ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৪ ১৪৩০

গিবত রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৬ মার্চ ২০২৩  

গিবত রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে

গিবত রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন করে

গিবত (পরনিন্দা) ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে এ অভ্যাসের ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা : হুমাজাহ, আয়াত : ১)

পবিত্র রমজান মাসে এই মহাব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা মুমিনের জন্য আবশ্যক। গিবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও গিবত হয়। গিবত করা ও শোনা দুটিই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় ধরনের মানুষের গিবত করা হারাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ কোরো না এবং পরস্পর গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (হুজুরাত, আয়াত : ১২)

এখন কথা হলো গিবত কাকে বলে? অনেকের মনে হতে পারে বাস্তবে যদি কারো মধ্যে কোনো দোষত্রুটি থাকে সেটা চর্চা করলে গিবত হয় না। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) গিবতের সংজ্ঞা বাতলে দিয়েছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, গিবত কী? তিনি বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়।’ পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বলেন, ‘তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গিবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৪)

হাদিস শরিফে গিবতকে ব্যভিচার থেকে নিকৃষ্ট পাপ বলা হয়েছে। গিবতের কারণে কবরে শাস্তির কথাও উল্লেখ আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ দুজন কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় কোনো গুনাহের কারণে কবরে তাদের আজাব দেওয়া হচ্ছে না। এই কবরবাসী প্রস্রাব করার সময় সতর্ক থাকত না। আর ওই কবরবাসী গিবত করে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দুই টুকরা করে এক টুকরা এক কবরের ওপর এবং এক টুকরা অন্য কবরের ওপর গেড়ে দিলেন। তারপর বলেন, এ ডালের টুকরা দুটি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের শাস্তি কমিয়ে দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০৫২)

আর রোজা রেখে গিবত করা তো আরো ভয়াবহ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য মতে, রোজা রেখে গিবত করলে রোজা পুণ্যহীন হয়ে যায়। রোজার মাহাত্ম্য বিনষ্ট হয়। এ বিষয়ে সতর্ক করতে গিয়ে নবীজি বলেন, যারা রোজা রেখেও এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবে না, তাদের রোজা আল্লাহর প্রয়োজন নেই। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায় কথন (গিবত, মিথ্যা, গালাগাল, অপবাদ, অভিশাপ ইত্যাদি) এবং ওই বিষয়ে আমল পরিত্যাগ না করে, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৮৯)

তাই রোজা রেখে মানুষের দোষ চর্চা করা, অন্যকে গালি দেওয়া, অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি সব ধরনের নিকৃষ্ট কাজ ত্যাগ করা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়