ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অপরের অধিকার হরণ করা মুসলমানের কাজ নয়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০২, ৮ মে ২০২৩  

অপরের অধিকার হরণ করা মুসলমানের কাজ নয়

অপরের অধিকার হরণ করা মুসলমানের কাজ নয়

আলহামদুলিল্লাহ! কষ্টেসৃষ্টে তীব্র গরমের রোজা আমরা পার করেছি। বিশ্ব মুসলমানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের সৌভাগ্যবান মুসলমানরাও এখন হজের প্রস্তুতিতে মগ্ন। রোজা শেষে হজের আগে চিন্তাশীল পাঠকদের উদ্দেশে দুটো কথা বলতে চাই। এই যে তীব্র গরমে আমরা প্রচ- পিপাসা ও ক্ষুধাকে উপেক্ষা করে রোজা রেখেছি, এখন আবার কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে মহান কাবার মালিকের দুয়ারে গিয়ে লাব্বাইক বলে হাজিরা দেব-তো এই কষ্টের ফল আমাদের জীবনে কতটুকু দৃশ্যমান হচ্ছে? রোজা শেষে মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসার কথা, হজে যাওয়ার আগে একজন মানুষের আচরণে ও মনে যে নমনীয়তা ফোটার কথা তা কি আমাদের রোজাদার ও হাজি ভাইদের ভিতর দেখতে পাচ্ছি? রোজায় যারা ওমরাহ করে এসেছেন তাদের ভিতরও কি কোনো রুহানি পরিবর্তন ফুটে উঠেছে?

প্রিয় পাঠক! এখনো আমাদের মাথা থেকে মাহে রমজানের ছায়া চলে যায়নি। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখনো ছয় রোজার আয়োজন চলছে। যদিও রোজার মাসে সিয়ামের শীতলতা অনুভব করার হৃদয় দিন দিন কমে আসছে, তবু কিছু না কিছু নূর তো আমাদের ভাগ্যে জুটেছে। কিছু না কিছু বরকত তো আমাদের খাতায় জমা হয়েছে। তো রমজানের নূর ও বরকত যদি বছরব্যাপী জারি রাখতে চাই তাহলে আমাদের সহজ একটি কাজ করতে হবে। এ কাজটি করতে পারলে আসছে হজও আমাদের শুদ্ধ হওয়ার শর্ত আদায় হবে। কাজটি হলো, অন্যের সম্পদ যা কিছু আমার দখলে আছে তা প্রকৃত হকদার বা তার উত্তরসূরির কাছে ফিরিয়ে দিয়ে তার কাছে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তওবা করা। আসলে একজন প্রকৃত বিশ্বাসী কখনোই পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ-দখল করতে পারে না। সুরা বাকারার ২৩ রুকু শুরু হয়েছে রোজার বিধান দিয়ে। ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ ১৮৩ থেকে ১৮৮ মোট ৬টি আয়াত নিয়ে রুকুটি সাজিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। পুরো রুকুজুড়ে রোজার নানা বিধান বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছেন। কীভাবে একজন মুমিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুত্তাকি হতে পারে এর থিওরিটিক্যাল আলোচনা শেষে একটি প্র্যাকটিকেল ওয়ার্ক বা বাড়ির কাজও বলে দেওয়া হয়েছে রুকুর শেষ আয়াতে। একটি ভালো গাইডে কেবল সূত্রই লেখা থাকে না, বাস্তব প্রয়োগও উদাহরণসহ বলে দেওয়া থাকে। তেমনি রোজা রাখলে বান্দা মুত্তাকি হবে এ কথা বলেই কোরআন তার থিওরিটিক্যাল আলোচনা শেষ করেনি। বরং মুত্তাকি হওয়ার মাপকাঠিটাও হাতে-কলমে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। রুকুর শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে জবরদখল করো না। আর জেনেশুনে অন্যায়ভাবে পরের সম্পদ দখল করার উদ্দেশে মামলা-মোকদ্দমা করে বিচারকদের প্রভাবিত কর না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৮)। এবার রোজা উপলক্ষে যখন নতুন করে সিয়ামের বিধান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি তখন খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, তাকওয়া দিয়ে শুরু করে সম্পদ হরণের বিষয় দিয়ে কেন শেষ হলো রুকুটি। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, এ আয়াতের তাকওয়ার প্র্যাকটিকেল বিষয়টি বোঝানোর জন্যই এমনটি করেছেন আল্লাহ। একজন মানুষ মুত্তাকি কি না সেটা বোঝার জন্য তার দাড়ি কত বড়, জুব্বা কত লম্বা, তার ভক্ত মুরিদ কত বেশি, তার ইলমি গভীরতা কেমন এসব কোনো বিষয়ই উল্লেখ করা হয়নি। শুধু এটাই বলা হয়েছে, মুত্তাকি মানুষ কখনোই পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগদখল করবে না। আয়াতে আরও একটি বিষয় খুব সূক্ষ্মভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, একজন মুত্তাকি পরের সম্পদ তো জুলুম করে কেড়ে নেবেই না, এ জন্য সে কোনো চেষ্টা তদবিরও করবে না। এমনকি মিথ্যা মামলা দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষী বানানো, বিচারককে ভুল বোঝানো এগুলোও সে করবে না। এ আয়াত থেকে আরেকটি বিষয়ও প্রমাণিত হয়, কেউ যদি মিথ্যা তথ্য প্রমাণ দিয়ে আদালত থেকে রায় নিয়ে অন্যের সম্পদ নিজের নামে করেও নেয়, তবু সেটা তার জন্য হালাল হবে না। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য! আমাদের সমাজের নামাজি, রোজাদার, হাজিদের বড় একটা অংশই পরের সম্পদ জবরদখলের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িত। এরা রোজা রাখে আল্লাহর উদ্দেশে, কিন্তু ইফতার করে হারাম অর্থ দিয়ে। এরা সদকা দেয় হারাম টাকা দিয়ে। জাকাত দেয় হারাম টাকা দিয়ে। এমনকি হজও করে হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। এদের নামাজ-রোজা-হজ কোনো কাজে আসবে না। এটি আমার কথা নয়। দেড় হাজার বছর আগে নবীজি (সা.) এ কথা বলেছেন। একটি আজিব উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়েছেন নবীজি (সা.)। রসুল (সা.) বলেন, ‘এক লোক অনেক দূর থেকে এসেছে। তার পোশাকে এখনো সফরের চিহ্ন। অর্থাৎ সে মুসাফির। মুসাফিরের একটা মর্যাদা হলো-তিনি হাত তুলতে দেরি দোয়া কবুল হতে দেরি নেই। তো এই লোক হাত তুলে দোয়া করছেন আর বলছেন- হে আল্লাহ! আমাকে এটা দেন। আমাকে মাফ করেন। আমাকে কবুল করেন। কিন্তু আশ্চর্য! নবীজি বলছেন, এই ব্যক্তির দোয়া কবুল হচ্ছে না। কী করে কবুল হবে, তার খাওয়া হারাম পয়সায় হয়েছে, তার পোশাক হারাম টাকায় কেনা, তার অস্থিমজ্জা হারামে ডুবে আছে।’ আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়