ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

অ্যান্টার্কটিকাতে ভয়ংকর সুন্দর রক্ত ঝরনা

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চারপাশে হিম শীতল আবহাওয়া, হাড় কাঁপুনি শীত। ঠিক এমন পরিবেশে গেলেন একটি ঝরনার কাছে। ওমা! পানি কোথায়? ঝরনা গড়িয়ে পড়ছে গাঢ় লাল রঙের রক্ত! না, কোনো ভৌতিক সিনেমার গল্পের কথা বলছি না। বাস্তবেই রয়েছে এমন দৃশ্য। প্রকৃতির সে এক অদ্ভুত খেয়াল।

বলছিলাম অ্যান্টার্কটিকাতে অবস্থিত দ্য ব্লাড ফলসের কথা। যার বাংলা অর্থ রক্ত ঝরনা। সবচেয়ে শীতলতম এ মহাদেশের পূর্বাঞ্চলের ম্যাকমার্দোর ভিক্টোরিয়া ল্যান্ডে রয়েছে শুষ্ক উপত্যকা। সেখানকার টেইলর হিমবাহ থেকে টেইলর ভ্যালির তুষারে ঢাকা ওয়েস্ট লেক বনির ওপর দিয়ে বয়ে যায় রক্ত লাল রঙের ঝরনা। 

জায়গাটি অত্যন্ত দুর্গম তার উপর প্রকৃতির অপার রহস্য লুকিয়ে রয়েছে স্থানটিতে। এ কারণেই ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ বাড়ায় এই পাহাড়টি। ১৯৩১ সালে প্রথম এই দৃশ্যটি আবিষ্কৃত হয়। এরপর বহু বিজ্ঞানীরা লাল রঙের পানির উৎস খুঁজেছেন। এরপর ২০১১ সালে একদল অভিযাত্রী এ পাহাড়ের রহস্য উদ্ভাবন করেন। সেখানে তারা দেখেন, অদ্ভুত এ জলপ্রপাতটি বাস্তবেই বিদ্যমান।

যুগে যুগে অনেক বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে এর ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, কোনো লাল রঙা শ্যাওলার কারণে হয় পানির রং রক্তবর্ণ দেখায়। তবে বিষয়টি ঠিক নয়। আনুমানিক ২০ লাখ বছর আগে সৃষ্টি হয় এ রক্তের ঝরনার। এর উৎসস্থল টমাস গ্লেসিয়া। টেলর হিমবাহ গলে এ রক্তপ্রপাতের পানি গড়িয়ে পড়ে। রক্তবর্ণ এ পানির গন্ধও নাকি রক্তের মতোই। তবে আলাক্সা ফোয়ারব্যাংকস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লবণাক্ত পানিতে আয়রন থাকায় তা অক্সিডাইজড হয়ে যায়।

একই প্রক্রিয়ায় লোহায় লাল রঙের মরিচা ধরে। লবণাক্ত পানি যখন অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে তখন এর বর্ণ লাল রং ধারণ করে। গবেষকদের মতে, হিমবাহ বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিভিন্ন শাখা-উপশাখা তৈরি হয়ে রক্তপ্রপাতে পৌঁছানোর কার্যক্রম অন্তত দেড় মিলিয়ন বছর ধরে হয়েছে। মজার বিষয় হলো, এ ব্লাড ফলসটিতে এমন এক জীবাণু রয়েছে যা চরম অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। এ মাইক্রোবিয়াল সম্প্রদায়গুলো পানিতে থাকা সালফেটের মাধ্যমে শক্তি তৈরি করে। মানুষ যেভাবে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, ঠিক সেইভাবেই অক্সিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এই জীবাণুগুলো সালফেট ব্যবহার করে বেঁচে থাকে।

যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, সালফার আর আয়রনের কারণেই নাকি রক্তবর্ণ ধারণ করেছে জলপ্রপাতটি। তবে আরেকটি প্রশ্নও উঠছে তা হলো জনমানবশূন্য এই অঞ্চলে এতো লৌহ আকরিক এসেছে কীভাবে? ব্যাখ্যা বা যুক্তি যাই থাকুক না কেন, জলপ্রপাতটি বাস্তবে দেখতে যে ভয়ংকর সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি দেখলে মনে হবে রক্তের সমুদ্র বয়ে চলেছে। আবার এর পাশে বেশ কিছু ভয়ংকর জলজ ও স্থলজ প্রাণীর উপস্থিতি স্থানটিকে আরো রহস্যময় ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়