ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একের পর এক বহিষ্কারের নাটক চলছে বিএনপিতে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপিতে একের পর এক বহিষ্কারের নাটক চলছে। সর্বশেষ বহিষ্কৃত হয়েছেন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা আখতারুজ্জামান। বহিষ্কারগুলোকে বলা হচ্ছে গঠনতন্ত্রবিরোধী। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের বহিষ্কারাদেশ জারি করা হচ্ছে।

বিএনপিতে বহিষ্কার কে করতে পারেন, এ সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী দলের চেয়ারপার্সন। দলের চেয়ারপার্সন যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। তবে এই বহিষ্কারাদেশ পরবর্তীতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচিত হতে পারে। কোনো সাংগঠনিক অবস্থার কারণে বিএনপির কোনো নেতাকে বহিষ্কার করতে হলে সে বিষয়টি দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচিত হওয়া দরকার বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ আসার পর সেটি দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচিত হবে এবং স্থায়ী কমিটি সে সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রদান করবে।

তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, বিএনপিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে বহিষ্কারাদেশগুলো হচ্ছে সেই বহিষ্কারাদেশের কোনোটি স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করা হচ্ছে না। বহিষ্কার করার ক্ষেত্রে দলের চেয়ারপার্সনের যে ক্ষমতা সেই ক্ষমতারও অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন।

বিএনপিতে কোনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিধান নেই। দলের চেয়ারপার্সন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। কোনো কারণে যদি চেয়ারপার্সন দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তাহলে স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিধান রয়েছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় বিএনপিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যেটি গঠনতন্ত্রবিরোধী বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলছেন, বিএনপিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কোনো বিধান নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিধান না থাকলেও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বলা হচ্ছে এবং এই সব বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তিনি এককভাবে নিচ্ছেন।

জানা যায়, টেলিফোনের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নামের তালিকা ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য আদেশ দিচ্ছেন। কেন তাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? সে সম্পর্কেও কোনো কথা বলা হচ্ছে না।

তৈমুর আলম খন্দকারকে যখন প্রথম দলের বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তখন দলের ভেতরে প্রশ্ন উঠেছিল। তাদের মধ্যে থেকে কেউ বলেছিলেন, তৈমুর আলম খন্দকার এখন নির্বাচন করছেন এই অবস্থায় তাকে দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াটা যৌক্তিক হবে না। তখন বলা হয়েছিল, এটি কৌশলগত একটি অবস্থান। কিন্তু যখন তৈমুর নির্বাচনে পরাজিত হলেন তখন তাকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হল এবং এই বহিষ্কারাদেশও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়নি। তাহলে দল কি এক ব্যক্তির খেয়াল-খুশিমতো চলবে? এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, খালেদা জিয়া যখন বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখন তিনি স্থায়ী কমিটিকে উপেক্ষা করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন না। বরং, স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় চলছে বিএনপি। স্থায়ী কমিটিকে একটা ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন তারেক জিয়া। আর এ কারণেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে স্থায়ী কমিটির আসলে কোনো কার্যক্রম আছে কিনা বা স্থায়ী কমিটির কোনো ক্ষমতা আছে কিনা, এই প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য।

জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল মাহমুদ টুকু এবং সেলিমা রহমান এভাবে ঢালাও বহিষ্কারের সুস্পষ্ট বিরোধী।

তারা বলছেন, এভাবে বহিষ্কার করা হলে দল টিকবে না এবং এ ধরনের বহিষ্কারের বিষয়গুলো নিয়ে দলের ভেতর চুলচেরা আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার যেটি হচ্ছে না। আর এ কারণেই ‘বহিষ্কার মহামারি’তে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়