয়া বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত খায়রুজ্জামান আটকের পর সেখানে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমেরও সন্ধান পাওয়া গেছে বলে মালয়েশিয়ার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মালয়েশিয়ার দুটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে।

তবে মালয়েশিয়া সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। চৌধুরী আলম বিএনপির একজন নেতা, তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন এবং সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিএনপির সময় তিনি একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন পল্টন, মতিঝিল, মালিবাগ, শান্তিনগর এলাকায়। আর এই সময় তার কথায় সবকিছু হতো। কোন ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুই করার ছিল না। চৌধুরী আলমের কথাই সেখানে আইন ছিলো। সেই চৌধুরী আলম ২০১০ সালের ২৪শে জুন ইন্দিরা রোড থেকে নিখোঁজ হন।

‘মায়ের ডাক’ যে গুমের তালিকা প্রদান করেছে সে গুমের তালিকায় চৌধুরী আলমের নাম রয়েছে। মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, চৌধুরী আলমকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা উঠিয়ে নিয়েছে এবং তাকে গুম করা হয়েছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বারবার বলে এসেছে, চৌধুরী আলমের ব্যাপারে তারা কোনো কিছুই জানেনা।

বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন সময় দাবি করা হয়েছিল, চৌধুরী আলম দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে যে সব বিএনপি নেতা মালয়েশিয়ায় গেছেন, তারাও একাধিকবার বলেছেন চৌধুরী আলমের সাথে তাদের কথা হয়েছে। এছাড়া এই এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য চৌধুরী আলম মাঝে মাঝেই বাংলাদেশে ফোন করেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ কথা স্বীকার করেনি। চৌধুরী আলমের কথিত গুমের বিষয়টিকে মায়ের ডাক এবং বাংলাদেশের সুশীল বুদ্ধিজীবীর একটি অংশ ফলাও করে প্রচার করেছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু এখন তার মালয়েশিয়ায় অবস্থান বিষয়ে কিছু ক্লু পেয়েছে সেখানকার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এখন তার পরিচয় সঠিক কি না, সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ এর ৩রা নভেম্বর জাতির সূর্যসন্তান চার নেতা- সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে।

সেই জেল হত্যা মামলার আসামী এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানকে গত বুধবার আটক করে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মালয়েশিয়ার আমপাং সেলেঙ্গা নামক এলাকায় ১১ নম্বর ব্লকের ২০/২ এর ৭ নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে আটক করা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে এবং অবৈধ অভিবাসীর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মালয়েশিয়া সরকার জানায়। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রিটার স্বামী খায়রুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। তিনি যে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এ সম্পর্কে অনেকে বললেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, শুধু খায়রুজ্জামান একা নয়, এরকম বহু ব্যক্তি মালয়েশিয়া আত্মগোপন করে আছে। যাদেরকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুঁজে বেড়াছে। এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

খায়রুজ্জামানের গ্রেপ্তারের পরপরই মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, আরও এক পলাতক ব্যক্তির সন্ধান তারা পেয়েছেন, যার নাম ধারণা করা হচ্ছে- চৌধুরী আলম। তবে পরিচয় যাচাই-বাছাই করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গুম নিয়ে যে অভিযোগগুলো প্রায়শ করা হয়, সেই অভিযোগগুলো যে আদৌ সত্য নয় এবং প্রায় পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার, তা বিভিন্ন সময়ে একে একে প্রকাশিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর ঘটনা এবং এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধারের ঘটনায় এটা মোটামুটি পরিস্কার।

সর্বশেষ চৌধুরী আলমের ঘটনার পর আবারও প্রমাণ হয়েছে, গুম নাটকটিও বিএনপি-জামায়াত জোটের সৃষ্টি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়