ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ইসলামে দাড়ি রাখা মুসলমানের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১১ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের বিশেষ চিহ্ন, অন্যতম নিদর্শন ও নবী রাসূলগণের তরীকা হলো দাড়ি রাখা। ইসলামী চিন্তা-চেতনার দিক থেকে দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দাড়ি রাখা সকল মুসলমানের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর বা নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নত। হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন (সহিহ মুসলিম ১/১২৯, ২৫৯)

ইসলাম হলো একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানুষের জন্য কল্যাণকর সবকিছুকে ইসলামে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে আবার অকল্যাণকর বা ক্ষতিকর সবকিছুকে অস্বীকৃতি বা নিষেধ করা হয়েছে।  ইসলামী শরিয়তের সবকিছুই পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ওপর নির্ভরশীল। পবিত্র কোরআনে যা কিছু বলা হয়েছে তার সবকিছুই মহান আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে আর মহান আল্লাহর সকল আদেশই ফরজ এবং যা হাদীসের মাধ্যমে এসেছে তা কিছু সময় ওয়াজিব আবার কিছু সময় সুন্নত।

ওয়াজিব হচ্ছে সেই সমস্ত কাজ যেগুলো করার প্রতি নবী কারীম (সা.) এর আদেশ রয়েছে বা যেগুলো পালন করার প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়েছে আর সুন্নত হচ্ছে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) যা করতেন সেই সব কাজ। একজন মুসলিম হিসেবে এর সবকিছুই আমাদের করণীয়।

কারণ পবিত্র কোরআন মাজীদের বিভিন্ন সুরা য় মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমূখ হয়ো না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত:২০)

সুরা হাশরের একটি আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর, আয়াত:৭)
 
আজকে আমরা ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব। যদিও এই বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে তবুও সেদিকে না তাকিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের দলিলভিত্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করব।
 
দাড়ির আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে লিহইয়াহ। এই শব্দটি ‘লাহি’ বা চোয়াল থেকে আগত। চোয়াল তথা গালে গজানো চুলকেই মূলত দাড়ি বলা হয়। নিচের ঠোঁটের নিচে, চিবুকে ও চোয়ালের নিচের অংশে উৎপন্ন চুলও এর অন্তর্ভুক্ত। দাড়ি পুরুষদের মুখমন্ডলের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ। গুরুত্ত্বপূর্ণ বলার কারণ হচ্ছে দাড়ি রাখা বা না রাখার ইসলামিক ও বৈজ্ঞানিক উপকারী ও ক্ষতিকর উভয় দিক রয়েছে। যা আজ আমরা আমাদের আলোচনায় তুলে ধরবো।
 
পুরুষদের মুখমন্ডলে দাড়ি রাখা মুসলিমদের এক গুরুত্বপূর্ণ চিন্হ যা তার মুসলমান হওয়ার পরিচয় বহন করে। দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব নাকি শুধুই সুন্নত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তার জীবনে যা করতেন অর্থাৎ তার কর্মপন্থাই মূলত সুন্নত হিসেবে পরিগণিত। সেই দিক থেকে দাড়ি রাখা অবশ্যই সুন্নাত এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

পবিত্র কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন যে-

‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)

হাদীস শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দশটি বিষয় সকল নবী-রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ: ১/১২৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে নবীর সুন্নাত হিসেবে দাড়ি রাখার গুরুত্ব অনেক।

আবার, দাড়ি রাখা যে ওয়াজিব সেই বিষয়েও অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই, কারণ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন

‘আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ক্ষমতা নেই, যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ (সুরা আহজাব- আয়াত: ৩৬) এই আয়াতে রাসূলের কথার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।

আর দাড়ি রাখার বিষয়ে সহীহ হাদীসসমূহতে নবীজীর অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত আছে। যেমন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ( রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।’ (সহীহ বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ৬২৫)
 
আবার, দাড়ি রাখাকে অনেকে ফরজ বলে দাবি করেন এই বিষয়কেও অগ্রাহ্য করা যায় না । কারণ নবী কারীম (সা.) যা করতেন এবং যা বলতেন তার সবকিছুই মহান আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত ছিল। মহান আল্লাহ আদেশ ব্যাতীত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না আর নিলেও তা পবিত্র আল কোরআনের ভিত্তিতে যেখানে আল্লাহর বাণী দেয়া আছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে বলেছেন যে-

‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর, আয়াত:৭)

আমাদের নবী অনেকবার দাড়ি রাখার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন। দাড়ি রাখার কথা পবিত্র কোরআনে সরাসরি বলা না থাকলেও রাসূলের মাধ্যমে তা অনেকবার এসেছে, তাই দাড়ি রাখাকে অনেকে ফরজ বলে দাবি করেন।

বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে আবেদিন শামী বলেছেন- দাড়ি সম্পর্কে মূল কথা হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর শরয়ি পরিমাপ হলো এক মুষ্টি পরিমাণ। দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর এবং নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নাত। এটি ভদ্রতা, মহত্ত্ব এবং ইজ্জত ও সম্মানের আলামত। এর মধ্যেই রয়েছে পৌরুষত্বের পরিপূর্ণতা। এভাবে দাড়ি রাখা নবী করিম (সা.)-এর সার্বক্ষণিক আমল ছিল। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, সালফে-সালেহিনেরও আমল ছিল এরূপ। নবী (সা.) এটিকে ফিতরাত তথা মানুষের প্রকৃতি বলেই আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং দাড়ি রাখা আবশ্যক। চেঁছে ফেলা বা এক মুষ্টির ভেতর কাটা হারাম ও কবিরা গুনাহ।

দাড়ির পরিমাণ কী হবে?
নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের দাড়ি যেভাবে এবং যেটুকু ছিল, সেটুকু রাখাই মূল বিষয়। হাদিস শরিফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন চিন্তিত হতেন, তখন তিনি নিজ হাতে দাড়ি ধরে তা দেখতেন (কানজুল উম্মাল ১/৭০১)।

হাদিস শরিফে আছে- হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু শিরআতিল ইসলাম-২৯৮)।

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দাড়ি মোবারক এক মুষ্টির বেশি ছিল এবং এক মুষ্টি পরিমাণ রেখে বাকিটা কর্তন করা যাবে।

সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি লম্বা রেখেছেন। তবে এক মুষ্টির পর কাটার স্বীকৃতি সাহাবায়ে কেরামের আমলে পাওয়া যায়।

হাদিসের অসংখ্য বাণী থেকে প্রাপ্ত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নির্দেশ, আমল ও সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন তাবে-তাবেইনের আমল, ইমাম ফুকাহা ও মুহাদ্দিসিনের আমল ও দিকনির্দেশনার আলোকে আকাবের উলামায়ে কেরাম দাড়ির ব্যাপারে যে বিধান ঠিক করেছেন তা নিম্নরূপ :

দীর্ঘ আলোচনার পর হজরত খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.) লেখেন- দাড়ি কর্তন করা বর্তমান যুগে ইহুদি নাসরাদের শিআর বা নিদর্শনে রূপান্তরিত হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে এমন লোকও তা গ্রহণ করছে, যাদের সঙ্গে দ্বীনের সম্পর্ক নেই। বরং ইংরেজদের রীতিনীতি অনুযায়ী চলাকে তারা পছন্দ করে।

এরপর ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর উক্তি উল্লেখ করেন- দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম (বজলুল মজহুদ ১/৩৩)।

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম (৪/৩৮০)।

এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ইসলামিক স্কলারর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর সর্বনিম্ন পরিমাপ এক মুষ্টি। এক মুষ্টির পর দাড়ি কাটার অনুমতি আছে। কিন্তু এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা অথবা মুণ্ডানো সম্পূর্ণ হারাম।

তাই, দাড়ি রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মানতে হবে; তাহলো-

(১) দাড়ি রাখা,

(২) দাড়ি লম্বা করা,

(৩) অন্তত একমুঠো পরিমাণ পর্যন্ত রাখা।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কতৃক বর্ণিত, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর, দাড়ি বাড়াও, গোঁফ কাট।’ (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

দাড়ি এক মুঠো রাখার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না তবে, অনেক জায়গাতেই একমুঠোর বিষয়ে বেশী জোর দেয়া হয়। এই বিষয়ে কিছু হাদীসের বর্ণনা করা হলো-

হজরত আবু যুর’আ কতৃক বর্ণিত আছে যে , হজরত আবু হুরায়রা (রা.) দাড়ি হাতের মুঠোয় নিয়ে এর অতিরিক্ত অংশ ছেটে নিতেন। (ইবন আবী শায়বা- খন্ড-৮)

অন্য এক হাদীসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কতৃক বর্ণিত আছে যে, তিনি নিজের দাড়ি হাতের মুঠোয় নিয়ে অবশিষ্ট অংশ কর্তন করতেন। (নাছবুর রায়াহ)

তবে দাড়ি রাখা এবং তা লম্বা রাখা বা বড় করা বা বাড়ানো সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। তাই বিতর্কে না গিয়ে এক মুঠো বা তার চেয়ে বড় করে দাড়ি রাখা উচিত।

দাড়ি না রাখার অনেক কুফল রয়েছে। কারণ দাড়ি যদি কেউ না রাখে তার দ্বারা ইসলামের অনেক বিধান লঙ্ঘিত হয়। যেমন-

(১) দাড়ি না রেখে রাসূলের অবাধ্যতা করা হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য)

(২) দাড়ি না রেখে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয়। কারণ: মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে-
‘যে রাসূলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৮০)

(৩) মহানবী (সা.) দাড়ি রাখতেন এবং তার উম্মতকেও রাখতে বলতেন আর তাই কেউ যদি দাড়ি না রাখে সে রাসূলের পথ থেকে বিচ্যুতি হয়ে গেল।

(৪) যে দাড়ি রাখে না সে মুমিনদের পথ থেকে বিচ্যুত। মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা নিসার ১১৫নং আয়াতে বলেন যদি কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে তাহলে তার জায়গা হবে জাহান্নাম।

(৫) দাড়ি মুসলিমদের কাফিরদের থেকে আলাদা হিসেবে চিন্হিত করে। তাই দাড়ি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কুফল ও কঠোর শাস্তি রয়েছে দাড়ি না রাখার। তাই অবশ্যই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলামের বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা।

ইসলাম ধর্মে দাড়ি রাখার অনেক ফজিলত বা উপকারীতা সম্পর্কে বর্ণিত আছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

(১) দাড়ি রাখলে মহান আল্লাহ পাক ও তার রাসূল খুশি হন,

(২) দাড়ি রাখলে হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের দিন নবীজির শাফায়াত লাভ হবে,

(৩) দাড়ি রাখলে সকল নবী-রাসূলগণের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়,

(৪) দাড়ি রাখলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়,

(৫) দাড়ি চেহারার সৌন্দর্য্য বাড়ায় ও বীরত্বের পরিচয় বহন করে,

(৬) কিয়ামতের দিন অন্ধকার সময়ে মুমিনের দাড়ি নূরে (আলোয়) পরিণত হবে,

(৭) ঈমান ও আমল ঠিক থাকলে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ এবং হাশর হবে নবী ও ওলীদের সঙ্গে,

(৮) দাড়ি একজন মুসলমানকে অনেক পাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে,

(৯) দাড়ি ইসলামী সভ্যতার ও মুসলমানের অন্যতম প্রতীক, দাড়ির মাধ্যমে একজন মুসলিমকে সহজে চেনা যায়,

(১০) দাড়ি রাখলে কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতা মুনকার-নাকীরের সওয়াল-জাওয়াব সহজ হয়,

ইসলামে দাড়ি রাখার প্রতি এত জোর দেয়ার কারণগুলো ওপরে কিছুটা বর্ণনা করা হয়েছে তবে এটা মানব মুখমন্ডলের জন্যেও উপকারী আর সেই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে দাড়ি নিয়ে গবেষণা চালানো হয় যার ফল প্রকাশিত হয় ‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ নামে এক ম্যাগাজিনে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানো পুরুষদের ত্বকেই মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সেটি ৩গুন বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।

যার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে ঘষা লাগে, তা ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ। অন্যদিকে দাড়ি ব্যাক্টেরিয়ার এই সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।

লন্ডনের গবেষক ড: অ্যাডাম রবার্ট এক গবেষণায় দেখেছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

এগুলো ছাড়াও দাড়ির আরো কিছু উপকারী দিক রয়েছে সেগুলো হলো-

(১) দাড়ির অস্তিত্ব যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি করে,

(২) লম্বা দাড়ি ক্ষতিকর জীবাণু থেকে আমাদের রক্ষা করে,

(৩) পাইরিয়ার মতো মারাত্বক রোগের জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়,

(৪) দাড়ি রাখলে অনর্থক সময় ও অর্থ অপচয় রোধ করা যায়,

(৫) শারীরিক সৌন্দর্য্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়,

(৬) দাড়িতে ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহারের কারণে চোখের জ্যোতি কমে যায় এবং মুখমন্ডলের চামড়া শক্ত হয়ে যায়। দাড়ি রেখে দিলে এসব ক্ষতিকর দিক থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, হাদীসে লূত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যে সম্প্রদায়কে মহান আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর এ ধ্বংসের পেছনে যে ১০টি কারণ ছিল ‘দাড়ি না রাখা এবং গোফ বড় রাখা’ তাদের অন্যতম একটি কারণ ছিল।

তাই আমাদের উচিত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং নিজের আখিরাতের কথা ভেবে দাড়ি রেখে দেয়া। কারণ, ইসলাম ধর্মে দাড়ির রাখার গুরুত্ত্ব অনেক। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলাম ধর্মের সঠিকভাবে বুঝে সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়