আসুন, বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াই

ইসলাম ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ২২ জুন ২০২২ বুধবার

সংগৃহীত

সংগৃহীত

বৃষ্টি মহান আল্লাহর রহমত। কখনো কখনো এই বৃষ্টির মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন। টানা বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। ঘরহারা ভিটেহারারা আশ্রয় নেয় কোনো উঁচু স্থানে।

আবার কাউকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সাগর-নদীতে উঠে আসা রাক্ষুসে জোয়ার। মানুষের মাঝে বিরাজ করে আতঙ্ক। ক্ষুধা ও ধনসম্পদ হারানোর গ্লানি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। (হে রাসুল!) আপনি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ প্রদান করুন। ’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানি। জেলার পর জেলা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা।

 

এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছেন। যারা বন্যায় আক্রান্ত তাদের পরীক্ষা করছেন ক্ষুধা, ভয়, সম্পদহানির মাধ্যমে; আর আমাদের পরীক্ষা করছেন বন্যাকবলিতদের বিপদে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা দিয়ে। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)

 

মহান আল্লাহ সমগ্র মুমিন জাতিকে এক দেহের মতো বানিয়েছেন। ফলে দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে গোটা দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো, যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা। (মুসলিম,    হাদিস : ৬৪৮০)

 

তাই আমরা আমাদের বন্যাকবলিত ভাই-বোনদের বিপদের মধ্যে রেখে স্বস্তিতে থাকতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তারা যেন পরিবার নিয়ে পর্দা রক্ষা করে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এখনই তো সময় আখিরাতের জন্য বিনিয়োগ করার। মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে তার জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা তিনি বহুগুণ ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু আগে (পরকালের জন্য) পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উত্কৃষ্টতর ও মহোত্তমরূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৫)

 

আসুন, আমরা প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়াই। জাতিকে এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা করতে নিজেদের গুনাহের জন্য বেশি বেশি তাওবা করি।