সেন্টিনেলঃ রহস্যঘেরা নিষিদ্ধ দ্বীপ

ফিচার ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আন্দামান-নিকোবরের অধীন একটি দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেল। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। কিন্তু তাও এই দ্বীপে আধুনিক সমাজের লেশমাত্র পৌঁছতে পারেনি। এই দ্বীপে প্রবেশের অনুমতিও নেই কারো। কেন জানেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেন্টিনেল দ্বীপে থাকে সম্ভবত বিশ্বের শেষ উপজাতি যাদের উপরে এতটুকু ছাপ ফেলতে পারেনি আধুনিক সমাজ। সেন্টিনেল উপজাতিদের জীবনযাত্রা ঠিক কী রকম তা কারো জানা নেই। খুব কমই জানা গিয়েছে তাদের সম্পর্কে। কারণ তারা নিজেদের রাজ্যে বাইরের জগতের নাক গলানো একেবারেই সহ্য করেন না।

নৌকা বা হেলিকপ্টার থেকে বছরের পর বছর নজর রেখে তাদের সম্পর্কে খুব সামান্য ধারণা করতে পেরেছেন নৃতত্ত্ববিদরা। জানা যায়, সর্বাধিক ৪০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন এখানে। তারা আগুনের ব্যবহারও জানেন না। শেখেননি চাষাবাদও। ৬০ হাজার বছর ধরে তারা এখানেই রয়েছেন।

আধুনিক সমাজের সঙ্গে এদের যোগ স্থাপনের চেষ্টা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। তার আভাস পাওয়া যায়, মার্কোপোলোর একটি লেখায় এই দ্বীপের উল্লেখ থেকে। যদিও আদৌ তিনি ওই দ্বীপে নেমেছিলেন কি না তা নিয়ে ধন্দ আছে ইতিহাসবিদদের।

১৮৮০ সালে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এমভি পোর্টম্যানের নেতৃত্বে একটি দল ওই দ্বীপে যান। কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনের বদলে তারা উপজাতিদের এক প্রৌঢ় দম্পতি এবং চার শিশুকে তুলে নিয়ে আসেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাদের মেলবন্ধন।

কিন্তু আধুনিক সমাজে মানাতে না পেরে রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যান তারা। এই ঘটনার পর আধুনিক সমাজের প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেন্টিনেলরা।

১৯৬৭ সালে থেকে ভারত সরকার যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে। ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ ত্রিলোকনাথ পণ্ডিতই প্রথম যিনি ১৯৯১ সালের ৪ জানুয়ারি আন্দামান-নিকোবরের এই দ্বীপে গিয়ে সেন্টিনেলদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন।

কিন্তু সেই চেষ্টা সার্বিকভাবে সফল হয়নি বলা যায়। কারণ এই চেষ্টার পরও ওই উপজাতিরা আধুনিক মানুষকে তাদের রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেননি। বারবারই তাদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে আধুনিক মানুষকে। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।

২০০৪ সালে সুনামির পর হেলিকপ্টারে উত্তর সেন্টিনেল আইল্যান্ডে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিল ভারত সরকার। তখনও ত্রাণ নেওয়ার বদলে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ চালান তারা। অবশেষে তাদের বিরক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। ওই দ্বীপ এবং তার চারপাশে তিন নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সীমানা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।