ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কালেমার বিশেষত্ব ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১১ জানুয়ারি ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তাওহিদের কালেমা- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরে মুমিনের ঈমান মজবুত হয়। কেননা এটি ঈমানের চাবি। হাদিসের বর্ণনায় কালেমার পরিচয়- ‘জান্নাতের চাবি হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ আবার ‘কোনো ব্যক্তি যদি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ঘোষণা দেয় এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করে, তবে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’

কালেমা পড়েই মুমিন বান্দা ঈমানদার হিসেবে পরিগণিত হয়। তাই মুসলমানের কাছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মর্যাদা সীমাহীন। এটা এমন একটা বাক্য যা একজন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে শর্ত হলো এ বাক্যটিকে মুখে বলা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে পরিণত করা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে কালেমার বিশেষত্ব ও একাধিক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তাহলো-

কালেমার জিকিরের ফজিলত

মুমিন বান্দার কাছে কালেমার জিকির সর্বত্তোম জিকির। ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরে মুমিন বান্দার অন্তরে প্রশান্তি পায়। যে ব্যক্তি বেশি বেশি কালেমার জিকির করবে ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা পরকালে জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেবেন এবং আকাশের সব রহমতের দরজা খুলে দেবেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত উবাদা ইবনে সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি ইখলাসের সঙ্গে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করে, তবে তার জন্য আকাশের দরোজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি)

অসুস্থ ও মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কালেমার তালকিন

অসুস্থ কিংবা মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব না হলে ঈমানহারা হয়ে মরতে হবে। আর এর পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। তাই অসুস্থ ও মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কালেমা পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কালেমার তালকিন করো।’ (মুসলিম)

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে যাবে।’ (আবু দাউদ)

মনে রাখতে হবে

কালেমা একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য। হাতেগোনা কয়েকটি বর্ণ এবং শব্দের সমারোহ মাত্র। উচ্চারণেও অতি সহজ কিন্তু কেয়ামতের দিন নেকির পাল্লায় এটি হবে অনেক ভারী। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর নবি নূহ আলাইহিস সালামের মৃত্যু কালে তাঁর ছেলেকে বলেন, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি। দু’টি জিনিসের নির্দেশ করছি এবং অপর দু’টি নিজিস থেকে নিষেধ করছি। আদেশ করছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র। স্মরণ রাখ! যদি সাত আসমান ও সাত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়। তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পাল্লা ভারি হবে। যদি সাত আসমান ও সাত জমিন একটি অবিচ্ছদ্য গোলাকার বৃত্ত হত, তাহলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ সবকিছুকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে ফেলতো। ইহা প্রতিটি জিনিসের দোয়া এবং এর মাধ্যমেই সৃষ্টিরাজি জীবিকা পেয়ে থাকে। আর তোমাকে নিষেধ করি শিরক ও অহংকার থেকে। (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)

হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসা আলাইহিস সালাম একদিন আল্লাহ তাআলাকে বললেন, ‘হে আমার রব, আমাকে এমন একটি বিষয় শিক্ষা দান করুন; যা দ্বারা আমি আপনাকে স্মরণ করব এবং আপনাকে আহবান করব।’ আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘হে মুসা বলো- ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।’

মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘এতো আপনার সকল বান্দাই বলে থাকে।’

আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘হে মুসা! আমি ব্যতীত সপ্তাকাশ ও এর মাঝে অবস্থানকারী সবকিছু এবং সপ্ত জমিন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এক পাল্লায় রাখা হয় তা হলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পাল্লা ভারী হবে।’ (ইবনে হিব্বান, মুসতাদরাকে হাকেম)

অতএব এ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া গেল যে,” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” হলো সবচেয়ে উত্তম জিকির।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় কালেমার জিকির করা। কেননা কালেমার জিকিরের ফজিলতের মধ্যে আরো হচ্ছে যে- এই কালেমার স্বীকৃতি দানকারীর জন্য জান্নাতের আটটি দ্বার খুলে দেওয়া হবে এবং সে ইচ্ছা মত যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

এ কালেমার সাক্ষ্য দানকারী এর দাবি অনুযায়ী পূর্ণভাবে কাজ না করার ফলে এবং বিভিন্ন অপরাধের ফল স্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও অবশ্যই কোনো এক সময় সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি কালেমার জিকির করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়