বান্দরবান : পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে নিখাঁদ সৌন্দর্য

ভ্রমণ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৯:০৩ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার

বান্দরবান : পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে নিখাঁদ সৌন্দর্য

বান্দরবান : পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে নিখাঁদ সৌন্দর্য

প্রাকৃতিক স্বাদ গ্রহণের বাসনা পূরণে বান্দরবান অনন্য। এখানের প্রকৃতির সঠিক রূপ দেখে নিমিষেই ভ্রমণ পিপাসুদের মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বিধাতা নিজ হাতেই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে সবুজ কাঁচ ঘরের ন্যায় তৈরি করেছে বান্দরবানকে।

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বান্দরবান হয়ে উঠেছে এক টুকরো প্রাকৃতিক স্বর্গ। স্বর্গই হবে নাই বা কেন, এখানে নেই পরিবেশ দূর্ষণের মত মারাত্মক মিল-কলকারখানা। বিশুদ্ধ পরিবেশ ও প্রাকৃতির প্রকৃত রূপ, প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর পর্যটন স্পটগুলো, বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চলে ঘেরা পাহাড়ের গা ঘেঁষে, মাথা চিড়ে উচুঁ-নিঁচু, ঢালু দিয়ে বয়ে যাওয়া মাইলের পর মাইল সড়কগুলো এবং ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা, শতবর্ষীয় কৃষ্টি-কালচারগুলো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য যেন অন্যরকম এক বাড়তি পাওয়া। 

পার্বত্য জেলা বান্দরবান এখন ;;সম্প্রীতির বান্দরবান; নামেও সারাদেশে পরিচিত। এসব গোত্র-গোষ্ঠী মানুষের আন্তরিকতা আচার-আচরণ বান্দরবানের প্রতি সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলেন। ভ্রমণপিপাসুদের জন্যে বান্দরবানের কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো- নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিকলেক, ন্যাচারাল পার্ক, বৌদ্ধ জাদি (স্বর্ণে রং মোড়ানো মন্দির), সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ,দেবতাখুম, শৈল প্রপাত ঝর্ণা, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, রুমার প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট জলাশয় বগালেক, প্রাকৃতিক জলপ্রপাত (রিজুক ঝর্ণা), দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, রাইক্ষ্যং পুকুর, থানছির তিন্দু বড় পাথর, রেমাক্রী ঝর্ণা,  নাফাকূম, বড় মদক এবং লামার মিরিঞ্জা, নাইক্ষ্যংছড়ির উপবন পর্যটন স্পট। 

নীলাচল

বান্দরবান পৌর শহরের একটি টাওয়ার নীলাচল। এখানে দাঁড়ালে পৌর শহরটি যে কারোই এক নিমিশেষে নজরে আসে। চারিদিকে সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছোট পৌর শহরটি এক নজর দেখতে পর্যটকরা প্রতিদিন সকাল বিকাল ভীড় জমায় নীলাচল পাহাড়ের চূঁড়ায়। শহরটিকে এখান থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন পাহাড়ের গর্ভের আশ্রয় নেয়া এক অন্যরকম নগরী।

পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাঁচের টাওয়ার, দৃষ্টি নন্দন সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। রাত্রিযাপনের জন্য তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় কয়েকটি কটেজ। নীলচল থেকে দেখা যায় প্রাকৃতির অপূর্ব দৃশ্য। বিকেলে সূর্যাস্তের দৃশ্য। এসব কারণে স্পটটি স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

নীলাচল পর্যটন স্পটটি অবস্থান পৌর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দু’হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। মাহিন্দ্র গাড়ি ৪’শ টাকা, বেবি টেক্সী, সিএনজি ৩’শ টাকায় ভাড়ায় এবং পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স

বান্দরবানে প্রবেশের প্রধান সড়কে এবং বান্দরবান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন স্পটের অবস্থান। অনেক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি নাম মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। এখানে বিশাল লেকের উপর আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। এছাড়া চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি ক্যাবল কার, ট্যুরিস্ট ট্রেইন, শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্পীড বোটে ভ্রমণের সুবিধা এবং রাত্রিযাপনের জন্য রেষ্টহাউজ। পর্যটকদের সুবিধার্থে মেঘলা পর্যটন স্পটে নীচে নামতে রাস্তার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সিড়িঁও।

প্রান্তিক লেক

বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের হলুদিয়ার থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে কদুখোলা এলাকাস্থ প্রান্তিক লেক অবস্থিত। ছোট-বড় সবুজের মাঝখানে বিশাল লেকটির নাম প্রান্তিক লেক। প্রায় আড়াই একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। অপূর্ব সুন্দর লেকের চারপাশ নানা প্রজাতির গাছ-গাছালিতে ভরপুর। নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য রয়েছে কয়েটি গোলঘর ও গোল টাওয়ার।  

ন্যাচারাল পার্ক

প্রকৃতিকে চিনতে আসুন ন্যাচারাল পার্কে। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান হচ্ছে হলুদিয়া ন্যাচারাল পার্ক। শহর থেকে ১০কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের প্রবেশ মুখে হলুদিয়া এলাকায় এই পার্ক অবস্থিত। প্রায় ৫০একর জায়গার উপর বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে ন্যাচারাল পার্ক। এখানে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। পার্কে অবাধে বিচরণ করে হরিণ, বানর, খরগোশসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। রয়েছে ফলজ-বনজ, বিভিন্ন প্রজাতী ও নানা ঔষধী গাছ-পালা। ন্যাচারাল পার্কে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা ক্ষুদ্রায়াতনে চা বাগান পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুনে। 

বৌদ্ধ ধাতু জাদি (স্বর্ণে রং মোড়ানো মন্দির)

প্রায় ষোলশ’ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপত্যের অপূর্ব নির্দেশণ বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ মন্দির। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে এটি তীর্থ স্থান হলেও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। বৌদ্ধ ধাতু জাদিটি স্বর্ণে রং মোড়ানো হওয়ায় এটিকে স্থানীয়রা স্বর্ণ জাদি বলে থাকে। জেলা শহরের মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে বুদ্ধ ধাতু জাদি। এর নির্মাণশৈলী, কারুকার্য, স্বর্ণ রং খচিত অবকাঠামো যে কারোই মন কাড়ে। 

সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ

বান্দরবান শহরের পাশ ঘেঁষে পাহাড়ী বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর দু’কূলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপরূপ। নদীটি বান্দরবান জেলা শহরকে মুড়িয়ে দিয়ে বয়ে যাওয়াতে যে কোন পাহাড়ের চূঁড়া থেকে শহরটি গোল আকৃতির মতই দেখা যায়। উত্তর পাশের পাহাড়গুলো চূঁড়া থেকে মনে সাঙ্গু নদীর বুকে ছোট্ট একটি দীপ গড়ে উঠেছে। নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত বোটে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার মজাই আলাদা। নদীপথে ভ্রমণ করলে নদীর তীরে পাহাড়ীদের বিশেষ কায়দায় তৈরি টংঘরগুলো স্বচোক্ষে দেখা যায়। সেই সঙ্গে উঁচু পাহাড়ের কূল ঘেষে বয়ে চলা সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হওয়ায় মত।

দেবতাখুম

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২০কিলোমিটার দুরে রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্ছপতলী হয়ে পাহাড়ি নদী পথে ১ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে শীলবাঁন্ধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। দেবতাখুমে যাওয়ার রাস্তার কাজ বর্তমানে চলমান,হয়তো আগামী মৌসমে রাস্তার কাজ শেষ হলে শীলবান্ধা পাড়া পর্যন্ত পায়ে হাঁটা থেকে মুক্তি পাবে। দেবতাখুমের গভীরতা কোনো কোনো জায়গায় ১০ থেকে ২০ ফিট আবার কোনো কোনো জায়গায় ৩০ থেকেে ৪০ফিট। এটি বান্দরবানের খুব জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান, যা ভেলাখুম থেকেও অনেক বেশি বড়। মাত্র দেড় দুই হাজার টাকার মধ্যেই দিনে দিনে ঘুরে আসা যায় দেবতাখুম থেকে।

দেবতাখুম যেমন সুন্দর তেমন ভয়ংকরও বটে,শুস্ক মৌসমে খুমের পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে খুমের পানি অনেক বেড়ে যায়, তখন সেখানে যাওয়া খুবই কষ্টকর। পিচ্ছিল পাথুরে রাস্তায় পা ফসকে পড়ে গেলে বড় ধরণের বিপদের ঝুঁকিও রয়েছে। বাঁশের ভেলা ছাড়া দেবতাকুুমে যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নাই, ভেলা নিয়ে যতোই সামনে যাবেন জায়গাটা ততোই সরু হবে। সাধারণত জুন থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত দেবতাখুমে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।