ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ‘ঢাকের হাট’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১১ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকি আছেন, আছেন বায়নাকারী আর শারদ বাতাসে আছে উৎসবের হাওয়া। বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত মূর্ছনার সঙ্গে শত শত মানুষের পদচারণায় জমে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির ঐতিহ্যবাহী ‘ঢাকের হাট’।

মহাষষ্ঠী পূজোর মধ্য দিয়ে আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর সেখানে ঢাকের আওয়াজ ছাড়া পূজোর কোনো আনন্দই হবেনা। সেই আনন্দকে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে ঢাকের আওয়াজ। ঢাক ভাড়া নিয়ে পূজোর পাঁচটি দিন পূজা মণ্ডপগুলো থাকবে উচ্ছ্বসিত। 

ঐতিহ্যকে লালন করে প্রতি বছরই জাকজমক থাকে কিশোরগঞ্জের ঢাকের হাট। জেলার কটিয়াদি উপজেলা সদরে এমন হাটের আয়োজন চলছে কয়কে’শ বছর ধরে। যে হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরের বাদকরা তাদের বাদ‌্যযন্ত্র নিয়ে হাজরি হন। এই হাটে বাদ‌্যযন্ত্র বিক্রি হয়না। পূজোর পাঁচটি দিন ধর্মীয় রীতি রেওয়াজের জন‌্য বাদকসহ বাদ‌্যযন্ত্র ভাড়া দেওয়া হয়। 

দুর্গাপূজার প্রথম দুই দিন (পঞ্চমী ও ষষ্ঠী) এ হাট বসে। গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে হাটটি জমে না উঠলেও এ বছর দেশের প্রায় সব জায়গা থেকেই বাদকরা তাদের বাদ‌্যযন্ত্রের পসরা সাঁজিয়ে বসেছেন হাটে। বিভিন্ন বাদ‌্যযন্ত্র বাঁজিয়ে চলছে পূজা উপলক্ষে বাদ্যযন্ত্র ভাড়া নিতে আসা মণ্ডপের আয়োজকদের মন জয়ের চেষ্টা। 

জানা গেছে, গতকাল রোববার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকের এ হাটটি চলবে আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত। 

সরেজমিনে ঢাকের হাট ঘুরে দেখা যায় ঢাকিদের সরব উপস্থিতি। ঢাকার বিক্রমপুর, নরসিংদী, কুমল্লিা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ঢাকিদের সংখ্যাই বেশি। 

বেশিরভাগ ঢাকিরা বংশপরম্পরায় এ হাটে ঢাক-ঢোল নিয়ে উপস্থিত হন। হাটে বাদকরা টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পূজা আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তবিদ্ধ হন। 

কটিয়াদি হাটে শুধু ঢাক-ঢোলই নয় বাঁশি, সানাই, খঞ্জনি, মন্দিরা, কাঁশি, ঝনঝনিসহ নানা জাতের বাদ্যযন্ত্রও বায়না করা হয়। সাধারণত একটি ঢাক ১২ থেকে ১৫ হাজার, ঢোল ১০-১২ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার, ব্যান্ডপার্টি ছোট ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়।

হাটে আসা বাদকরা জানান, এ বছর আবার দল বেঁধে পূজোর পাঁচদিন মণ্ডপে বাজনা বাজাতে আগ্রহী তারা। কারন তাদরে কাছে বাজনা বাজানো শুধুই চুক্তি নয়, দলবেঁধে বাজনা বাজানোর আনন্দটাও অনকে কিছু। প্রতিবারই ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায় তাদরে চুক্তিমূল্য। এবারো ভালো বায়নার আশা করছেন তারা। 

ঢাকার বক্রিমপুর থেকে এক সময় ঢাক নিয়ে খকেন্দ্র মনিদাস আসতেন এই হাটে। ১২ বছর ধরে আসেন তার ছেলে অরবিন্দু দাস। তিনি জানান, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ‌্যমেই পূজায় বায়না করি। তবে এখানে না আসলে একটা অপরিপূর্ণতা থেকে যায়। টাকা-পয়সা কম বেশি হতে পারে। কিন্তু পূজোর সময় বছরে দু ’দিন এখানে ঢাকিদের মিলনমেলায় অংশীদার হতে চলে আসি। ঢাকের হাট আমাদরে কাছে একটি আকর্ষণের নাম।

টাঙ্গাইলরে মির্জাপুর উপজলো থেকে বাদক ভাড়া নিতে এসেছেন রতন কুমার সেন। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে প্রতিবছর পছন্দের বাদ‌্যযন্ত্রসহ বাদকদের চুক্তি করে নিয়ে যায়। এ বছর জাকজমক ভাবেই দুর্গাপূজা আয়োজন করছি। এখন শুধু বাকি ঢাকের আওয়াজ। হাটে নরসিংদী থেকে আসা ১০ জনের একটি দলের সঙ্গে কথা হয়েছে। দরদামে ঠিক থাকলে চুক্তি করব।’

জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে কটিয়াদীতে প্রথম ঢাকের হাটের সূচনা হয়। তিনি ওই সময় রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। একবার তিনি পূজার প্রয়োজনে ঢাকির সন্ধানে বিক্রমপুর পরগনায় র্বাতা পাঠান। তখন নৌপথে বহু ঢাকি  কটিয়াদীতে আসনে। রাজা নিজে বাজনা শুনে একটি দলকে পূজার জন্য বেছে নেন। সেই থেকেই প্রচলন শুরু এ ঢাকের হাট। 

উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, ‘বাদ‌্যযন্ত্র ভাড়া নেওয়ার এমন হাট আর কোথাও আছে বলে জানা নইে। সারা দেশেই ঢাকের হাটের সুনাম আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূজার আয়োজকরা ভালো মানের বাদক নিতে এখানে ছুটে আসেন। হাটে আগত পূজা আয়োজক ও বাদকরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’

হাটরে আয়োজক কাটিয়দি উপজলো হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্য পরষিদের বেনী মাধব ঘোষ বলেন, এ হাটে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ বাদকদল অংশ নেন। বাদকদল ও পূজা আয়োজকদের সার্বিক সহযোগিতায় হাটে আসা যেসব বাদ‌্যযন্ত্রী চুক্তিবদ্ধ হতে পারেননা তাদরে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়