ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অদম্য তারুণ্যের সাফল্যগাথা: হার না মানা ১০০ তরুণের গল্প

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ৫ মে ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

‘হার না মানা ১০০ তরুণের গল্প’ বইটি এক কথায় ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ চলার পথে দুর্বিনীত অদম্য তারুণ্যের সাফল্যগাথা।

তারুণ্য হচ্ছে বয়সের সীমারেখা পেরিয়ে মানসিক অবস্থানগত একটি বিষয়। কেউ পঁচিশ বছর বয়সেও পঞ্চাশের মত নুহ্য হয়ে যেতে পারে, আবার কেউ পঞ্চাশের ঘরে যেয়েও পঁচিশের উদ্যম ধরে রাখতে পারে।

তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য কী? তারুণ্য হচ্ছে অদম্য, জেদি, একরোখা, দুর্বিনীত, জয়ের নেশায় পাগল এক ইচ্ছাশক্তির নাম। ‘হার না মানা ১০০ তরুণের গল্প’ বইয়ে আমরা আসলে সেই ইচ্ছাশক্তির ১০০টি রকম দেখতে পাই যেগুলো বয়স নির্বিশেষে আলাদা আলাদা ১০০ জন মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু সবাই তারা একই সূত্রে গাঁথা। তারা সবাই তরুণ; তারা সবাই অদম্য, সবাই দুর্বিনীত। হাজারো সমস্যা, বন্ধুর পথ, ঝড়-ঝঞ্ঝাও তাদের থামাতে পারেনি, একচুল নড়াতে পারেনি তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে। সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তারা একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে। তার মানে আবার এই নয় যে তারা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে চিরতরে। বরং প্রতিনিয়ত ‘সমস্যা-সমাধান’ এই চক্রকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে, আরো ভালো কিছুর জন্য। 

‘হার না মানা ১০০ তরুণের গল্প’ বইটি একটি আশাজাগানিয়া বই। আমরা অনেকেই সাধারণ কোন সমস্যার মুখোমুখি হলেও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে আসি। আমাকে দিয়ে হবে না, আমি মনে হয় পারব না- এই ধরনের নেতিবাচক ধারনা ঘুরতে থাকে মাথায়। এই বইটিতে যাদের গল্প রয়েছে তারা কেউই সুপারম্যান নন; আপনার আমার মতনই সাধারণ একেকজন মানুষ। তাদের জীবনের গল্পগুলো পড়লে আপনি কারো না কারো মাঝে আপনার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাবেন নিশ্চিত। মনে হবে, ‘আরেহ! আমি তো এমনটা করতে বা হতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাঁধাও পেয়েছিলাম ঠিক এনার ই মতন।’ কিন্তু আপনার আর তার মাঝের সামান্য পার্থক্যটুকু দেখতে পাবেন কিছুটা পরেই। আরেকটু এগিয়ে যান তার গল্পে; দেখবেন আপনি যেখান থেকে পিছিয়ে এসেছিলেন আপনার জীবনগল্পে, ঠিক সেখান থেকেই তারা মোকাবিলা শুরু করেছেন- হেরেছেন, কেঁদেছেন, অপমানিত হয়েছেন; তবু জিদ ধরে রেখেছেন। কোন না কোন পন্থা বের করেছেন লক্ষ্য পূরণ করার জন্য। আপনিও তো পারতেন, তাই না? এখনো পারেন, নয় কি?

কোন ক্ষেত্রের তরুণদের কথা নেই এই বইতে; চাকুরিজীবী, লেখক, প্রকাশক, সমাজসেবক, উন্নয়ন কর্মী, সেচ্ছাসেবক, খেলোয়াড়, নারী উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, রন্ধন শিল্পী, সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী, চিকিৎসক, ভ্রমনকারীসহ আরো অনেক অনেক যুদ্ধক্ষেত্রের সফল যোদ্ধাদের গল্প আছে এখানে, যা আপনাকে উৎসাহিত করবেই আপনার নিজের লড়াইয়ে জেতার জন্য। কিছুটা হলেও প্রেরণা পাবেন, ফিরে পাবেন উদ্যম।

১০০ তরুণের নিজের বয়ানে তাদের গল্প নিয়ে সুচারুভাবে মালাটি গেঁথেছেন আরেক তরুণ লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী মাহবুব নাহিদ। সহযোগিতায় ছিলেন রেজাউল ইসলাম রেজা। বইটি দাঁড়িকমা প্রকাশনীর একটি অনন্য প্রকাশনা। চমৎকার প্রচ্ছদের বইটির বাঁধাই, ছাপা বেশ মানসম্পন্ন। কিছু মুদ্রণপ্রমাদ ও কয়েকটি লেখার কিছুটা দুর্বল সম্পাদনা ব্যতিরেকে বইটি সুখপাঠ্য। আশা করছি পরবর্তী সংস্করণে এই সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিটুকুও আর থাকবে না। শত তরুনের আলোয় আরো হাজারো লাখো তরুণের উৎসাহের প্রদীপ জ্বালাবার মতো এমন একটি প্রকাশনার জন্য প্রকাশককে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

সবশেষে বলতে চাই, বইটি একবার পড়ে রেখে দিবেন তা হয়তো হবে না। সমস্যার আবর্তে পড়ে যখনি সমাধান খুঁজে পাবেন না; হাল ছেড়ে দিতে মন চাইবে; তখনি বইটা খুলে কোন না কোন তরুণের গল্পটি পড়ে নিন। নতুন প্রেরণা উৎসাহ খুঁজে পাবেন, উদ্দীপনা আসবে, আত্মবিশ্বাস জাগবে। মনে হবে উনি এভাবে পারলে আমিও কোন না কোন ভাবে পারব। অবশ্যই পারব। এখানেই বইটির সার্থকতা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়