জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইফতারে প্রাণের ছোঁয়া

ফিচার ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:৪৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২২ শুক্রবার

সংগৃহীত

সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পড়ন্ত বিকেল। মধ্যাহ্নের লাল সূর্য উপাচার্য ভবনের পেছনে দূর আকাশে মুখ লুকাতে ব্যস্ত। সারাদিনের তাপদাহের অবসানে তখন গোধূলি আসবে। দিনের ব্যস্ততাকে ছুটিতে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বসে আছে তরুণদের কয়েকটি দল।

কেউ বসার জায়গা পরিষ্কার করছে। কেউ আবার পত্রিকা বিছিয়ে খাবার প্রস্তুত করছে। কাজের পাশাপাশি খোশগল্পেও জমে উঠেছে ‘প্রাণের আড্ডা’। অনেকে আবার আহ্বান করছে প্রিয় বন্ধুদের। ছোলা, মুড়ি, আনারস, খেজুর, বেগুনি , জিলাপি কত কী! কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসে হরেক রকম খাবার আর মেলবন্ধনের অমোঘ বাসনা নিয়ে এ ইফতার আয়োজন।

শুধু শহীদ মিনারই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর, কাঁঠাল তলা, রফিক ভবন কিংবা বিজ্ঞান অনুষদ, সবখানে একই মহাযজ্ঞ। করোনার তাণ্ডবে স্থবিরতা থেকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর এ বছর রমজানের এই দলগত ইফতার পেয়েছে আলাদা উপলক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত জানালেন তার অনুভূতি, ‘পরিবারের বাইরে এখানেও একটি পরিবার হয়েছে। প্রতিদিন সবাই মিলে ইফতার করছি। আলাদা একটি ভালো লাগা কাজ করে।’

সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে দ্রুতপায়ে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করছিলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল আশকারী। ক্লান্তি উপেক্ষা করে একগাল হেসে বললেন, ‘চকবাজার থেকে ইফতার নিয়ে এলাম। ওখানকার ইফতার নামকরা। আজ খেয়েই দেখি।’

শুধু বর্তমানই নয়, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতেও মুখরিত থাকে ক্যাম্পাসের পবিত্র রমজানের সন্ধ্যাগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের চারতলায় নিজেদের জন্য খাবার প্রস্তুত করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন, নিলয় চৌধুরী ও আশফাক আরিফ। বেশ উৎসাহ নিয়েই বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোকে প্রচণ্ড মনে পড়ছিল। তাই তিন বন্ধু মিলে চলে এলাম।’

অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেও ক্যাম্পাসের ইফতার হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উপমা। শহীদ মিনারে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ ভক্ত। ছুরি দিয়ে গাঁজর কাটার ফাঁকেই বললেন, ‘তাদের সাথে মিলেমিশে ইফতার করছি। ছোলা-মুড়ি খেতে আমার বেশ ভালো লাগে। সবাই মিলে একসাথে ভালো সময় কাটে।’

এ ছাড়াও অবকাশ ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ইফতারের আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুরান ঢাকার এ বিদ্যাপিঠে পড়ার জন্য আসেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বুকে সবার পদচারণায় মুখরিত সন্ধ্যা শুধু ভ্রাতৃত্ববোধই নয়, সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের সুতিকাগার।