অস্ট্রেলিয়া পুলিশের নথিতে শাকিব ‘ধর্ষক’

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১১:১৪ এএম, ২১ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার

নায়ক শাকিব খান

নায়ক শাকিব খান

ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক শাকিব খান অস্ট্রেলিয়ায় ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশের নথিতে উল্লেখ রয়েছে।

সে দেশের পুলিশের রিপোর্টের কপি ইতোমধ্যেই এসেছে। যেখানে দেখা যায়, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শাকিব খান রানা। ভুক্তভোগী ও তার ‘আঙ্কেল’ ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক রহমত উল্লাহ ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৪০ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ জানান। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন। সাক্ষী হয়েছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। ভুক্তভোগী নিজেও ছবিটির সহ-প্রযোজক।

পুলিশ রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেল কক্ষে রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ওই নারী প্রযোজককে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদনে শাকিব মদ্যপ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শাকিব খান (রানা) একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভুক্তভোগী তার আঙ্কেল রহমত উল্লাহর ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। ভুক্তভোগী নারী ও রহমত উল্লাহ বাংলাদেশি একটি সিনেমার কাজ শুরু করেছেন। যার শুটিং অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে হবে।

বিবরণীতে জানা যায়, শাকিব খানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ভুক্তভোগী প্রথম কথা বলেন ২০১৫ সালে। অস্ট্রেলিয়ায় তাদের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। সহ-প্রযোজক হওয়ায় ভুক্তভোগী নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করতেন।

সেই অভিযোগপত্রের শেষে যুক্ত করা হয়েছে সাক্ষ্য, যা দেন সাক্ষী রহমত উল্লাহ। সেখানে তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগে ভুক্তভোগীর বাসায় ছবির সবার পার্টি ছিল। সেখান থেকে ভুক্তভোগী, আমি ও অন্য কয়েকজন রানাকে (শাকিব) হোটেলে পৌঁছে দিই। সেখানে হুট করে রানা হোটেলে পার্টি ঘোষণা করেন। তিনি বিয়ার পান করেছিলেন। তাই ভুক্তভোগীকে বলি, শাকিবের ওখানে তাকে দেখভাল করতে। পরদিন সকাল ৮টায় ভুক্তভোগী ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলে। সে সময় তাকে বিষণ্ন ও অসুস্থ দেখাচ্ছিল। এরপর দ্বিতীয়বার ১০টায় তিনি বলেন, তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন। সেদিন রাতে পুলিশ স্টেশনে যাই।’

মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, শাকিব খান মদ্যপ হয়ে ভুক্তভোগীকে বিকৃতভাবে যৌনচার চালিয়েছেন।

অন্যদিকে, অভিযোগের পরদিন ভুক্তভোগী রহমত উল্লাহকে বলেন শাকিবকে ফোন দিতে। রহমত উল্লাহর ভাষ্য মতে, শাকিব তখন ক্ষমা চায় ও ক্ষতিপূরণ দিতে চায় এবং সন্ধ্যায় রেস্তোরাঁয় ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে। তারও এক দিন পরে তাদের সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া ছাড়েন শাকিব।

তবে মামলাটি চালু আছে নাকি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে–এমন কোনো তথ্য সে নথিতে নেই। এমনকি নেই কোনো রায়ও।

দেশের শীর্ষ নায়কের বিরুদ্ধে ভিন দেশে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেখানে অপরাধ হয় তার বিরুদ্ধে বিচার সেখানেই হয়। অভিযোগ যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় গেছে, সেখানকার আইনে বিচার হবে। দেশে এর বিচারের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার গভর্মেন্ট ইন্টারপোলের অপরাধীকে আনা-নেওয়া করতে পারে।’

দেশের আইকনিক তারকার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ও প্রমাণ দায়বদ্ধহীনতা ও নৈতিক অবক্ষয় বলেই মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি প্রযোজক রহমত উল্লাহ বাংলাদেশে এসে শাকিবের নামে মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সশরীরে এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী, প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি বরাবর এমন লিখিত অভিযোগ করেন রহমত উল্লাহ নিজেই।

অভিযোগের পর বিষয়টি মীমাংসার সুরাহার উদ্যোগ নেন শাকিব খান। গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় প্রযোজকের সঙ্গে বৈঠক করেন শাকিব। সে সময় উপস্থিত ছিলেন শাকিবের সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুসহ আরও অনেকে। এক ঘণ্টা চলা এ বৈঠকে কোনো সমাঝোতা করতে না পেরে মুখ খোলেন শাকিব খান। দাবি করেন, রহমত উল্লাহ ‘অপারেশন অগ্নিপথে’র প্রযোজক নন। তার বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার করছে। শনিবার (১৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করতে যান তিনি। পুলিশ মামলা না নিয়ে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একই অভিযোগে রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে যান শাকিব।

প্রযোজক রহমত উল্লাহ সমঝোতার বৈঠক সম্পর্কে গতকাল বলেন, ‘আইনের আশ্রয় না নিয়ে তিনি (শাকিব) আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন সাবেক স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে। অপু জানালেন, শাকিব মধ্যস্ততা করতে চায়। আমি সরল বিশ্বাসে সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হলাম। গত ১৬ মার্চ গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় সাকিবের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’

এদিকে, এই পুলিশ রিপোর্টের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও শাকিব খানের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।