উদ্যোক্তা হতে নারীর সংগ্রাম

ফিচার ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:০৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

ছবি: নারী উদ্যোক্তারা অন্য হাজারো নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে

ছবি: নারী উদ্যোক্তারা অন্য হাজারো নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। নজরুলের এই সাম্যের গানের দুটি লাইন কিংবা যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে, প্রবাদের সঙ্গে সবাই আমরা পরিচিত। নারীর জন্ম শুধু ঘরকন্যার কাজের জন্যই নয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও করতে পারেন নানা সৃজনশীল কাজ। বরং পুরুষের চেয়ে খানিকটা বেশিই এগিয়ে এদিক থেকে নারীরা।

এই সৃজনশীলতার প্রকাশ করতে অনেক নারীই গৃহিণী কিংবা কর্মজীবী হওয়ার পাশাপাশি হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। এখন নারীদের চলার পথ মসৃণ করতে, তারা নিজেদের পরিচয় গড়তে সংসারের পাশাপাশি নিজের সৃজনশীল জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ করতে সফল। প্রতিদিন গড়ে উঠছে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা। তারা এখন তাদের সময়ের মূল্য দিতে প্রস্তুত। তাদের প্রতিভা পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে। কল্যাণের এই পথ থেকে রুখবে তাদের কারা?

আর এসব নারীদের জন্যই বছরে একটি দিন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। হ্যাঁ, আজ ১৯ নভেম্বর সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব নারী দিবস’। দেশের নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা কত, জানেন কি? বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সবমিলিয়ে ছোট-বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তার সংখ্যা ১ কোটির বেশি হতে পারে। 

তবে মহামারির এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি নারী উদ্যোক্তা গড়ে ওঠেছে। তারা তাদের জন্য যখনই একটু সময় পেয়েছে, তখনই তাদের প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বের করে তা বাস্তবসম্মত কাজে লাগিয়ে দেশ ও দশের উপকারে আসতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বিশ্বের নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাতে ও নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে মূলত দিবসটি পালন করা হয়। ২০২০ সাল নারীকে দিয়েছে ভিন্ন পরিচয় গড়ার সুযোগ। কেউ প্রয়োজনে আবার কেউ শখ করেই বেছে নিয়েছে উদ্যোক্তা পেশা।

অনেক নারী আছেন একেবারে গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। আবার কেউ এই নেশা এবং পেশায় এসে ছেড়েছেন সোনার হরিণ নামের অনেক সরকারি চাকরিও। তেমনি একজন নারী উদ্যোক্তা নুসরাত মৌলি। তিনি করছেন বেকারি আইটেম নিয়ে। এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন অনলাইন প্লাটফ্রম ফেসবুককেই। নিজের একটি পেজে তিনি ঘরে তৈরি কেক বিস্কুটসহ বেকারির নানা আইটেম সল্পমূল্যে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। তার মতে, একদিকে যেমন ক্রেতার স্বাস্থ্যের বিষয়টা ঠিক থাকছে অন্যদিকে কোনো রকম জক্কি ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বশে উপভোগ করতে পারছে পছন্দের খাবারটি।  

তবে মৌলির শুরুটা কিন্তু এখান থেকেই নয়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন প্লার্টফর্মে চাকরি করেছেন। তখনও ভাবেননি একসময় উদ্যোক্তা হবেন। তবে এই স্বপ্ন লালন করেছেন অনেক আগে থাকেই। সেই সুযোগ আসে গেল বছর। গর্ভকালীন সময়টাতে চাকরি ছেড়ে বাস্য ছিলেন তিনি। একদিকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অজানা ভবিষ্যতের চিন্তা। অন্যদিকে ঘরে থেকে হতাশা ঘিরে ধরছিল তাকে।

এই অবসর সময়টাকেই কাজে লাগান মৌলি। শিখে ফেলেন রান্না। বিশেষ করে বেকারি খাবার তৈরির কিছু কোর্স করে ফেলেন। এরপর নিজেই একটি পেজ খুলে তৈরি করা খাবারের ছবি পোস্ট করতে থাকেন। একের পর এক অর্ডার আসতে থাকে। আর সেই থেকে শুরু। এখন পুরো মনোযোগ আর ব্যস্ততা তার সংসার আর তার পাশাপাশি ব্যবসা নিয়ে। তার কথায়, উদ্যোক্তা পথে হাঁটতে শুরু করেছি শখে না নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। 

আরেকজন নারী উদ্যোক্তার কথা বলব। তিনি নাসিমা আক্তার নিশা। তিনি উইএর প্রেসিডেন্ট। উই হচ্ছে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম,এটি দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। ফেসবুক ভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্ম উই এখন দশ লাখ সদস্যের পরিবার। যাদের প্রায় সবাই দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা। নিজেদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হয়। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হতে নারীরা আরো বেশি করে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শুধু দেশীয় ক্ষেত্রেই নয় আমাদের দেশীয় পণ্য বিশেষ করে তাঁত শাড়ি, গামছা বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন একজন নারী। বিবি রাসেলের নাম শোনেন নি এমন মানুষ কমই আছেন। আন্তর্জাতিকভাবেও সুনাম অর্জন করেছেন এমন সফল ধ্রুপদী নারী উদ্যোক্তাও রয়েছেন আমাদের দেশে। বাংলাদেশের প্রথম সুপার মডেল ছিলেন তিনি। মডেলিং ছেড়ে এসেছেন উদ্যোক্তা পেশায়। বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ ‘বিবি প্রোডাকশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের পোশাককে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি এনে দিয়েছেন।

এমন আরো শত শত নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন আমাদের দেশে। আমাদের দেশের সমৃদ্ধি এবং অর্থনীতির চাকা সচল করতে নারী উদ্যোক্তাদের অবদান অনেক বেশি। বিশেষ করে ক্ষুদ্রশিল্প এবং দেশীয় পণ্যের বাজারে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের আলাদা এক পরিচিতি তৈরি করেছেন এই নারীরাই।