শেরপুরে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি উৎপাদন মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বসতবাড়ির আঙিনায় সবজী চাষ, হাঁস-মুরগী, গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ, মাঠ ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে সবন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় ফসলের নিবীড়তা ও আয় বাড়ে। এর মধ্য দিয়ে কৃষক পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরণের পাশাপাশি আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটে। শেরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার কামরিয়া এলাকায় ‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বসতবাড়ীর আঙিনায় সবজী উৎপাদন’-এর উপর এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠ দিবসে স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী (৬৫) জানান, আগে তিনি কৃষি ফসল আবাদ করে তেমন লাভবান হতে পারছিলেন না। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে ২০ শতক জমি চাষাবাদ করে প্রতিমাসে প্রায় ২০/২২ হাজার টাকা করে আয় করছেন। এখন তিনি তার বসতবাড়ীর এক শতক পতিত জমিতে ৬টি বেড করে বছরে পর্যায়ক্রমে ১৬ টি ফসল আবাদ করছেন। দুই ফসলি জমিতে এখন চার ফসল করছেন। ছাগল-মুরগী পালছেন, পুকুরে মাছের চাষ করছেন।

আরিফ হোসেন (২৪) নামের এক যুবক বলেন, আমাদের খুব বেশী জমি নেই। ফসল আবাদ করে তেমন লাভ হতো না। একপর্যায়ে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছিলো। কিন্তু সরেজমিন কৃষি গবেষণার এ প্রযুক্তি সহায়তা পেয়ে আমি ছাগল এবং কবুতর লালন-পালন শুরু করি। বাড়ীর আঙিনার পতিত জমিতে নানা ধরনের সবজীর আবাদ শুরু করি। গত তিন বছরে এখন আমি স্বাবলম্বী। মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পরিবারকেও সহায়তা করছি। গরুর খামার করেছি, ছাগল পালছি, কবুতরও রয়েছে অনেকগুলো। স্থানীয় কৃষকরাও এ প্রযুক্তি দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এবং তাদের নিকট এর কলাকৌশল জানতে চাচ্ছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরপুর খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে। বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগ শেরপুর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সামছুর রহমান-এতে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মো. আসাদুজ্জামান, কৃষিবিদ ফরিদুল ইসলাম, কৃষিবিদ জিয়াদুন নূর টিটো, কৃষক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। এ মাঠ দিবসে এলাকার শতাধিক কৃষক-কৃষানী উপস্থিত ছিলেন।

বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগ শেরপুর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শামছুর রহমান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ‘নারকেলি মডেলে’ বসতবাড়ীর ১৭ টি স্থানে বছরব্যাপী কৃষি আবাদ করা যায়। এতে ফসলের নিবীড়তা যেমন বাড়ে, তেমনি কৃষকের আয়ও বাড়ে। এই মডেলে মাত্র আধা শতক জমিতে ৬টি বেড তৈরী করে সারাবছর খাওয়ার উপযোগী ১৭ ধরনের শাক-সবজি আবাদ করা যায়। এছাড়া কৃষকরা ৫টি কম্পনেন্ট মাঠ ফসল, হাসমুরগী পালন, পশুপালন, মাছ চাষ এবং বসতবাড়ীর আঙিনায় শাক-সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের খাবারের যোগান ছাড়াও বিক্রী করে লাভবান হতে পারেন।

এই প্রযুক্তিটিই সরেজমিনে এখানকার কৃষকদের মাধ্যমে গত তিন বছর ধরে বাস্তবায়ন করে দেখাতে চেষ্টা করেছি। এ এলাকায় ১২ জন কৃষক সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন এবং তারা এখন স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।